Advertisement
Advertisement
কাটমানি

বাড়ি তৈরির জন্য দেড় লক্ষ টাকা কাটমানি! বৃদ্ধের মৃত্যুতে কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে অভিযোগ

টাকা চাইতে গেলে ঝাড়খণ্ডে চলে যাওয়ার হুমকি দেওয়া হয়।

Elderly man dies of cut money woes at Burdwan, TMC councilor blamed
Published by: Subhamay Mandal
  • Posted:July 4, 2019 12:34 pm
  • Updated:July 4, 2019 12:34 pm  

সৌরভ মাজি, বর্ধমান: বাড়ি তৈরির নকশা অনুমোদন করিয়ে দিতে লক্ষাধিক টাকা নিয়েছিলেন তৎকালীন কাউন্সিলর। প্রভিডেন্ট ফান্ডের জমানো টাকা তুলে দিয়েছিলেন তাঁর হাতে। বাড়ি তৈরির নকশার অনুমোদন মেলেনি। আবার বাড়ি তৈরি করতে গেলে দলীয় কার্যালয়ে ডেকে নানাভাবে হুমকি, মানসিক অত্যাচার করা হয়েছে অবসরপ্রাপ্ত ওই রেলকর্মীর উপর। এমনকী বাংলা ছেড়ে ঝাড়খণ্ডে চলে যাওয়ার হুমকি দেন তৃণমূলের ওই প্রাক্তন কাউন্সিলর। মানসিক চাপ সহ্য করতে না পেরেই মারা গিয়েছেন বর্ধমান শহরের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ঘোষপাড়ার বাসিন্দা কিশোর পাসোয়ান (৬৫) নামে ওই বৃদ্ধ। বুধবার বর্ধমান থানায় মৃতের পরিবারের তরফে ওই ওয়ার্ডের প্রাক্তন কাউন্সিলর সৈয়দ মহম্মদ সেলিমের বিরুদ্ধে এমনই অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।

ডিএসপি (সদর)-এর তদারকিতে ঘটনার তদন্তও শুরু করেছে জেলা পুলিশ। যদিও প্রাক্তন কাউন্সিলর সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁর দাবি, মিথ্যা অভিযোগ করা হয়েছে। এই প্রথম নয়, এর আগেও কাটমানি ও তোলাবাজির বিভিন্ন অভিযোগ উঠেছে এই তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে। এমনকী পিটিয়ে মারার অভিযোগও রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। সেই মামলায় কয়েকদিন আগেই আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন নিয়েছেন সৈয়দ মহম্মদ সেলিম। কিশোর পাসোয়ানের পরিবারের অভিযোগের সঠিক তদন্ত করে প্রাক্তন কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে কড়া শাস্তির ব্যবস্থা করার দাবিতে এদিন বিজেপির তরফে বর্ধমান থানায় বিক্ষোভও দেখানো হয়।

Advertisement

কিশোরবাবুর স্ত্রী পুতুলদেবী জানান, তাঁর স্বামী বর্ধমানে কর্মরত ছিলেন। সেই সূত্রে ওই ওয়ার্ডের বিভিন্ন জায়গায় ভাড়া থাকেন। তাঁদের আদি বাড়ি ঝাড়খণ্ডে। বছর দেড়েক আগে তাঁর স্বামী লোকো এলাকায় দুই কাঠার মত জায়গা কেনেন। পুতুলদেবী পুলিশে অভিযোগে লিখেছেন, জায়গা কেনার পরেই তৎকালীন কাউন্সিলর তাঁর স্বামীকে খালাসিপাড়ায় তৃণমূল পার্টি অফিসে ডেকে পাঠায়। বাড়ির প্ল্যান তৈরি ও তার অনুমোদনের জন্য তাঁর স্বামীর কাছে দফায় দফায় মোট ১ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা নেন। পুতুলদেবী বলেন, “টাকা নেওয়ার কিছুদিন পরে কাউন্সিলর আমাদের বলেন প্ল্যান অনুমোদন হয়ে গিয়েছে বাড়ি তৈরি করতে পারেন। কিন্তু বাড়ি তৈরি করতে গেলে ফের আমাদের ডেকে পাঠায়। বলে প্ল্যান হয়নি বাড়ি করছেন কেন। নকশা অনুমোদন করিয়ে এনে বাড়ি করবেন।” কাজ বন্ধ করে দেন কাউন্সিলর। পরে আবার তাঁদের ডেকে টাকার দাবি করা হয়। বলা হয়, বাড়ি করতে গেলে আরও টাকা দিতে হবে। দেড় বছরেও বাড়ির নকশা অনুমোদন করিয়ে না দেওয়ায় গত সোমবার তাঁর স্বামী খালাসিপাড়ায় প্রাক্তন কাউন্সিলরের পার্টি অফিসে যান টাকা ফেরত চাইতে। পুতুলদেবীর অভিযোগ, সেখানে তাঁর স্বামীকে চূড়ান্ত অপমান করা হয়। টাকা ফেরত দেওয়া দূরের কথা, তাঁদের বাংলা ছেড়ে ঝাড়খণ্ডে চলে যাওয়ার নিদান দেন প্রাক্তন কাউন্সিলর। কিশোরবাবু মানসিকভাবে খুবই ভেঙে পড়েন। অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়েন।

কিশোরবাবুর ছেলে শ্যাম পাসোয়ান। তিনি ঝাড়খণ্ড সরকারের অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার পদে কর্মরত। তিনি জানান, বাবাকে ওইভাবে টাকা দিতে তাঁরা নিষেধ করেছিলেন। বাবা সরল বিশ্বাসে টাকা দিয়েছিল। কিন্তু এইভাবে ঠকতে হবে বাবা বুঝতে পারেননি। প্রভিডেন্ট ফান্ডের এতগুলো টাকা এইভাবে চলে যাওয়ায় খুবই কষ্টে ছিলেন। আবার বাড়ির তৈরির নকশার অনুমোদন না মেলাতেও মানসিকভাবে আঘাত পেয়েছিলেন। তার উপর গত সোমবার যেবাবে বাবাকে হুমকি দেওয়া হয়েছিল তার জেরেই তাঁর বাবার মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করেছেন শ্যামবাবু। বিজেপির বর্ধমানের সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সন্দীপ নন্দী জানান, ওই প্রাক্তন কাউন্সিলররে কুকীর্তির কথা শহরের সকলেই জানেন। পুলিশের উচিত বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা। জেলা তৃণমূল সভাপতি স্বপন দেবনাথ জানিয়েছেন, যে কোনও মৃত্যুই দুঃখজনক। পুলিশ তদন্ত করে দেখুক। তবে তৃণমূলের দাবি, এই ধরনের অভিযোগের কোনও সারবত্তা থাকে না।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement