সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: স্ত্রী বিড়ি বাঁধেন। স্বামী অসুস্থ হয়ে পড়ার পর থেকে তাঁর কাঁধেই সংসারের ভার। ঘরে ৬টি মানুষের পেট। নুন আনতে পান্তা ফুরনো সংসারে খাবার জোগানোই দায়। তার উপর আবার স্বামী আক্রান্ত ক্যানসারে। তাঁর চিকিৎসা অভাবের সংসারে যেন বিলাসিতা। তাই তো অর্থাভাবে চিকিৎসা আর হয়নি। এই পরিস্থিতিতে বাঁচার ইচ্ছাও হারিয়ে ফেলেছেন মুর্শিদাবাদের (Murshidabad) বেলডাঙার বাসিন্দা ইয়াসিন শেখ। রাষ্ট্রপতির কাছে স্বেচ্ছামৃত্যুর আবেদন জানিয়েছেন তিনি।
বেশ কয়েক বছর আগেই শরীর জানান দিয়েছিল অসুস্থতার কথা। তারপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করান। জানতে পারেন শরীরে বাসা বেঁধেছে কর্কট (Cancer) রোগ। গরিবের সংসারে সেই শুরু কর্কটের বিরুদ্ধে লড়াই। প্রথমে বহরমপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা করান ইয়াসিন শেখ। তবে অবস্থা বিশেষ ভাল ছিল না তাঁর। তাই কলকাতার এনআরএস হাসপাতালে স্থানান্তকরণের পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। গ্রাম থেকে শহরে এসে বেশ কয়েকবার চিকিৎসা করান। কিন্তু লাভ হয়নি। এ অসুখ যে দু’দিনে সেরে যাওয়ার নয়। তাই ধৈর্য ধরার দরকার ছিল। প্রয়োজন ছিল আরও অর্থের। বছর পঁয়ষট্টির ইয়াসিন হয় তো ধৈর্য ধরতে পারতেন। কিন্তু টাকা? স্ত্রী, ছোট ছোট সন্তানে ভরা ইয়াসিনের সংসারে যে এমনিই নুন আনতে পান্তা ফুরোয়। কীভাবে চিকিৎসার খরচ চালাবেন তিনি? তাই আর চিকিৎসা চালিয়ে যেতে পারেননি।
কর্কট রোগের থাবা ক্রমশই চওড়া হচ্ছে। তাই তো শরীরে ক্ষমতা ধীরে ধীরে কমছে। এখন আর কিছুই ভাল লাগে না তাঁর। হাঁটাচলা করার মতো ক্ষমতাও যেন হারিয়ে গিয়েছে। ছোট্ট ঘরে বিছানার এক কোণকেই পৃথিবী বানিয়েছেন তিনি। সেখানে সারাদিনের অধিকাংশ সময় কেটে যায় তাঁর। স্ত্রীর বিড়ি বাঁধার টাকায় কোনওদিন খেয়ে আবার কোনওদিন না খেয়ে কোনওক্রমে দিনপাত করেন তিনি।
কঠিন পরিস্থিতি যেন পৃথিবীর সব রং, রূপ, গন্ধ কেড়ে নিয়েছে ইয়াসিনের। বাঁচার ইচ্ছাও চলে গিয়েছে তাঁর। তাই জীবন শেষ করে দেওয়ার ভাবনা প্রতি মুহূর্তে উঁকি দেয় মনের কোণে। এই পরিস্থিতিতে সরকারি সাহায্যের আশায় ইয়াসিনের পরিজনেরা। তবে এ জীবন আর রাখতে চান না ইয়াসিন। তাই তো স্বেচ্ছামৃত্যুর আবেদন জানিয়ে রাষ্ট্রপতির দপ্তরে চিঠি পাঠিয়েছেন ক্যানসার আক্রান্ত বৃদ্ধ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.