সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, দুর্গাপুর: করোনা আতঙ্কে থমকে গেল কয়লাখনির নয়া প্রযুক্তি বিন্যাস প্রকল্প। দেড়শো কোটির এই প্রকল্প থমকে যাওয়ায় মার খাচ্ছে উৎপাদন। ফলে কয়েক কোটি টাকা ক্ষতির মুখে ইস্টার্ন কোলফিল্ড লিমিটেড (ইসিএল)। পাণ্ডবেশ্বর এলাকার খোট্টাডিহি কোলিয়ারিতে কর্মীবিহীন স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র মারফত কয়লা উত্তোলনের ‘কন্টিনিউয়াস মাইনার্স’ প্রযুক্তি চালু করার পরিকল্পনা গ্রহণ করে ইসিএল। সেই প্রযুক্তির যন্ত্র আমদানি এবং সেটি সফলভাবে খনিতে চালু করার জন্য চিনের একটি সংস্থার সঙ্গে ইসিএলের চুক্তিও হয়। সেই চুক্তি অনুযায়ী প্রথম পর্বে কিছু যন্ত্রাংশ এসে পৌঁছলেও দ্বিতীয় পর্বের যন্ত্রাংশ আমদানি থমকে গিয়েছে। জানুয়ারি মাসে আসার কথা থাকলেও করোনা-আতঙ্কের জেরে সেই যন্ত্রাংশ ফেব্রুয়ারির শেষের আগে এসে পৌঁছনোর সম্ভাবনা ক্ষীণ। শুধু তাই নয়, দক্ষ যে সব চিনা বিশেষজ্ঞ ও কর্মীদের ওই প্রযুক্তি খোট্টাডিহিতে হাতেকলমে চালু করে দিয়ে যাওয়ার কথা, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণজনিত বিধিনিষেধে তাঁদের আসাও আপাতত অনিশ্চিত। কাজেই গোটা প্রকল্পের রূপায়নই আপাতত প্রশ্নের মুখে এসে দাঁড়িয়েছে।
এর আগে ঝাঁঝরা কোলিয়ারিতে এই ‘কন্টিনিউয়াস মাইনার্স’ প্রযুক্তি চালুর সুবাদে আশাতীত লাভ করেছে ইসিএল। ইসিএল সূত্রে জানা গিয়েছে, এই যন্ত্রের জন্যে চিনের একটি সংস্থার সঙ্গে ইসিএলের চুক্তি হয় ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে। চিন থেকে এই যন্ত্র খোট্টাডিহিতে আনা ও স্থাপন করার জন্যে দেশীয় একটি সংস্থার সঙ্গে চুক্তি করে চিনের ওই সংস্থা। চুক্তি অনুযায়ী দু’টি পর্যায়ে এই প্রকল্পের বাস্তবায়ন হওয়ার কথা। গোটা প্রক্রিয়াটি ২০১৯ সালের আগস্ট মাসের মধ্যে সম্পূর্ণ হওয়ার কথা ছিল। তবে দেশীয় ওই সংস্থাটির অনভিজ্ঞতায় পিছিয়ে যায় যন্ত্র স্থাপনের কাজ। ১২৮ কোটির প্রকল্প ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ১৪০ কোটি টাকারও বেশি। এই প্রকল্প চালু হলে খোট্টাডিহি কোলিয়ারির উৎপাদন এক লাফে ৫০ হাজার টন থেকে বাড়িয়ে ১ লক্ষ ৮০ হাজার টনে পৌঁছনোর লক্ষ্যমাত্রা রাখা হয়েছিল। কিন্তু করোনা ভাইরাসের আতঙ্কে গোটা পরিকল্পনাই আপাতত অনিশ্চয়তার মুখে। গোটা প্রকল্প অন্তত মাসদুয়েক পিছিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর।
ইসিএলের পাণ্ডবেশ্বর এরিয়ার জেনারেল ম্যানেজার সুভাষ মুখোপাধ্যায় জানান, “খোট্টাডিহি কোলিয়ারির আট ও ছয় নম্বর সিম দুটিতে এই প্রযুক্তি বসানোর লক্ষ্য ছিল। করোনা ভাইরাসের দাপটে পিছিয়ে গিয়েছে পরিকল্পনা। যন্ত্রাংশ জাহাজে চাপলেও এখনও এসে তা পৌঁছয়নি। যন্ত্রাংশের সঙ্গে দক্ষ ইঞ্জিনিয়ার ও কর্মীদের আসার কথা থাকলেও তাদের আসাও আপাতত স্থগিত রয়েছে।” তবে ইসিএলের সিএমডির কারিগরি সহায়ক নীলাদ্রি রায় আশাবাদী, “সাময়িক সমস্যা হলেও তা মিটে যাবে। বিরাট কোনও উৎপাদনজনিত সমস্যায় পড়তে হবে না বলেই আশা।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.