Advertisement
Advertisement
Purulia

রাজপ্যালেস রক্ষার্থে বন্দুক-পিস্তল-রাইফেলে ছাড়, ভোটে পুরুলিয়ায় কমিশনের নজিরবিহীন সিদ্ধান্ত

নিয়ম বলছে, ভোট পর্বে লাইসেন্স প্রাপ্ত বন্দুক আছে তা পুলিশের হেফাজতে নিতে হবে।

EC allows to keep rifles to protect palace in Purulia
Published by: Paramita Paul
  • Posted:April 17, 2024 12:07 am
  • Updated:April 17, 2024 1:38 pm  

সুমিত বিশ্বাস ও অমিতলাল সিংদেও: প্রাসাদে ঢোকার পথে দু’দুটো লোহার, কাঠের দরজা। সাড়ে ৬ একর জুড়ে থাকা প্যালেসে অনুমতি ছাড়া প্রবেশ নিষিদ্ধ। সেই কথা লেখাও রয়েছে লোহার দরজায় আটকানো ছোট্ট বোর্ডে। রক্ষী, কর্মচারীর ছড়াছড়ি। প্রায় ২৪ ফুট উঁচু প্রাচীর। তবুও পুরুলিয়ার কাশিপুরের গড়পঞ্চকোট প্যালেস রক্ষার্থে রাজকন্যার পরিবারের ছ’-ছটি বন্দুক, পিস্তল, রাইফেল নির্বাচনের সময়েও নিজেদের হেফাজতে নিল না পুলিশ। অথচ ভোট পর্বে যার ঠিকানা হয় থানার মালখানা!

‘জ্যোতি বিলাসে’ থাকা হীরা, পান্না, রুবি, নীলা পোখরাজ, সোনা। এমনকি লক্ষ-লক্ষ টাকার ফ্রান্সের আসবাবপত্র। লন্ডনের লকার, বার্মিংহামের ঝাড়বাতি, জার্মানির পিয়ানো। সেই সঙ্গে নিষিদ্ধ হওয়ার পূর্বে রাজ পরিবারের শিকার করা রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার, লেপার্ড, এমনকী হাতির পা। এছাড়া আরও কত কী! প্রায় কোটি-কোটি টাকার বহু মূল্যবান প্রাচীন সম্পদ। যার সুরক্ষায় আমেরিকা, ইংল্যান্ড, জার্মান কোম্পানির তিন তিনটে দো-নালা বন্দুক, দুটো পিস্তল এবং একটি রাইফেলে বিশেষ ছাড় দিল নির্বাচন কমিশন।

Advertisement

[আরও পড়ুন: মমতার উত্তরসূরি কি অভিষেক? মুখ খুললেন তৃণমূল সুপ্রিমো]

অথচ নির্বাচনী বিধিতেই রয়েছে, ভোট ঘোষণার পরেই যেখানে যা লাইসেন্স প্রাপ্ত বন্দুক আছে তা পুলিশের হেফাজতে নিতে হবে। রাখতে হবে থানার মালখানায়। এক্ষেত্রে পঞ্চকোট রাজ পরিবারের রাজকন্যার আবেদনে সাড়া দিয়ে কমিশন ওই আগ্নেয়াস্ত্র নেওয়া থেকে অব্যাহতি দেয়। একসঙ্গে এক পরিবারের ছ’-ছটি আগ্নেয়াস্ত্রকে নির্বাচনী বিধির বাইরে রেখে হেফাজতে না নেওয়া কার্যত নজিরবিহীন। পুরুলিয়ার জেলাশাসক রজত নন্দা বলেন, “আবেদনের ভিত্তিতে স্ক্রিনিং কমিটি তথ্য যাচাই করে। তার ভিত্তিতেই জেলাশাসক, পুলিশ সুপার খতিয়ে দেখে ওই বন্দুক- পিস্তল-রাইফেল হেফাজতে নেওয়া থেকে ছাড় দেওয়া হয়।”

পুরুলিয়া জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই গড় পঞ্চকোট প্যালেসে থাকা রাজকন্যা তথা রাজা শঙ্করী সিং দেও-র কন্যা মহেশ্বরী দেবীর .১২ বোরের দো-নলা বন্দুক, .২৫-র পিস্তল আছে। তাঁর বড় ছেলে অনশূল রাজাওয়াতের রয়েছে ডবল ব্যারেল গান, .২২ বোরের রাইফেল। তাঁর স্ত্রী বীরাঙ্গানি রাজাওয়াতের একটি দো-নলা বন্দুক ও ৩০০ বোরের পিস্তল। এই পিস্তল দিয়ে হাতি পর্যন্ত মারা যায়! আর এগুলোকেই ছাড় দিয়েছে কমিশন। দো-নলা বন্দুকগুলি আমেরিকার ভেসলে রিচার্ডস, ইংল্যান্ডের জেফারিস ও ওয়েবলি স্কট কোম্পানির। .২৫ পিস্তলটি ইংল্যান্ডের ন্যাশনাল ড্রিম ব্রয়িং-র। এছাড়া আরেকটি পিস্তল যা জার্মানের ফেব্রিক মাউজারের। এছাড়া .২২ বোরের যে রাইফেল রয়েছে তা ইংল্যান্ডের ব্রুনো কোম্পানির। অতীতে এই প্যালেসে অসংখ্য বন্দুক ছিল। কিন্তু বিধির গেরোয় তা ঠেকেছে এই ছটিতে।

[আরও পড়ুন: গোয়া নির্বাচনে ছিলেন আপের আর্থিক দায়িত্বে, লোকসভা ভোটের আগে ইডির হাতে গ্রেপ্তার সেই চনপ্রীত]

এই প্রাসাদেই রয়েছে লন্ডনের বিশেষ লকার। যা সব সময় থাকে তালা বন্দি। যেখানে থাকে বহু নথিপত্র সহ আরও প্রাচীন সামগ্রী। রয়েছে ১৮৭২ সালে আনা বার্মিংহামের ঝাড়বাতি। আছে জার্মানির পিয়ানো। চোখ জুড়িয়ে যাওয়া ফ্রান্সের আসবাবপত্র। আছে ৫০টা তরবারি। লন্ডনের বিলিয়ার্ডস। প্রাসাদের মেঝেও ইটালিয়ান মার্বেলের। বেলজিয়ামের পেইন্টিং করা কাঁচ, সেই সঙ্গে চোখ টানে নানান পাথরের মূর্তি। রয়েছে বিদেশি কোম্পানির গ্র্যান্ড ফাদার ক্লক। এছাড়া শিকার করা বন্যপ্রাণ। যাদের শরীরের নাড়ি-ভুঁড়ি বের করে খড় ভরে যে স্টাফড বা ট্যাক্সিডার্মি রাখা আছে তা নজরকাড়া। ৬ টা রয়েল বেঙ্গল টাইগার, একটি লেপার্ড, তিনটে হাতির পা, পাঁচটা বাইসনের মুখ, চারটে ১২ সিঙ্গা, সেই সঙ্গে একটি হরিণ। প্যালেসে থাকা ৭৭ বছরের রাজকন্যা মহেশ্বরী দেবী বলেন, “এই গড় পঞ্চকোট প্যালেসের সম্পদ রক্ষার্থে আমাদের যে বন্দুক, পিস্তল, রাইফেল রয়েছে। তা যাতে নির্বাচনের সময়েও পুলিশ হেফাজতে না নিতে পারে সেজন্য আমরা প্রশাসনের কাছে আবেদন করেছিলাম। ওই আবেদনের ভিত্তিতে কমিশন ছাড় দিয়েছে। আমরা খুশি।”

১৮৩২ সালে পঞ্চকোট রাজ পরিবারের রাজধানী কাশিপুরে স্থানান্তরিত হয়। এখন সেই রাজা, রাজতন্ত্র না থাকলেও এই এস্টেট ২ হাজার ৭৭৯ বর্গমাইল বিস্তৃত। যার মধ্যে রয়েছে সাবেক মানভূম, রাঁচি, বাঁকুড়া, কলকাতা, ওড়িশা এবং বেনারসে মূল্যবান খনি সহ বিস্তৃত সম্পত্তি। এই গড় পঞ্চকোট প্যালেস তৈরি করেছিলেন এই রাজ পরিবারের ৬৭তম রাজা মহারাজা জ্যোতিপ্রসাদ সিং দেও বাহাদুর। তাই ‘জ্যোতি প্যালেস’ নামেও এই রাজপ্রাসাদ পরিচিত। তাঁর ১২ বছরের শাসনকালে ৩০ লক্ষ টাকা খরচ করে চিন থেকে রাজমিস্ত্রি এনে ১২ বছর ধরে এই রাজপ্রাসাদ তৈরি হয়। ১৩২৩ বঙ্গাব্দ ১৯১৬ সালে এই প্রাসাদ নির্মাণ হয়। আজ এই প্রাসাদ ১০৭ বছরে পা দিয়েছে। সেই রাজপ্রাসাদ রক্ষার্থেই কমিশনের এমন পদক্ষেপ।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement