ধীমান রায়, কাটোয়া: কালীপ্রতিমা বিসর্জন হয়ে গিয়েছে বুধবারই। পুজোর পর্বও শেষ। কিন্তু বৃহস্পতিবার থেকেই ফের পালটে গেল গ্রামের আবহাওয়া। তার জেরে ফের অকাল কালীপুজো হল গ্রামে! শুনতে অবাক লাগলেও এটাই সত্যি।
ঘটনাটা তবে খুলে বলি। গ্রামের কালীতলায় গত তিনদিন ধরে ‘ভর’ হয় এক গৃহবধূর। তাঁর দাবি, দেবীর পুজোয় অনাচার হয়েছে। সেজন্য ফের পুজো করতে হবে। ফলে বাধ্য হয়েই গ্রামবাসীরা রবিবার ফের পুজো দিলেন কালীতলায়। ঘটনাস্থল পূর্ব বর্ধমান জেলার ভাতার থানার কর্জনা গ্রাম। তবে এই ‘ভর’ হওয়ার বিষয়টিকে কুসংস্কার বলেই মনে করছে গ্রামবাসীদের একাংশ। যদিও দেখা যায় পুজো শেষে স্বাভাবিকভাবেই বাড়িতে ফিরে গিয়েছেন ওই মহিলা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ভাতারের কর্জনা গ্রামের ইয়ং স্টার ক্লাব প্রতিবছর কালী পূজোর আয়োজন করে গ্রামে। এবছর ছিল দশম বর্ষ। তবে স্থায়ী মন্দির নেই। খোলা জায়গায় একটি চাতালে মহিষমর্দিনী পুজো হয়। সেখানেই কালীপুজোর আয়োজন করা হয়। ক্লাব সূত্রে জানা যায়, গত বুধবার কালীপ্রতিমা বিসর্জন হয়ে গিয়েছিল। তারপরের দিন ঘটনার সূত্রপাত। কর্জনা গ্রামের বাসিন্দা বছর পয়তাল্লিশের এক গৃহবধূ চম্পা মাঝির আচরণ হঠাৎই পালটে যায়। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, যে পুকুরে কালীপ্রতিমা বিসর্জন হয়েছিল, বৃহস্পতিবার সেই পুকুরে বারবার ডুব দিয়ে আসেন চম্পাদেবী। তারপর কালীতলায় এসে তিনি বারবার বলতে থাকেন মায়ের পুজোয় অপরাধ হয়েছে। তাতে গ্রামের অকল্যাণ হবে। সেই সঙ্গে নানা ভবিষ্যদ্বাণীও করতে থাকেন ওই বধূ। এমন কাণ্ডে ভিড় জমাতে শুরু করেন গ্রামের লোকজন। অনেকের বিশ্বাস, চম্পাদেবীর উপর কালী ভর করেছেন।
এদিন রবিবার দেখা যায়, চম্পাদেবীর নির্দেশ মতো ফের কালীপুজোর আয়োজন করা হয়েছে একই জায়গায়। সকাল থেকেই পুজো দিতে গ্রামবাসীদের ভিড়। বিকেল পর্যন্ত চলে পুজোপাঠ। পাশাপাশি চম্পাদেবী নির্দেশ দেন, দেবীর মন্দির তৈরি করতে হবে। ক্লাবের পক্ষ থেকে তাঁকে আশ্বাস দেওয়া হয় সামনের বছরের মধ্যেই মন্দির নির্মাণ করা হবে। তবে পুজো শেষে স্বাভাবিকভাবেই বাড়ি ফিরে যান ওই মহিলা। যদিও গ্রামবাসীদের একাংশ এই ভর হওয়ার বিষয়টিকে অন্ধবিশ্বাস বলেই উড়িয়ে দিয়েছেন। গ্রামবাসী দেবাশিস গোস্বামী বলেন, “মহিলার কোনও শারীরিক অসুস্থতার ফলে তিনি এমন আচরণ করছেন। ওঁর চিকিংসার প্রয়োজন।” এটা কুসংস্কার। ভাতারের বিডিও শুভ্র চট্টোপাধ্যায় অবশ্য জানান, বিষয়টি জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখবেন। ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতির পূর্ব বর্ধমান জেলার যুগ্ম সম্পাদক অনাবিল সেনগুপ্তর মতে, “ভর বলে কিছু হয় না। ওটা কোনও মানসিক অসুস্থতার কারণে হতে পারে। চিকিৎসার প্রয়োজন। অথবা ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে ভর বলে চালানোর চেষ্টা চলছে। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখার পর বোঝা যাবে।” তবে এমন কাণ্ডে বিসর্জনের পরও ‘অকাল’ কালীপুজোর সাক্ষী রইলেন গ্রামবাসীরা।
ছবি: জয়ন্ত দাস
দেখুন ভিডিও।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.