ধীমান রায়, কাটোয়া: মা কালীর পুজোয় ভোগ হিসেবে সাধারণত খিচুরি, পোলাও, লুচি দেওয়ার কথাই শোনা যায়। কিন্তু পূর্ব বর্ধমানের দাঁইহাটের বেড়াগ্রামের সিদ্ধেশ্বরী মাতার পুজোয় ছবিটা অন্যরকম। ইলিশ, মাগুর ও পোনামাছ- এই তিন ধরনের মাছের পদ ভোগ হিসেবে দিতে হয় মাকে।
গঙ্গার অদূরেই এই কালীমন্দির। তবুও সিদ্ধেশ্বরীমাতার পুজোয় ব্রাত্য গঙ্গাজল। নিময় মেনে গঙ্গাজলের পরিবর্তে এখানে ব্যবহার করা হয় কারনবারি। প্রায় সাড়ে তিনশো বছর ধরেই এই প্রথা চলে আসছে বেড়াগ্রামের সিদ্ধেশ্বরী পুজোয়। কথিত রয়েছে, রামানন্দ নামে এক সাধক এই দক্ষিণাকালীর প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তাঁর নিবাস ছিল নদিয়া জেলার মাটিয়ারি গ্রামে। গঙ্গার ওপারে মাটিয়ারি গ্রাম। সাধনায় যাতে বিঘ্ন না ঘটে, তার জন্য রামানন্দ নিরিবিলি জায়গা হিসাবে বেছে নিয়েছিলেন এপারের বেড়াগ্রাম। প্রতিদিন গঙ্গা পেড়িয়ে তিনি এখানেই তপস্যা করতে আসতেন। স্থানীয়দের কথায়, দেবীর স্বপ্নাদেশ পেয়ে পঞ্চমুণ্ডি আসনের উপরে রামানন্দ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন দক্ষিণাকালীর। যা সিদ্ধেশ্বরী নামে পরিচিত। রামানন্দ ছিলেন অকৃতদার। তিনি তাঁর মৃত্যুর আগে বেড়াগ্রামের এক শিষ্যকে পুজোর দায়িত্ব অর্পন করে যান। তারপর থেকে রামানন্দের সেই শিষ্যের উত্তরপুরুষ বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবার সিদ্ধেশ্বরী মাতার সেবাইতের ভূমিকায় পুজো চালিয়ে আসছেন।
কার্তিকী অমাবস্যায় পুজো হয় সিদ্ধেশ্বরী মাতার। তবে অমাবস্যা তিথি শুরুর আগেই পুজোয় বসতে হয়। প্রথা অনুযায়ী, এই পুজোয় গঙ্গাজল ব্যবহৃত হয় না। কিন্তু তার পরিবর্তে কেন কারনবারি বা মদ ব্যবহৃত হয়, তা অবশ্য ব্যাখ্যা করতে পারেননি বর্তমান সেবাইতরা। তবে প্রাচীন প্রথা ভাঙেননি তাঁরা। বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, দেবীকে ইলিশ, মাগুর মাছ ও পোনা- এই তিন ধরনের মাছের পদ দিয়ে ভোগ দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে পুজোয় ন’পোয়া চালের চালভাজাও দেওয়া হয়। ভাইফোঁটার পর বিকেলে ঘট বিসর্জন করা হয়। দ্বিতীয়ার দিনও হয় বলিদান। যাঁরা মানত রাখেন, তাঁরা দেবী মন্দিরের সামনে দণ্ডি কাটেন। তৃতীয়ার দিন দেবীপ্রতিমা বিসর্জন করা হয়। ভাইফোঁটার পর বিদায় জানাতে হয় দেবীকে। বর্তমানে এই পুজো সর্বজনীন পুজো হয়ে উঠেছে।
ছবি: জয়ন্ত দাস।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.