সৌরভ মাজি, বর্ধমান: প্রার্থী হতে অভিনব পন্থা। কেউ ডাক্তারের একগুচ্ছ প্রেসক্রিপশনের আড়ালে ভরে আনলেন মনোনয়নপত্র ও অন্যান্য নথি। কেউ আবার গোলমালের সুযোগ বুঝে সিপিএম প্রার্থীদের ভিড়ে মিশে পৌঁছে গেলেন মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার কেন্দ্রে। কেউ বা তৃণমূলের নজরদার বাহিনীর সঙ্গে রীতিমতো লুকোচুরি খেললেন দিনভর। ঘটনাস্থল পূর্ব বর্ধমান।
শনিবার বর্ধমান শহরের পূর্ব বর্ধমান জেলার সদর উত্তর ও দক্ষিণ মহকুমা শাসকের দপ্তরে চলেছে মনোনয়ন। জেলা পরিষদের পাশাপাশি জমা নেওয়া হয়েছে গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতির মনোনয়ন। এদিকে কয়েকদিন ধরে বিরোধী দলগুলি দাবি করছিল, শাসকদলের বাধায় মনোনয়ন জমা দেওয়া যাচ্ছে না। বিডিও কার্যালয়ে মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে শাসকদল বাধা দিচ্ছিল বলে অভিযোগ তুলেছিল তারা। একই অবস্থা তৃণমূলের বিক্ষুব্ধ প্রার্থীদেরও। এলাকার নেতারা টিকিট দেননি। তাই মহকুমা শাসকের দপ্তরে গিয়েই মনোনয়ন জমা দিতে মনস্থ করেন তৃণমূলের অনেকেই।
এই সুযোগটা কাজে লাগাতে চেয়েছিলেন বিক্ষুব্ধরা। নিজের নিজের এলাকার তৃণমূলের লোকজন নজরদারি করবে আঁচ করেছিলেন আগেই। তাই ধরা পড়লে মার না খেতে যুক্তি-প্রমাণও আগে থেকে ঠিক করে এসেছিলেন। গলসির শিড়রাই গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার পুরতান গ্রাম থেকে এদিন এসেছিলেন কচি বাগদি। হাতে একটা বড় নাইলনের ব্যাগ। ভিতরে প্লাস্টিকের প্যাকেটে গুচ্ছ কাগজপত্র। কিন্তু নজরদারি এড়িয়ে ঢুকতে পারলেন না। ধরা পড়ে গেলেন। দুই থাপ্পড় পড়তেই অস্বীকার করলেন মনোনয়ন দিতে আসার কথা। তাতেও কী নিস্তার মেলে! শার্টের কলার ধরে গলিতে ঢোকানো হল।
তার পর ব্যাগ খুলে কাগজপত্র পরীক্ষা করতে যেতেই কচির সাফাই, “আরে আমি ডাক্তার দেখাতে যাচ্ছিলাম। দেখ ভিতরে প্রেসক্রিপশন ছাড়া কিছুই নেই। মনোনয়নের ভিড় দেখে দেখতে এসেছিলাম।” ব্যাগ খুলতে প্রথমে প্রেসক্রিপশন বেরল ঠিকই, কিন্তু তারপরই মনোনয়ন পত্র, ভোটার তালিকা-সহ বেশ কিছু নথিপত্র। আর যায় কোথায়, চড়-থাপ্পর চলল। জামা টেনে ছিঁড়ে দেওয়া হল। কয়েকজন আবার তাঁকে আগলে জানিয়ে দিলেন, “সোজা বাপি বাড়ি যা হয়ে যা।” আর দাঁড়াননি কচি। সোজা বাড়ি। এদিন সিপিএমের ভিড়ে মিশে বেশ কয়েকজন বিক্ষুব্ধ তৃণমূল মহকুমা শাসকের দপ্তরে ঢুকেও ছিলেন। কিন্তু পরে তাঁদেরও একই কায়দায় কলার ধরে বের করে দেওয়া হয়। দুই-এক জন অবশ্য মনোনয়ন জমা করেছেন লুকিয়ে-চুরিয়ে। কিন্তু বাড়ি ফেরার পর কী ঘটছে তা অবশ্য এদিন রাত পর্যন্ত জানা যায়নি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.