সংগ্রাম সিংহরায়, শিলিগুড়ি: আড়াই ফুটের বাবা আর দু’ফুটের মা। আর তাদের সদ্যোজাত আর পাঁচজন শিশুর মতোই একেবারে স্বাভাবিক। তাও আবার নানান জটিলতা পেরিয়ে। আর বাচ্চাটিও দৈর্ঘ্যে দুই বা তিন ফুটের গণ্ডিতে আটকে থাকবে না। এমনটাই দাবি চিকিৎসকদের।
মঙ্গলবার শিলিগুড়িতে এমন ঘটনায় হইচই পড়ে গিয়েছে। সাধারণ মানুষ তো বটেই, কর্তব্যরত চিকিৎসকরাও অভিভূত এমন ঘটনায়। এতটাই যে ওই দম্পতির চিকিৎসার কোনও খরচই নেননি তাঁরা। আর বিনা খরচে এমন আতিথেয়তা পেয়ে ওই দম্পতিও খুশি। তাই বাড়ি যাওয়ার আগে হাসপাতালের সকল স্টাফ ও নার্সদের মিষ্টি খাইয়ে বিদায় নেন। খুশিতে চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি সদ্য মা-বাবা হওয়া দম্পতি।
ডুয়ার্সের ওদলাবাড়ির বাসিন্দা দম্পতি মহম্মদ নাজিরের উচ্চতা আড়াই ফুট ও স্ত্রী সওরা খাতুনের উচ্চতা দু’ফুট। ১০ বছর আগে তাঁরা সামাজিক মতে বিয়ে করেন। এমনিতে পেশায় লটারি বিক্রেতা নাজিরের আয়ে মোটামুটিভাবেই সংসার চলছিল। আক্ষেপ, শুধু তাঁদের সন্তান ছিল না। নিজেরা বামন হওয়াতে তাঁদের অনেকে পরামর্শ দেন সন্তান না নিতে। যদিও সে পরামর্শ মনে ধরেনি দম্পতির। বামন হলেও আর পাঁচটা মানুষের মতোই জীবন কাটানোর স্বপ্ন দেখেন দু’জনে। বিয়ের পর থেকেই মা হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন সওরা খাতুনও। কিন্তু পরপর ৩ বার গর্ভপাত হওয়ায় তাঁরা বিশ্বাস করতে শুরু করছিলেন, এ জন্মে আর বোধহয় আর মা–বাবা ডাক শোনা হল না তাঁদের। ভেঙে পড়েছিলেন দম্পতি। এই অবস্থায় শিলিগুড়ির হাকিমপাড়ার একটি নার্সিং হোমের চিকিৎসক ডাঃ এ কে মাঝি এবং ডাঃ সুবল দত্তের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা শুরু করান।
ফের একবার গর্ভবতী হন সওরা বিবি। আগে গর্ভ নষ্ট হওয়ায় আশঙ্কা ছিলই। আর এই বিষয়টিকেই চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছিলেন ওই দুই চিকিৎসক। বাধা বিঘ্ন পেরিয়ে ৫ ডিসেম্বর নার্সিংহোমে ফুটফুটে পুত্র সন্তানের জন্ম দেন সওরাবিবি। এদিকে দম্পতির আর্থিক সমস্যা আর নজিরবিহীন সন্তান জন্মের কথা ভেবেই চিকিৎসকরাও টাকা নেননি। তবে মঙ্গলবার নার্সিংহোম থেকে মা ও সন্তানকে সম্পূর্ণ সুস্থ অবস্থায় ছুটি দিলে বিষয়টি জানাজানি হয়। নাজিরের মুখেও চিকিৎসক ও নার্সদের প্রশংসা। চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি সদ্য বাবা হওয়া নাজির। জানালেন, “চিকিৎসক সম্পর্কে অনেক রকম রটনাই শুনি। কিন্তু সকলেই যে একরকম নন, তা এই নার্সিংহোমে না এলে বুঝতে পারতাম না। ওঁরা সাক্ষাৎ ভগবান। জীবনে কোনওদিনও ওঁদের ঋণ ভুলব না।”
অন্যতম চিকিৎসক সুবল দত্ত বলেন, “আমার চিকিৎসক জীবনে বামন দম্পতির এমন সন্তান লাভের ঘটনা প্রথম হল। বিশেষ করে মায়ের জরায়ু অন্য স্বাভাবিক মহিলাদের মতোই হওয়ায় উনি সাধারণ আকারের সন্তান ধারণ করতে পেরেছেন। ওঁদের সুস্থ ও নীরোগ জীবনের জন্য শুভেচ্ছা জানাই।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.