Advertisement
Advertisement

Breaking News

২৫ কোটির গয়না মায়ের গায়ে! আর নিরাপত্তা?

সোনায় মোড়া মা৷ হিরে জহরতে ঠাসা দেহপট৷ বিশ্ব-রক্ষা করেন তিনি৷ এখন তাঁকে বাঁচায় কে?

Durga's 25 Crore Ornaments! What About The Security?
Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:October 3, 2016 9:58 am
  • Updated:October 3, 2016 9:58 am  

তরুণকান্তি দাস: সোনায় মোড়া মা৷ হিরে জহরতে ঠাসা দেহপট৷ বিশ্ব-রক্ষা করেন তিনি৷ এখন তাঁকে বাঁচায় কে?
কেন, সিকিউরিটি গার্ড! এটাই তো কলকাতায় পুজোর চলতি হাওয়া, যা ঝড় হয়ে আছড়ে পড়েছে জেলাশহর এমনকী মফস্বলেও৷ মাতৃবন্দনার যে বাজেট, তার কিছুটা তাই বরাদ্দ তাঁকেই রক্ষার জন্য৷ দেবীদর্শনে হুমড়ি খাওয়া ভিড় সামালানোর দায়িত্ব বেসরকারি উর্দি পরা যুবক-যুবতীদের কাঁধে৷ সঙ্গী ক্যামেরার চোখ৷ এবং এটাই পুজো কমিটিগুলির কাছে সর্বশেষ স্টেটাস সিম্বল৷ সেই স্টেটাস রাখতে কলকাতায় পুজো কমিটিগুলির থলি থেকে গলে যাচ্ছে প্রায় বিশ কোটি৷ লাগোয়া তিন জেলার শহরতলি ধরলে এর সঙ্গে যুক্ত হবে আরও পাঁচ৷ জেলাগুলিকে জড়িয়ে নিলে মাতৃ নিরাপত্তা ও ভিড়ের গেল গেল রব সামাল দিতে খরচের সংখ্যাটা পঞ্চাশ কোটি ছাড়াবে তো বটেই৷ তা যাক, স্টেটাসটুকু থাক- এটাই বোধহয় আভিজাত্যের নয়া সজ্ঞা৷
বাঙালির বৃহত্তম উন্মাদনাকে বাণিজ্যিক বৃত্তে এনে ফেলার কাজ তো কবেই সারা৷ মা ঘুরছেন সেই আবর্তে৷ যার সর্বশেষ সংযোজন বোধহয় স্বর্ণময়ী রূপ৷ তিনি এখন বড্ড দামী৷ হবে না? গা ভরা গয়না৷ নাক-কান-গলায় ভারী অলঙ্কার৷ মুকুট৷ বাজুবন্ধ৷ মানতাসা৷ কোমরে বিছে৷ পায়ে নূপুর৷ তৃতীয় নয়নে হিরের দ্যুতি৷ যেন কনকমূল্যের দাঁড়িপাল্লায় উঠে বসেছেন মা৷ যে ট্রেন্ড শুরু হয়েছিল উত্তরে লেকটাউনের শ্রীভূমির দশভুজার হাত ধরে কয়েকবছর আগে, তা এখন মহানগরের একাধিক তিলোত্তমার বাহার৷ এবার লেকটাউন যেমন ছয় কোটি টাকার গয়না পরিয়েছে, তেমনই বারুইপুরের পদ্মপুকুরে মায়ের দেহে একই মূল্যের সোনা-দানা৷ দক্ষিণের সন্তোষপুরও একই পথের পথিক৷ স্বর্ণ ব্যবসায়ী মহল সূত্রে খবর, এবার রাজ্যে প্রায় পঁচিশ কোটি টাকার গয়না উঠছে প্রতিমার গায়ে৷ দুর্গাকে নানা সংস্থার এই সোনায় মুড়ে দেওয়া আসলে তাদের বিপণন কৌশল৷ বিজ্ঞাপনী যু‌দ্ধে দশহাতের জোর কাজে লাগানো৷ মা আভরণহীনা৷ যার বিমায় ব্যয় হয়েছে প্রায় ৫০ কোটি৷ তবুও ভয় তো জয় করা যাচ্ছে না৷ কার কাঁধে তাঁর সাময়িক দেহশোভা রক্ষার ভার?
পুজোর সময় তাই উদ্যোক্তাদের মতোই সিকিউরিটি পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থাগুলির নাওয়া-খাওয়া লাটে৷ এই ক’টা দিন কলকাতায় অন্য যে কোনও সময়ের চেয়ে প্রায় দশগুণ নিরাপত্তারক্ষী লাগে৷ নিরাপত্তারক্ষী সরবরাহকারী সংস্থার কর্তা মলয় কর্মকার বলেন, “শহরতলি থেকে অনেক ছেলেমেয়ে এই ক’দিন কাজের জন্য আমাদের কাছে আসেন৷ পুজো কমিটিগুলির চাহিদা মেনে প্রচুর সিকিউরিটি গার্ড জোগান দিতে হিমশিম খেতে হয় তো৷” দক্ষিণ কলকাতার একটি সংস্থার পরিচালনার দায়িত্বে থাকা সাবিবর আলির মন্তব্য, “বলা হয় নিরাপত্তারক্ষী, লাগানো হয় ভিড় সামাল দেওয়ার কাজে৷ এটাই স্বাভাবিক৷ কারণ, এছাড়া পুজো কমিটিগুলির কোনও উপায় নেই৷ শুধু স্বেচ্ছাসেবক দিয়ে সবটুকু সম্ভব নয়৷” নিয়োগ করার আগে স্থানীয় থানা থেকে শংসাপত্র আনতে হয় জানিয়ে মলয় কর্মকার বলেন, “এতে ঝুঁকি কিছুটা কমে৷ কোনও অপরাধের রেকর্ড থাকলে আর কেউ কাজ করতে আসে না৷ তাই এই পথে হাঁটছি আমরা৷”
এই খাতে ঠিক কত টাকা খরচ হয় পুজো কমিটির? আমতা আমতা করেন বিভিন্ন কমিটির কর্তা৷ তবে এজেন্সিগুলির ব্যবসাটার মোট অঙ্ক শুনলে চোখ কপালে উঠবে৷ কলকাতায় প্রায় সাড়ে তিন হাজার পুজো৷ নিরাপত্তারক্ষীর দিনপ্রতি মজুরি ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা৷ ভাল বাউন্সার, গানম্যান হলে ১২ ঘণ্টার জন্য দিতে হয় হাজার দেড়েক৷ গড়ে জনা দশেক নিরাপত্তারক্ষী নিলে দিন ছয়েকের জন্য কমিটির খরচ হয় কমবেশি ৫০ হাজার টাকা৷ মহানগরে বড় পুজোর ক্ষেত্রে নিয়োগের সংখ্যাটা কখনও ২৫-৩০ জন৷ খরচ সহজেই অনুমেয়৷ যা একদা ছিল এই শহরের নিজস্বতা, সেটা এখন জেলাতেও৷ সর্বত্র মণ্ডপে ঢুকতে গেলেই সবুজ, নীল, সাদা, নস্যি বা কোনও ইউনিফর্মের ‘হেঁই সামালো’র হুঁশিয়ারি৷

Advertisement

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement