দীপঙ্কর মণ্ডল: মারণ ভাইরাস করোনার পরীক্ষামূলক ভ্যাকসিন শরীরে নিয়ে বেঁচে আছেন তো অক্সফোর্ডের অধ্যাপক? বিশ্বজুড়ে এলিসা গ্রানাটোর সুস্থতার জন্য প্রার্থনা চলছে। তার মাঝে এগিয়ে এলেন বাংলার এক শিক্ষক। ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ বা ICMR’র কাছে তাঁর আর্জি দেশের এবং মানবতার স্বার্থে তিনি করোনা ভাইরাস ভ্যাকসিনের পরীক্ষায় নিজেকে উৎসর্গ করতে চান।
চিরঞ্জিত ধীবর নামে ওই শিক্ষকের বয়স ৩০ বছর। পশ্চিম বর্ধমানের মানিকাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ান তিনি। স্ত্রী-সন্তান ও মাকে নিয়ে তাঁর সংসার। তবে বর্তমানে স্ত্রী, সন্তান আলাদা থাকেন। রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের সদস্য। সোমবার প্রথমে মহকুমা শাসক এবং পরে জেলাশাসক শশাঙ্ক শেঠিকে তিনি ই-মেল করেন। জেলাশাসকের দপ্তর জানায়, বিষয়টি তাদের হাতে নেই। আইসিএমআর এবং কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রককে চিঠি দিতে হবে। সেইমতো দুই জায়গায় ই-মেল করেন চিরঞ্জিত। ICMR’র সদর দপ্তর দিল্লি থেকে বাংলার শিক্ষকের চিঠির প্রাপ্তি স্বীকার করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় সংস্থার মিডিয়া কো-অর্ডিনেটর ড. লোকেশ শর্মা সংবাদ প্রতিদিনকে জানিয়েছেন, “আপাতত আমরা প্লাজমা থেরাপির ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল করছি। প্লাজমা দাতারা প্রত্যেকে এক সময় করোনা আক্রান্ত ছিলেন, কিন্তু এখন সুস্থ হয়েছেন। ভবিষ্যতে নন কোভিডদের উপর পরীক্ষা করা হলে আবেদনকারীদের মধ্যে থেকে কাউকে বাছাই করা হবে। তবে তা হিউম্যান এথিকস কমিটি অনুমোদন করবে। একটি নির্দিষ্ট প্রোটোকল মেনে সেই পরীক্ষা হবে।”
বিশ্বজুড়ে লক্ষ লক্ষ মানুষের বাঁচা মরা নিয়ে অনেকেই ভাবছেন। স্বপ্ন দেখছেন। করোনা আক্রান্ত কিংবা সুস্থ আছেন এমন মানুষ পরস্পরের প্রতি সহমর্মীতার হাত বাড়াচ্ছেন। বিভিন্ন দেশ ভ্যাকসিন আবিষ্কারের চেষ্টা করছে। থেমে নেই ভারতও। ICMR আপাতত প্লাজমা থেরাপির পরীক্ষা করছে। আক্রান্ত কোনও রোগী সুস্থ হওয়ার পর তার শরীরের প্লাজমা নেওয়া হচ্ছে। সেই প্লাজমা প্রতিস্থাপিত হবে করোনা আক্রান্তর শরীরে। যা থেকে সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন রোগী। কিন্তু এত গেল আক্রান্তের উপর পরীক্ষা। চিরঞ্জিত চান ভ্যাকসিন আবিষ্কৃত হোক। অর্থাৎ দেশজুড়ে ছোটবেলায় যেমন পালস পোলিও টিকা দেওয়া হয় তেমনই মানব জীবনের শুরুতেই করোনা টিকা দেওয়া হোক। যদিও সেই পরীক্ষা এখনও ভারতে শুরু হয়নি।
সম্প্রতি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গ্রানাটোর উপর ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হয়েছে। দিনদুয়েক আগে ওই অধ্যাপক টুইটারে ভাল আছেন বলে জানিয়েছেন। কিন্তু তারপর থেকে তিনি নীরব। যা নিয়ে উত্তাল সোশ্যাল মিডিয়া। অধ্যাপক গ্রানাটো বেঁচে আছেন কিনা তা নিয়ে সন্দিহান সবাই। তাঁর সুস্থ থাকার প্রার্থনা চলছে গোটা বিশ্বে। এমতাবস্থায় দুর্গাপুরের শিক্ষক নিজের জীবন উৎসর্গ করতে চেয়ে যে চিঠি পাঠিয়েছেন তাই তাঁকে কুর্নিশ জানিয়েছেন প্রায় সকলেই। আরএসএসের শিক্ষক সংগঠন ‘বঙ্গীয় নব উন্মেষ প্রাথমিক শিক্ষক সংঘ’র রাজ্য কমিটির সদস্য চিরঞ্জিত। তিনি জানেন পরীক্ষামূলক ভ্যাকসিনে তাঁর শরীরে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হতে পারে। তার ফলে মৃত্যুও হতে পারে। কিন্তু তাঁকে আমল দিচ্ছেন না যুবক।
সংবাদ প্রতিদিনকে তিনি জানিয়েছেন, “আমি ছাত্রাবস্থা থেকে সংঘের সঙ্গে যুক্ত। একজন স্বয়ংসেবক হিসাবে দেশের সেবা করা আমার এক এবং একমাত্র লক্ষ্য। আমার জীবনের বিনিময়ে যদি গোটা মানবজাতি রক্ষা পায়, তার চেয়ে ভাল কিছু হতে পারে না।” দিল্লি এইমসের এক চিকিৎসক এ প্রসঙ্গে বলেন, “কোনও ভ্যাকসিন বাজারে আসার আগে দফায় দফায় পরীক্ষা হয়। জীবজন্তুর উপরে করে সফল হলে ভলান্টিয়ারদের শরীরে দেওয়া হয়। তারপরে নির্দিষ্ট একটি গোষ্ঠীর উপরে এবং সবশেষে বাজারে আসে। করোনা ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রেও তাই হবে। অনেক ক্ষেত্রেই ভলান্টিয়ারদের সমস্যা হয় না। তবে জীবজন্তুর উপর প্রয়োগে সাফল্য আসলেও, মানব শরীরে প্রতিক্রিয়া দেখা দিতেই পারে।” অর্থাৎ জীবন বাজি রেখেই কেউ ভ্যাকসিন প্রয়োগে রাজি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.