সুমিত বিশ্বাস ও সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়: লকডাউনে প্রশাসনের নির্দেশমতো ঘরে ঘরে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেওয়ার কথা। কিন্তু সেই ব্যবস্থা কার্যকরী করতে গিয়েও সামনে চলে আসছে বিস্তর বেনিয়মের অভিযোগ। কোথাও নির্দিষ্ট পরিমাণমতো চাল-ডাল দেওয়া হচ্ছে না, কোথাও আবার সাধারণ মানুষের জন্য বরাদ্দ খাদ্যপণ্য চুরির অভিযোগ। মঙ্গলবার পশ্চিম বর্ধমানের দুর্গাপুর এবং পুরুলিয়ার পুঞ্চা, রাজ্যের দুই জেলায় এ নিয়ে বিক্ষোভ দেখালেন অঙ্গনওয়াড়ি প্রাপকরা। পুঞ্চায় পথ অবরোধও হয়। বিক্ষোভ সামাল দিতে নামতে হল পুলিশকে।
দুর্গাপুরের কমলপুরের ঘোষপাড়া ৩ নং আইসিডিএস সেন্টার। সেই কেন্দ্রের সহায়িকার বিরুদ্ধে চাল চুরির অভিযোগ ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে উঠল এলাকা। ঘটনার সূত্রপাত সোমবার। অভিযোগ উঠেছিল, এই আইসিডিএস সেন্টারের সহায়িকা সুনন্দা গোস্বামী শিশুদের চাল, ডাল, আলু যা দিচ্ছেন, তা সরকারের নির্দিষ্ট করে দেওয়া পরিমাণের তুলনায় অনেকটা কম। এই অভিযোগে মঙ্গলবার সকাল থেকে কমলপুর ঘোষপাড়া অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের প্রাপকরা সুনন্দা গোস্বামীকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখান। এই ওয়ার্ডের কাউন্সিলরের কাছে সুনন্দাদেবীকে এখান থেকে সরিয়ে দেওয়ার দাবি তোলেন। প্রবল বিক্ষোভের মাঝে সেন্টারেই বন্দি হয়ে পড়েন ওই সহায়িকা। যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সহায়িকা সুনন্দা গোস্বামী।
ঘটনার খবর পেয়ে সেখানে পৌঁছয় দুর্গাপুর থানার পুলিশ, যান দুর্গাপুরের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট সঞ্জয় সুব্বা। তাঁদের মধ্যস্থতায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। এই অভিযোগে পরিপ্রেক্ষিতে দুর্গাপুর ১ নং কেন্দ্রের শিশু বিকাশ প্রকল্পের আধিকারিক পারমিতা সেনগুপ্ত জানিয়েছেন, লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে দেখা হবে। তবে স্থানীয় বাসিন্দাদের হুঁশিয়ারি, ফের এই ঘটনা ঘটলে প্রয়োজনে সেন্টারে তালা দিয়ে দিতে তাঁরা পিছপা হবেন না।
প্রায় একই ছবি পুরুলিয়ার পুঞ্চা ব্লকে। সেখানে ন’পাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের দামোদরপুর গ্রামের অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে কম পরিমাণ চাল-ডাল-আলু দেওয়া হচ্ছিল বলে অভিযোগে সরব হয়ে ওঠেন প্রাপকরা। তাঁদের অভিযোগ, নির্ধারিত পরিমাণের চেয়ে অন্তত ২০০ গ্রাম খাদ্যসামগ্রী কম দেওয়া হচ্ছিল। ওই কেন্দ্রের মহিলা কর্মীকে ঘেরাও করে রাখা হয়। তবে তার ফাঁক গলেই তিনি একজনের মোটরবাইকে চড়ে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র ছেড়ে চলে যান। তাতে বিক্ষোভ আরও চরমে ওঠে। লালপুর-মানবাজার রাস্তায় নেমে তা অবরোধ করেন অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের প্রাপকরা।
ঘটনাস্থলে যায় পুঞ্চা থানার পুলিশ। সঙ্গে ছিলেন যুগ্ম বিডিও বৈদ্যনাথ হেমব্রম। তাঁরা বিক্ষোভকারীদের বুঝিয়ে অবরোধ তোলার আবেদন জানান। কিন্তু তাতে কর্ণপাত করেননি কেউ। এরপর ঘটনাস্থলে যান জেলা পরিষদের সভাধিপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি সকলকে বুঝিয়ে বলেন, এটা বিক্ষোভ-অবরোধের সময় নয়। প্রত্যেকে বরাদ্দ চাল-ডাল-আলু পাবেন। এবং সেখানে দাঁড়িয়েই এই বেনিয়মের অভিযোগ পেয়ে তদন্তের নির্দেশ দেন তিনি। সভাধিপতির আশ্বাসে মিনিট ২০ পর ওঠে অবরোধ।
এ বিষয়ে পুরুলিয়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, “এই পরিস্থিতিতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য সরকারের নির্দেশে ঘরে ঘরে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। তাতে কেউ বেনিয়ম করলে বরদাস্ত করব না। তদন্তের নির্দেশ দিয়েছি।” পুঞ্চা ব্লকের শিশুবিকাশ প্রকল্পের আধিকারিক গণেশ পানিগ্রাহীর বক্তব্য, প্রাপকদের অভিযোগের ভিত্তিতে চাল, আলু পরিমাপ করা হচ্ছে। তদন্তের রিপোর্ট পেলেই তিনি দ্রুত ব্যবস্থা নেবেন।
অন্যদিকে, সোমবার কাশীপুরের পাড়াশোল গ্রামে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে পোকাধরা ডাল দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। সেই অভিযোগ পেয়েই ব্যবস্থা নিয়েছে জেলা প্রশাসন। বাড়ি বাড়ি গিয়ে সেই ডালের নমুনা পরীক্ষা শুরু হয়েছে। পুরুলিয়ার জেলাশাসক রাহুল মজুমদার এ কথা জানিয়েছেন। তাঁর আশ্বাস, অভিযোগ সত্যি হলে, নতুন করে ফের ডাল দেওয়া হবে ওই প্রাপকদের।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.