ছবিতে ধৃত সাধনা বাউরিকে জেলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ছবি: উদয়ন গুহ রায়।
সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, দুর্গাপুর: পরকীয়ার জেরে প্রেমিকের সঙ্গে জোট বেঁধে স্বামীকে খুন৷ খুনের অভিযোগ উঠল স্ত্রীর বিরুদ্ধে৷ শনিবার রাতে অভিযুক্ত প্রেমিক, পলাতক স্ত্রী ও প্রেমিকের বন্ধুকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ৷ ধৃতরা সাধনা বাউরি, সূরয বাদ্যকর, রবি পাসোয়ান৷ ধৃতদের রবিবার দুর্গাপুর মহকুমা আদালতে তোলা হলে সাধনাকে সাতদিনের জেল হেফাজত ও বাকি দু’জনকে পাঁচদিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক৷ গোটা ঘটনায় দুর্গাপুরের পাণ্ডবেশ্বরে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে৷
জানা গিয়েছে, মৃত যুবকের নাম সঞ্জয় বাউরি(২৮)৷ বাড়ি পাণ্ডবেশ্বরের কেন্দ্রা এলাকায়৷ পেশায় ব্যবসায়ী সঞ্জয়বাবু গত ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে নিখোঁজ ছিলেন৷ ঘটনার দু’দিন পর ২৫ সেপ্টেম্বর পাণ্ডবেশ্বর থানায় স্বামীর নিখোঁজের অভিযোগ দায়ের করেন সাধনা বাউরি৷ অভিযোগ পেয়েই তদন্তে নামে পুলিশ৷ ২৬ তারিখে স্থানীয় শ্যামলা এলাকায় অজয় নদের চর থেকে ওই ব্যবসায়ীর ক্ষতবিক্ষত দেহ উদ্ধার হয়৷ সঙ্গে সঙ্গেই সাধনা বাউরিকে খবর দেয় পুলিশ৷ তবে প্রথমে দেহ শনাক্ত করতে রাজি হননি ওই গৃহবধূ৷ পরে পুলিশের জোরাজুরিতে মর্গে গিয়ে দেহ শনাক্ত করেন৷ সাধনাদেবীর এই আচরণেই পুলিশের মনে সন্দেহ দানা বাঁধে৷ এরপরেই তাঁকে জেরা শুরু করে পুলিশ৷ তাতেই ঝুলি থেকে বিড়াল বেরিয়ে পড়ে৷ শোনা যায় পরকীয়ার ‘গল্প’৷ অভিযোগ, ২৩ সেপ্টেম্বর রাতে সঞ্জয়ের বাড়িতে মদ্যপানের আসর বসে৷ আসরে সাধনা ছাড়াও সূরয ও তার দুই বন্ধু সেখানে উপস্থিত ছিল। যাদের একজনের নাম রবি পাসোয়ান৷ আকণ্ঠ মদ্যপানে সঞ্জয় অচৈতন্য হয়ে পড়লে সাধনা ও সূরয তাঁর গলা টিপে ধরে৷ রবি সঞ্জয়ের হাত চেপে ধরে৷ এরপর মৃত্যু নিশ্চিত করতে তৃতীয় সঙ্গী সঞ্জয়ের কানের নিচে গুলি করে৷ এরপর দেহটিকে বিছানার চাদরে মুড়ে সূরযের বাইকে চাপিয়ে সোজা শ্যামলায় পৌঁছায় তারা৷ গভীর রাতে অজয়নদের চরে দেহ ফেলে দিয়ে চলে আসে৷ এদিকে ভাইয়ের আচমকা নিখোঁজ হওয়াতে সাধনার দিকেই অভিযোগের আঙুল তোলেন মৃতের দাদা সঞ্জিত বাউরি৷ পাণ্ডবেশ্বর থানায় অভিযোগও দায়ের হয়৷ এরপরেই আসরে নামে পুলিশ। এদিকে তার বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগের খবর পেয়ে উধাও হয়ে যায় সাধনা বাউরি৷ তখন থেকেই সাধনার খোঁজে হন্যে হয়ে ঘুরছে পুলিশ৷ শনিবার দুপুরে লুকিয়ে বাড়িতে আসে সাধনা সেই সময়ই তাকে হাতেনাতে ধরে পুলিশ৷ এরপরই জেরা করতেই স্বামীকে খুনের ঘটনা কবুল করে সে৷ গোটা ঘটনায় প্রেমিক সূরয ও আরও দু’জনের জড়িত থাকার কথাও ভালভাবে মেনে নেয় সে৷ এরপরেই সূরযের খোঁজে সাধনার কাছে থেকে মোবাইল নম্বর নিয়ে নেয় পুলিশ৷ তারপর টাওয়ার লোকেশন ধরে শনিবার রাতেই বীরভূমের কাঁকড়তলা থানার ভবানীগঞ্জের ঘর থেকে সূরযকে গ্রেপ্তার করা হয়৷ রবিবার ভোরে কেন্দ্রার ঘর থেকে গ্রেপ্তার হয় রবি পাসোয়ান৷
পুলিশ জানিয়েছে, কেন্দ্রারই বাসিন্দা সাধনা বাউরির সঙ্গে আটবছর আগে প্রেম করেই বিয়ে হয় সঞ্জয়ের৷ বাড়ির আপত্তি সত্ত্বেও পালিয়ে সঞ্জয়কে বিয়ে করে সাধনা৷ সাধনার বাবা নারায়ণ বাদ্যকর ইসিএলের কর্মী ছিলেন৷ দূরারোগ্য রোগে আক্রান্ত নারায়ণবাবুকে দেখভাল করত সাধনার মাসতুতো দাদা সূরয বাদ্যকর৷ সম্প্রতি জামাই সঞ্জয় শ্বশুরমশাই নারায়ণবাবুকে নিয়ে দক্ষিণ ভারতে চিকিৎসা করাতে যান৷ সেখান থেকে ফেরার পথে আচমকাই নিরুদ্দেশ হয়ে যান নারায়ণবাবু৷ বাবার নিরুদ্দেশের পিছনে স্বামীর হাত আছে, এই অভিযোগ তুলে সঞ্জয়ের সঙ্গে সাধনার বিবাদ শুরু করে সাধনা৷ এদিকে দীর্ঘদিন ধরে বাড়িতে ক্রমাগত আসা-যাওয়ার জন্য মাসতুতো দাদা সূরযের সঙ্গে সাধনার প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়েছে৷ প্রায় এক বছর হল তাদের মধ্যে শারীরিক সম্পর্কও গড়ে উঠেছে৷ এদিকে নারায়ণবাবুর নিখোঁজের পর বীরভূমের বাড়িতে ফিরে যায়নি সূরয৷ সে সাধনাদের বাড়িতেই থেকে যায়৷ এতে সম্পর্ক আরও গভীর হতেই ঘটে বিপত্তি৷ কোনওভাবে স্ত্রীর পরকীয় স্বামী সঞ্জয়ের নজরে পড়ে যায়৷ স্ত্রীর এহেন কাণ্ডে মানসিক আঘাত পেয়ে মদ্যপান শুরু করেন সঞ্জয়বাবু। অভিযোগ, মদ্যপ অবস্থায় স্ত্রীকে মারধরও করতেন তিনি৷ অন্যদিকে মদ্যপানের জন্য টাকা নিতেন স্ত্রীর থেকেই৷ বাবার সঞ্চিত অর্থে সঞ্জয়ের মদের যোগান দিতে দিতে জেরবার হয়ে ওঠে সাধনা৷ নারায়ণবাবু মেয়ের নামে মোটা অর্থ জমা করে গিয়েছিলেন ব্যাংকে৷ এবার সেই দিকে নজর পড়ে সঞ্জয়ের৷ বিষয়টি বুঝতে পেরে মুক্তির পথ খুঁজতে শুরু করে সাধনা৷ প্রেমিক সূরযের সঙ্গে স্বামীকে খুনের পরিকল্পনা করে সে৷ সাধনা গাড়ি ভাড়া দিয়ে মাসিক যে টাকা পেত তার থেকেই আগ্নেয়াস্ত্র কেনার জন্য দশ হাজার টাকা সূরযকে দিয়ে দেয়৷ সূরয আবার সেই টাকা বন্ধু রবি পাসোয়ানকে দেয়৷ রবি নিজে বীরভূম থেকে সেই টাকায় একটি ওয়ান শাটার বন্দুক কেনে৷ তাই দিয়েই ২৩ তারিখ রাতে সঞ্জয়কে খুন করা হয়৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.