সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, দুর্গাপুর: সরকারি নির্দেশিকাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে খুলল দুর্গাপুরের এক বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুল। নতুন ক্লাসের বই নেওয়ার জন্য অভিভাবকদের হাতে তুলে দিতে এভাবেই স্কুলের দরজা খুলে দেওয়ার অভিযোগ উঠল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, বই সংগ্রহের হুড়োহুড়িতে সামাজিক দূরত্বের লেশমাত্র দেখা গেল না অভিভাবক মহলে। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে ওই স্কুলে বই দেওয়া বন্ধ করে দেয়।
রাজ্য সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী, করোনা মোকাবিলায় আগামী ১০ জুন পর্যন্ত সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি বন্ধ থাকছে। পাশাপাশি লকডাউন চলাকালীন কেউ যাতে বাইরে না বের হয়, তার জন্য নতুন শিক্ষাবর্ষের বই পড়ুয়াদের বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেওয়ারও কথা ছিল। কিন্তু সেই নির্দেশিকাকে উপেক্ষা করে দুর্গাপুরের এ-জোনের কাজী নজরুল সরণিতে(বেনাচিতি রোড) অবস্থিত ওই বেসরকারি স্কুলটি মঙ্গলবার সকালে খোলা হয়। স্কুলের গেটের সামনে অভিভাবকদের লম্বা লাইন দিতেও দেখা যায়। সামাজিক দূরত্বের কোনও বালাই ছিল না। কেন লকডাউনের মাঝে এমন ভিড় স্কুলের সামনে? এই প্রশ্নের উত্তরে অভিভাবকরা অভিযোগ করেন, সোমবার স্কুলের তরফে হঠাৎই বই সংগ্রহের জন্য টোকেন দেওয়ার কথা জানায়। বলা হয়, আজ থেকে নতুন সেশনের বই দেওয়া শুরু করে। তাই তাঁরা সকাল থেকে স্কুলে বই নেওয়ার জন্য লাইন দিয়েছেন।এরই মধ্যে খুলে যায় স্কুলের একটি কাউন্টার। আর সেই কাউন্টার থেকে কে আগে টোকেন সংগ্রহ করবেন তা নিয়ে অভিভাবকদের মধ্যে হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। শিকেয় ওঠে সামাজিক দূরত্ব। এরই মধ্যে খবর পেয়ে ওই স্কুলে পৌঁছয় পুলিশ। বন্ধ করে দেওয়া হয় টোকেন দেওয়া। বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয় সবাইকে।
এই অনভিপ্রেত ঘটনা নিয়ে স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা সুতপা আচার্য বলেন, “আমরা প্রশাসনের কাছে বই দেওয়ার অনুমতি চেয়েছিলাম। পাঠ্যপুস্তক না পেয়ে সমস্যায় পড়েছে পড়ুয়ারা।” দুর্গাপুরের মহকুমা শাসক অনির্বাণ কোলের দাবি, ওই স্কুলটি কোনও অনুমতি বা অনুমোদন ছাড়াই এরকম কাজ করেছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
অভিভাবকদের দাবি, স্কুলে প্রত্যেক অভিভাবকের ফোন নম্বর দেওয়া আছে। স্কুল কর্তৃপক্ষের উচিত ছিল, ফোন করে অভিভাবকদের জানিয়ে আলাদা আলাদা করে ডেকে নেওয়া। তাতে এই সমস্যা তৈরি হতো না। তাছাড়া স্কুলের ইউনিফর্মও এই স্কুল থেকেই নিতে হয়। তাই লকডাউন ভেঙে স্কুলে বাধ্য হয়েই আসতে হয়েছে। পাশাপাশি স্থানীয়দেরও অভিযোগ, লকডাউনের মেয়াদ বারবার বাড়িয়ে দিয়েও করোনা সংক্রমণ কিছুতেই আটকানো যাচ্ছে না। তাতে বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলগুলি বারবারই নিয়মভঙ্গ করে নিজেদের স্কুল থেকে বই দিচ্ছে। এতে স্কুল সংলগ্ন এলাকাগুলিতেও সংক্রমণের আশঙ্কা বাড়ছে। আসলে এই সমস্ত স্কুলগুলি সব কিছুর উর্ধ্বে উঠে কেবলমত্র ব্যবসাটাকেই বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.