সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, দুর্গাপুর: অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিলের প্রতিবাদ করতে গিয়ে শাসকদলের কাছে বেদম মার খেলেন সিপিএমের তেরোটি গণসংগঠনের কর্মীরা৷ তৃণমূলের মারের হাত থেকে বাদ যাননি দুর্গাপুরের সিপিএম বিধায়কও৷ রড, লাঠি, শাবল ও বাঁশ নিয়ে তৃণমূল কর্মীরা আক্রমণ করে বলে সিপিএমের অভিযোগ৷ যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছে শাসকদল৷ সম্প্রতি গ্রাহকদের কাছ থেকে সিকিউরিটি ডিপোজিটের নামে ডিপিএল অতিরিক্ত অর্থ আদায় করছে বলে গ্রাহকদের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে৷ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ডিপিএলের এই অতিরিক্ত অর্থ ‘আত্মসাৎ’এর প্রতিবাদও করেছে৷ শনিবার সিপিএমের তেরোটি গণসংগঠনের ডাকে ডিপিএলের প্রশাসনিক ভবনের সামনে এই সিকিউরিটি ডিপোজিটের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ ও কর্তৃপক্ষকে স্মারকলিপি প্রদান কর্মসূচি ছিল৷ এই কর্মসূচির জন্যে আগে থেকেই পুলিশ ও ডিপিএল কর্তৃপক্ষের অনুমোদনও নিয়েছিল বলে দাবি করেছে সিপিএম৷
শনিবার সকাল এগারোটা নাগাদ স্মারকলিপি দিতে গেলে জনা বারো তৃণমূলকর্মী তাদের পথ আটকায় বলে অভিযোগ৷ ডিপিএলের প্রশাসনিক ভবনের মতো নিয়ন্ত্রিত এলাকায় বহিরাগতরা কীভাবে ঢুকল সে প্রশ্নও করেছে সিপিএম কর্মীরা৷ স্মারকলিপি দিয়ে ফেরার পর মঞ্চে ভাষণ দেওয়ার সময় সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য পঙ্কজ রায় সরকারের মাইক ছিনিয়ে নিয়ে মাইকের তার কেটে দেয় বলে অভিযোগ৷ তারপরই তৃণমূলের জনা পঞ্চাশেক কর্মী চড়াও হয় সিপিএমের কর্মীদের উপর৷ যথেচ্ছভাবে রড, বাঁশ, শাবল দিয়ে ব্যাপক মারধর করা হয় তাদের৷ সিপিএমের দুর্গাপুর পূর্ব কেন্দ্রের বিধায়ক সন্তোষ দেবরায়কেও শারীরিকভাবে চরম হেনস্তা করা হয় বলে অভিযোগ৷ খবর পেয়ে কোকওভেন ও দুর্গাপুর থানার বিশাল পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে এলে পালিয়ে যায় তৃণমূলকর্মীরা৷ এদিকে ততক্ষণে সভামঞ্চে যুদ্ধক্ষেত্রের পরবর্তী অবস্থার চেহারা নিয়েছে৷ পুলিশ ও অন্যান্য সিপিএম কর্মীরাই জখমদের দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করেন৷ সিপিএম বিধায়ক সন্তোষ দেবরায়ের শারীরিক অবস্থা সংকটজনক হয়ে পড়ায় তাঁকে মহকুমা হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়৷ ডিওয়াইএফআইয়ের চার কর্মী জয় সিং, সঞ্জীব দে, মানিক পাসওয়ানের মাথায় ও বুকে গুরুতর আঘাত লেগেছে বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে৷
সিপিএমের তেরোটি গণসংগঠনের পক্ষ থেকে আহ্বায়ক পঙ্কজ রায়সরকার জানান, “অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিল নিয়েই প্রতিবাদ করতে গিয়েছিলাম৷তাতে তৃণমূলের এত রাগের কারণ কী হতে পারে বুঝলাম না। আমরা তো আর শাসকদলের লাগামছাড়া দুর্নীতির অভিযোগ করতে যাইনি৷ স্বৈরাচারী সরকার৷ মানুষের নায্য দাবি ও প্রতিবাদের কণ্ঠস্বরকে স্তব্ধ করতে চায় তৃণমূল৷ তৃণমূলের এই বর্বরোচিত আক্রমণের বিরুদ্ধে দুর্গাপুর জুড়ে আন্দোলন সংগঠিত হবে৷” যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছে তৃণমূল৷ তৃণমূলের পশ্চিম বর্ধমান জেলার কার্যকরী সভাপতি উত্তম মুখোপাধ্যায় জানান,“এই ঘটনার সঙ্গে তৃণমূলের কেউ জড়িত নয়৷মিশ্র ইস্পাত কারখানার গণ অবস্থান কর্মসূচি ছাড়াও আরও বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে ব্যস্ত দলের কর্মীরা৷ ওদের নিজেদের মধ্যেই গন্ডগোল৷ সিটুর একটা অংশ মিশ্র ইস্পাত কারখানা নিয়ে সদর্থক ভূমিকা নিয়েছে৷ রাজ্য সরকারের দ্বারস্থ হয়েছে৷ তাতেই সিটুর একটা অংশ চটে গিয়েছে৷ তাই নিজেদের গুরুত্বপূর্ণ করে তুলতে তারাই এই কাণ্ড ঘটিয়েছে৷ আমাদের কাছে এর সুর্নিদিষ্ট প্রমাণও আছে৷” সিপিএম পুলিশি অনুমোদন নিয়ে শনিবারের কর্মসূচি পালনের দাবি করলেও পুলিশ বলছে অন্য কথা৷ আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশের ডিসি-১ অভিষেক মোদি জানান, “এদিনের কর্মসূচির কোনও অনুমতি ছিল না পুলিশের৷ আমরা খবর পেয়ে ওখানে যাই৷ মারপিটের কোনও অভিযোগ হয়নি৷ হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.