ধীমান রায়, কাটোয়া: যখন শরতের নীল আকাশে সাদা মেঘ খেলা করে বেড়ায়। সবুজ মাঠে দোল খায় সাদা কাশের বন। বাতাসে শিউলি ফুলের গন্ধ। প্রকৃতি তখন জানিয়ে দেয় দুর্গাপুজো আসন্ন। শারোদৎসবে মাতোয়ারা হন শহর থেকে গ্রামের আপামর বাঙালি। কিন্তু তার ব্যতিক্রম কাটোয়ার আমূলগ্রাম। শরৎকালে এখানে হয় না দুর্গাপুজো। পরিবর্তে মাঘ মাসে দেয়াসিন চন্ডীমাতার পুজো ঘিরে অকাল শারোদৎসবে মাতেন কাটোয়ার আমূল গ্রামের বাসিন্দারা। এই গ্রামে দ্বিতীয় কোনও দুর্গাপুজো করার বিধি নেই।
[ প্রেমে ফাঁসিয়ে পরপর চারবার বিয়ে, শ্রীঘরে গ্যারাজ মিস্ত্রি]
দেয়াসিন চন্ডিমাতার এই পুজোর সূচনা হয়েছিল পারিবারিক হিসাবেই। কিন্তু কালক্রমে এই পুজোই সর্বজনীন পুজোর চেহারা পেয়েছে। উৎসব ঘিরে মাতোয়ারা হন এলাকার বাসিন্দারা। কাটোয়ার সিঙ্গি পঞ্চায়েতের অন্তর্গত প্রত্যন্ত এক গ্রাম আমুলগ্রাম। প্রায় ৫০০ পরিবারের বসবাস। এই গ্রামে প্রতিবছর মাঘ মাসের শুক্লপক্ষের নবমী তিথিতে হয় দেয়াসিন চন্ডীমাতার পুজো। প্রায় ৪০০ বছরের প্রাচীন এই দেয়াসিন চন্ডীমাতার পুজো। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, আমূলগ্রামের বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবার এই পুজোর সূচনা করেছিল। দেয়াসিন চন্ডীমাতার পুজোয় দু’টি মূর্তি পাশাপাশি রেখে পুজো করা হয়। একটি আদি শিলামূর্তি। অপরটি মাটির প্রতিমা। পুজোর সূচনা প্রায় ৪০০ বছর আগে। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের এক পূর্বপুরুষ স্বপ্নাদেশ পেয়ে আমূলগ্রামের পশ্চিমদিকে দেয়াসিন নামে দিঘির জলের তলা থেকে দেবীর এই শিলামূর্তি উদ্ধার করেছিলেন। সেইবছর থেকে মাঘ মাসের শুক্লপক্ষের নবমী তিথি থেকে চারদিনের পুজো হয়ে আসছে। শিলামূর্তি উদ্ধারের কয়েক বছর পর থেকে মাটির প্রতিমারও পুজো হয়ে আসছে।
দেয়াসিন চন্ডীমাতার মাটির প্রতিমা বিচিত্র ধরনের। দেবীর ডানদিকে রয়েছে চারটি হাত আর বাঁদিকে ছ’টি হাত। তার মধ্যে ডানদিকের একটি ও বাঁদিকের দু’টি হাত বড়। বাকি সাতটি হাত তুলনামূলক ছোট। মাটির প্রতিমাটি অবশ্য প্রতিবছর নির্মাণ করা হয় না। শুধুমাত্র দেবীমূর্তির অঙ্গহানি হলে নতুন প্রতিমা নির্মাণ করতে হয়। সপ্তমী থেকে নবমী এই তিন তিথির পুজো শেষ করতে হয় নবমীতে। তবে একদিনের পুজো হলেও আচার মেনে উৎসব চলে চারদিনই। পুজো উপলক্ষে গ্রামে মেলা বসে। দূরদূরান্তের মানুষও পুজোয় সামিল হন। অকাল দুর্গাপুজোয় সেজে উঠেছে কাটোয়ার আমূলগ্রাম।
[ সাগরের বর্জ্য তুলবে জাহাজ, নকশা তৈরি করে তাক লাগাল ১২ বছরের বালক]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.