সম্যক খান, মেদিনীপুর: ভিটেমাটির টানে ৭১ বছর পর সাত সমুদ্র তেরো নদী পেরিয়ে স্বভূমিতে পা রাখলেন প্রবাসী ভারতীয় পরিবার।আর তাঁদের যোগসূত্র স্থাপনে মধ্যস্থতার কাজ করলেন মেদিনীপুর ডট ইনের কর্ণধার অরিন্দম ভৌমিক।নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা থেকে পশ্চিম মেদিনীপুরের বাড়িতে এলেন নাগ পরিবারের আট সদস্য। মেতে উঠলেন বর্তমান পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে।
পশ্চিম মেদিনীপুরের খড়গপুর ২ নম্বর ব্লকের নিশ্চিন্তায় জমিদারি ছিল নাগ পরিবারের। পূর্বপুরুষ অযোধ্যারাম নাগের হাত ধরে এলাকার জমিদার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলেন তাঁরা। অযোধ্যারামের চার পুত্র ছিলেন – তারাচাঁদ, উদয়চাঁদ, ফকিরচাঁদ এবং নবীনচাঁদ। মেদিনীপুর শহর থেকে শুরু করে সারা জেলাজুড়েই তাঁদের প্রভাব-প্রতিপত্তি ছিল। নবীনচাঁদের দুই স্ত্রী। প্রথম পক্ষের চার সন্তান – জ্ঞানেন্দ্র, রবীন্দ্র, নগেন্দ্র ও যোগেন্দ্র। নবীনবাবুর চার সন্তানের মধ্যে রবীন্দ্র নাগ নামকরা ব্যারিস্টার ছিলেন। তিনি ডোরা চ্যান্সেলর নামে এক ইংরেজ মহিলাকে বিয়ে করে বিদেশে চলে যান। তাঁদের সাত ছেলেমেয়ে বর্তমানে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে আছে। প্রত্যেকেই স্বপ্রতিষ্ঠিত।
রবীন্দ্রবাবুরই এক কন্যার নাম নোয়েল। নোয়েলের দ্বিতীয় পুত্র রোনাল্ড স্টুয়ার্ট বছর দুয়েক আগে প্রথম যোগাযোগ করেন মেদিনীপুর ডট ইনের কর্ণধার অরিন্দম ভৌমিকের সঙ্গে। দাদুর কাছে শোনা গল্প শোনান তাকে। আবদার জানান, আত্মীয়দের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দিতে হবে। দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর অরিন্দমবাবু উদ্ধার করেন যে আসলে নিশ্চিন্তা গ্রামের জমিদার নাগ পরিবারের বর্তমান প্রজন্মের সদস্যরাই তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। তিনিই ফোনে যোগাযোগ করিয়ে দেন পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে। সেই যোগাযোগের সূত্র ধরেই বিভিন্ন দেশ থেকে থেকে জোটবদ্ধ হয়ে পরিবারের আটজন সদস্য অষ্টমীর দিন হাজির হন মেদিনীপুরে। তাঁরা অরিন্দমবাবুকে সঙ্গে নিয়ে নিশ্চিন্তা, পপরআড়া ও মেদিনীপুর শহরে গিয়ে তাঁদের আত্মীয়-পরিজনদের সঙ্গে দেখাসাক্ষাৎ করেন। আবেগে ভেসে যান পরিবারের সব সদস্যই।
নাম বা সংস্কৃতিতে ভারতীয় কোনও চিহ্ন পাওয়া যাবে না বর্তমান উত্তরাধিকারীদের মধ্যে। বিদেশে পরিবারের বংশবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ভারতীয় নাম ও ঘরানা লোপ পেয়েছে। কিন্তু ভিটেমাটির টান তাঁরা ছাড়তে পারেননি। তাই প্রায় ৭১ বছর পরে নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা থেকে মেদিনীপুরে এলেন নাগ পরিবারের সদস্যরা। তিনদিন ধরে সকলের সঙ্গে হইহুল্লোড়ের পাশাপাশি তাঁরা একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজও করেছেন। নিজেদের একটি বংশতালিকা তৈরি করে ফেলেছেন। অন্যরকম দিন কাটিয়ে বুধবারই তাঁরা রওনা দিয়েছেন নিজের নিজের দেশের উদ্দেশে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.