Advertisement
Advertisement

Breaking News

Durga puja

Durga Puja 2021: বাংলাদেশ সীমান্তে সম্প্রীতির বার্তা দেয় পানিতরের পুজো, জড়িয়ে বিভূতিভূষণের স্মৃতিও

বার্তা দেয়, ভারত-বাংলাদেশ দুই দেশের মেলবন্ধনেরও।

Durga puja of India Bangladesh border delivers message of Harmony | Sangbad Pratidin
Published by: Paramita Paul
  • Posted:October 13, 2021 4:04 pm
  • Updated:October 13, 2021 6:57 pm  

গোবিন্দ রায়: সীমান্ত-লাগোয়া গ্রামে পুজো মানেই ওপার বাংলা থেকে মানুষ আসা। এক সময়ে তো ওপার বাংলার মানুষ না এলে এদিককার যাত্রা, নাটক, গান কিছুই জমত না পুজোয় (Durga Puja 2021)। আবার কিছু কিছু পুজো আছে এক্কেবারে সীমান্ত লাগোয়া কাঁটাতার ঘেঁষা। যাতে দুই দেশের মানুষের সমান ভূমিকা রয়েছে। যেখানে আজও দুই দেশের মানুষের মেলবন্ধন চোখে পড়ার মতো। তেমনই কথাসাহিত্যিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্মৃতিবিজড়িত উত্তর ২৪ পরগনার ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের পানিতরের পুজো চারশো বছরের বেশি সময় ধরে আজও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বার্তা দেয়। বার্তা দেয়, ভারত-বাংলাদেশ দুই দেশের মেলবন্ধনেরও। পুজোর আয়োজন থেকে উন্মাদনা, সবেতেই হিন্দু-মুসলমান দুই সম্প্রদায়ের মানুষের মিলনের নজির সীমান্তবর্তী এই পুজোর অন্যতম ঐতিহ্য বহন করে চলেছে।

শোনা যায়, সাড়ে চারশো বছর আগে সীমান্তবর্তী ইটিন্ডার পানিতর গ্রামে এই পুজো শুরু হয়েছিল। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে পানিতর গ্রামে এই পুজো পরিচিত, কথাসাহিত্যিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রথম স্ত্রী গৌরীদেবী বাপের বাড়ির পুজো হিসাবেই। কেউ কেউ আবার বলেন পানিতরের ঘরের পুজো। বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের আদি বাসস্থান ছিল পানিতরে। বিভূতিভূষণের পিতামহ তারিণীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন কবিরাজ। কথাসাহিত্যিকের পিতা মহানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায়ের যখন ১২ বছর বয়স, তখন সপরিবার বসিরহাট ছেড়ে বনগাঁয় চলে যান বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পিতামহ তারিণীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন তাঁরা। তবে জন্মভিটে দেখার সুবাদে এবং বিষয়-সম্পত্তি দেখভালের জন্য মাঝেমধ্যেই পানিতরে চলে আসতেন কথাসাহিত্যিক বিভূতিভূষণকে সঙ্গে নিয়ে। সেখানে আসতেন বাবা মহানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানেই আলাপ হয় গৌরীদেবী সঙ্গে। পরে এখানেই থাকতে শুরু করেন বিভূতিভূষণ।

Advertisement

[আরও পড়ুন: Weather Update: মহাষ্টমীতে মেঘলা আকাশ, রাজ্যের ৭ জেলায় বিক্ষিপ্ত বৃষ্টির পূর্বাভাস]

তারপর বসিরহাটের মোক্তার কালীভূষণ মুখোপাধ্যায়ের কন্যা গৌরীদেবীর সঙ্গে বিয়ে হয় তাঁর। কিন্তু বিয়ের এক বছর পরই তৎকালীন সময়ে কলেরা বা ওলাওঠাতে মারা যান গৌরীদেবী। স্ত্রীর শোকে তিনি কিছুদিন প্রায় সন্ন্যাসীর মতো জীবনযাপন করেন। পরে সেখানে স্থায়ীভাবে থাকতে শুরু করেন বিভূতিভূষণ। বহু লেখার সাক্ষী ইছামতী নদী। পানিতরে থাকতেই তিনি ‘পথের পাঁচালী’, ‘ইচ্ছামতী’—র মতো বহু উপন্যাস লিখেছেন। তঁার উদ্যোগেই আবার শুরু হয় পানিতরের মুখোপাধ্যায় পরিবারের দুর্গাপুজো। সেই থেকেই সাড়ে চারশো বছরের ঐতিহ্যের সঙ্গে বিভূতিভূষণের স্মৃতি বিজড়িত বসিরহাটের এই পুজো। বর্তমানে এই পুজো পরিচালনা করার মতো পরিবারের আর কেউ নেই। স্থানীয়দের উদ্যোগেই ৪০০ বছরের প্রাচীন এই পুজো হয়ে আসছে। গ্রামের সব ধরনের মানুষকে নিয়ে শরিফুল গাজি, ফারুক বিল্লা, প্রলয় মুখোপাধ্যায়রা এই পুজো করেন। গৌরীদেবীর বাড়ির ঠাকুরদালানে আজও অধিষ্ঠান করেন সপরিবার দেবী দুর্গা।

এই পুজোর সম্পাদক প্রলয় মুখোপাধ্যায় ও সমাজসেবী শরিফুল মণ্ডল জানান, “পূর্বপুরুষদের কাছে শুনেছি বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বড় প্রিয় ছিল এই পুজো। এই পুজোয় গৌরীদেবীর সঙ্গে বিভূতিভূষণের অনেক স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে বলে জানা যায়। সময়কালে আজ এই পুজো সর্বজনীন হয়ে দাঁড়িয়েছে।” পুজোর চারদিন পাশেই ওপার বাংলার বহু এলাকা থেকে দর্শনার্থীরা এই পুজো দেখতে ভিড় জমান। গৌরীদেবী দালানকোঠায় ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে রয়েছে এই জমিদারবাড়ি। এবারও পুজোর পঞ্চমী থেকে সব সম্প্রদায়ের মানুষ মিলিত হয়ে একসঙ্গে প্রসাদ বিতরণ থেকে ভজুরাম অর্থাৎ খিচুড়িভোগ সবাই মিলিতভাবে এক জায়গায় বসে খেয়েছেন। দশমী পর্যন্ত এটাই রীতি। সব সম্প্রদায়ের কাছে পানিতরের গৌরীদেবী বাড়ির পুজো সম্প্রীতির এক অনন্য মেলবন্ধন। হিন্দু-মুসলিম সম্প্রদায়ের কাছে প্রতি বছর দেবী দুর্গার মহাপুজো এক আলাদা অনুভূতি।

[আরও পড়ুন: Durga Puja 2021: করোনার জেরে ভক্তশূন্য বেলুড় মঠ, মহাষ্টমীতে মঙ্গলারতির পর আয়োজন কুমারী পুজোর]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement