ছবি: বিশ্বজিৎ নস্কর।
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: শতাব্দী প্রাচীন বারুইপুরের এই পুজোয় (Durga Puja) এসেছিলেন স্বয়ং লর্ড ক্যানিং। বেশ কিছুক্ষণ সময়ও কাটিয়েছিলেন এখানে। শুধু ক্যানিং কেন, রামনগরে ঘোষ বাড়িতে গাড়ি রাখতে আসতেন বহু সাহেবরাই। পুজোতেও আমন্ত্রিত থাকতেন তাঁরা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জমিদার বাড়ির পলেস্তারা খসেছে। কমেছে জাঁকজমকও। তবে পুরনো রীতি মেনে আজও হয় বারুইপুরের রামনগরে ঘোষ বাড়ির দুর্গাপুজো। সময়ের চাহিদা মেনে বন্ধ হয়েছে ছাগ বলি। তবে এখনও জমিদারী ইতিহ্য মেনে আখ, চালকুমড়ো বলি হয়। আর তা দেখতে ভিড় জমান আশপাশের বহু মানুষ।
বারুইপুরের রামনগরে ঘোষ বাড়ির পুজো ৩০০ বছরের পুরনো। কালের নিয়মে এই ঘোষ বাড়ি থেকে বেশ কিছু পরিবার রামনগর বাজার সংলগ্ন একটি জঙ্গল কেটে সাফ করে তাঁরা বসতি স্থাপন করে। ১৪১ বছর ধরে সেখানে এই পুজো হয়ে আসছে। তৎকালীন বড়লাট লর্ড ক্যানিং ছিলেন জমিদার নরেন ঘোষের অতি ঘনিষ্ঠ। তাই ক্যানিং যাওয়ার পথে দুর্গাপুজোয় এসেছিলেন তিনি। পুজোয় কয়েক ঘন্টা সময়ও কাটিয়েছিলেন। অষ্টমীতে ঘোষ বাড়ির পুজোয় নিরামিষ ভোগ খেতেই ভিড় জমান গ্রামের লোকজন। এমনই বললেন পরিবারের প্রবীন সদস্য মলয় ঘোষ।
রামনগরের ঘোষ বাড়ির প্রথম জমিদার ছিলেন কৈলাস ঘোষ। তাঁর নামানুসারে বাড়ির নাম ‘কৈলাস ভবন’। কৈলাসবাবুর ছেলে নরেন ঘোষ ইংরেজ আমলে ঘোষ বাড়িতে দুর্গাপুজো শুরু করেন। বাড়ির দুর্গা দালানে এখন চলছে প্রতিমা তৈরির জোর প্রস্তুতি। কয়েকদিন পরেই সাজ সাজ রব পড়ে যাবে জমিদার বাড়িতে। কলকাতা-সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছেন ঘোষ পরিবারের সদস্যরা। সবাই পুজোর কয়েকদিন মিলিত হন ঘোষ বাড়ির দুর্গা দালানে।
প্রবীন সদস্য মলয় ঘোষ বলেন, “ইংরেজ আমলে বারুইপুর থেকে ক্যানিং যাওয়ার রাস্তা ছিল মাটির। তাই ক্যানিং যাওয়ার সময় বড়লাট লর্ড ক্যানিং তাঁর ফিয়ট গাড়িটি বাড়ির পিছনে রেখে দিয়ে ঘোড়ার গাড়িতে ক্যানিং যেতেন। পূর্বপুরুষ নরেন ঘোষের ঘনিষ্ঠ হওয়ায় দুর্গাপুজোয় তিনি বাড়িতে এসে পুজো দেখেও ছিলেন। এছাড়া প্রায় সময়েই ইংরেজ সাহেবরা তাঁদের গাড়ি রাখার জন্য প্রায় আসতেন বাড়িতে।”
আগে ষষ্ঠীর দিন রাঁধুনি সোনা ঠাকুরের কচু, দেশি চিংড়ির ঝোল খেতে প্রচুর মানুষের সমাগম হত। অষ্টমীর দিন এখনও নিরামিষ লুচি, ফুলকপির ডালনা খেতে গ্রামের মানুষজন আসেন। তবে সেই সংখ্যা কিছুটা কমেছে। সপ্তমী থেকে দশমী চালকুমড়ো বলি হয়। সন্ধিপুজো দেখতে আশপাশের গ্রামের মহিলারা জড়ো হন। পরিবারের আর এক সদস্য প্রিয়জিত সেন বলেন, “বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা মতে, আমাদের পুজো হয়ে আসছে। জমিদারি প্রথার রীতি মেনেই বিসর্জনের দিন কাঁধে করেই ঢাক-ঢোল বাজিয়ে মাকে নিয়ে যাওয়া হয় বাড়ির পুকুরে। সেই পুকুর হেঁদুয়ার পুকুর বলে এলাকায় পরিচিত। এই পুকুরেই ইংরেজ সাহেবরাও স্নান করতে আসতেন।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.