Advertisement
Advertisement

Breaking News

Durga Puja In Village

Durga Puja In Village: পুজোর সময়ই হারিয়েছিলেন বাবাকে, শোক ভুলে আজও নাটুয়া নাচে মাতেন পুরুলিয়ার শিল্পী

পুজো আর আনন্দ নিয়ে আসে না ওই পরিবারে।

Durga Puja In Village: Tragic story of a Natua dancer who lost his father at the time of puja । Sangbad Pratidin
Published by: Sayani Sen
  • Posted:October 21, 2023 4:12 pm
  • Updated:October 24, 2023 8:56 am  

সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: পুজো মানেই ওদের যেন মনখারাপ। মহানবমী এলেই মনটা যেন আরও খাঁ খাঁ করে ওঠে। তবুও দাঁতে দাঁত চেপে তারা পুজো মণ্ডপে ঢাক বাজান। শিব-দুর্গার নাটুয়া নাচ নাচেন। বছর দু’য়েক আগে মহানবমীর সকালে শোক নেমে এসেছিল পুরুলিয়ার বলরামপুরের পাঁড়দ্দা গ্রামে। মৃত্যু হয় নাটুয়া সম্রাট, ঢাকি হাড়িরাম কালিন্দি। দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতালে মৃত্যু হয় তাঁর। তাই পুজো আর আনন্দ নিয়ে আসে না ওই পরিবারে। তবুও পেটের টানে গ্রামে থাকা বাবার মূর্তিতে মাথা ঠেকিয়ে ছেলেদের ঢাক নিয়ে মণ্ডপে যেতে হয়। উদাস মনে বাবার স্মৃতিতেই নাটুয়া নাচতে হয় গ্রামে।

বাবার মতোই পেটানো চেহারা। ঝাঁকড়া-ঝাঁকড়া চুল। বাবা যেমন কাঁধ ঝাঁকিয়ে নাটুয়া নাচতেন। তেমনই মেজো ছেলে কম্পাউন্ডও কাঁধ ঝাঁকিয়ে ঢাক বাজান। ডান কাঁধে থাকা ঢাক শূন্যে পাক খাইয়ে বাঁ কাঁধে। কখনও আবার দাঁতে কামড়েই ঘোরাতে থাকেন ঢাক। নাটুয়া শিল্পে ঠিক বাবার মতই আগুন নিয়ে খেলা দেখান। দাঁতে জোয়াল, ঢেঁকি, সিঁড়ি তুলে ফেলেন। বাবা হাড়িরাম কালিন্দির কাজ থেকেই যে
তার ছেলেদের হাতে খড়ি। মেজো ছেলে কম্পাউন্ড ছাড়াও বড় ছেলে প্রহ্লাদ, ছোট গুরুপদ এবং তাদের ছেলেরাও নাটুয়া নাচেন। প্রায় পাঁচ পুরুষ ধরে এই নাটুয়া নাচকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন কম্পাউন্ড, গুরুপদরা।

Advertisement

আর সেই ঐতিহ্য ধরে রাখতেই কম্পাউন্ড ও গুরুপদ-র একমাত্র ছেলে যথাক্রমে সপ্তম শ্রেণীতে পড়া অর্জুন কালিন্দী, শিশু শ্রেণীতে পাঠরত অভিমুন্যও হর-পার্বতীর এই নাচ নাচেন। বর্তমানে তাদের নাটুয়া দলের নাম পাঁড়দ্দা হরিজন স্বর্গীয় হাড়িরাম কালিন্দী নাটুয়া নৃত্য। মেজো ছেলে কম্পাউন্ডের কথায়, “পুজোর দিনগুলো এখন খুব কষ্টে কাটে। এই পুজোর সময়ই তো বাবা আমাদেরকে ছেড়ে চলে গিয়েছেন। বছর দুয়েক আগে মহানবমীর সকালটা….।” চোখে জল চলে আসে ছেলে-বউমাদের। কথা আর শেষ করতে পারেন না কম্পাউন্ড। ছোট ছেলে গুরুপদ বলেন, “সেই ছোটবেলা থেকে বাবা পুজোর দিনগুলোতে ঢাক বাজিয়ে, নাটুয়া নেচে এসে আমাদের জন্য নতুন জামাকাপড়, মন্ডা-মিঠাই কত কি নিয়ে আসতেন। ওই সময় গুলো খুব আনন্দের ছিল। পুজোর সময় সেভাবে জামাকাপড় না হলেও দশমীর সন্ধে পর্যন্ত নতুন জামা, নানা খাবারে ঘর ভর্তি হয়ে যেত।”

[আরও পড়ুন: অন্য দশভূজা! ক্যানিংয়ে জমজমাট কালো দুর্গার পুজো]

সাবেক মানভূমের প্রায় ৬০০-৭০০ বছরের প্রাচীন, পৌরুষদীপ্ত নাচ এই নাটুয়া। পৌরাণিক কাহিনি মতে, নাটুয়া নাচের উৎপত্তি শিবের সঙ্গে দুর্গার বিয়ের সময় থেকে। বলা যায় শিবের নাচ বা শাস্ত্রীয় নটরাজ নৃত্যে যে মুদ্রার ব্যবহার হয়ে আসছে তার এই উৎপত্তি নাটুয়া নাচ থেকেই। প্রয়াত শিল্পী হাঁড়িরাম কালিন্দি বলতেন, “নাটুয়া নাচের উৎপত্তির মূলে রয়েছে নটরাজ শিব। তবে শিবের সঙ্গে তাঁর ঘরনি পার্বতী নাটুয়া সৃষ্টিতে সমান সৃষ্টিশীল ছিলেন। নাটুয়ার সৃষ্টিকর্তা স্বয়ং হর-পার্বতী।” এই শিল্প কলায় ঢাকি, ধামসা, সানাই, ঝুনঝুনি, তাসার মতো বাদ্যযন্ত্র থাকে। শিল্পীরা গায়ে খড়ি মাটি মাখেন। কপালে পড়েন টিপ। শরীর জুড়ে থাকে ফিতে, তাগা, কোমরবন্ধ, মাথায় ময়ূর পুচ্ছ। শাড়ি পড়েন একেবারে ধুতির মত করে।

ক্রমশ হারিয়ে যেতে থাকা এই শিল্প হাড়িরাম কালিন্দি তার বাবা লেড়হু কালিন্দির কাছ থেকে এই শিল্পকলায় হাত পাকান। শুধুমাত্র শিল্পকলাকে ভালোবেসে পুলিশের চাকরি ছেড়ে দিয়ে অভাব-অনটনের মধ্যে নাটুয়াকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। দেশ-বিদেশে এই শিল্পকলাকে তুলে ধরেছিলেন। সেই ধারা বজায় রেখেই বাবার মত-ই কাঁধ ঝাঁকিয়ে শিব-দুর্গার নাচ নেচে যাচ্ছেন কম্পাউন্ড, গুরুপদরা। বাংলাদেশ, সিঙ্গাপুর, প্যারিসের মঞ্চও কাঁপিয়েছেন। তবে এবার পুজোয় নাটুয়ার বরাত না মিললেও ঢাক বাজাতে বরাবাজারের মণ্ডপে পৌঁছে গিয়েছেন তারা। কিন্তু পুজো শেষে নতুন পোশাক, মন্ডা-মিঠাই নিয়ে মুখের সামনে আর কেউ আসবে না। গোঁফওয়ালা বাবার মুখটা ভেসে উঠতেই ঢাকে যেন কাঠিটা আর পড়তে চায় না। নাটুয়ার তাল যেন বেতাল হয়ে যায়।
দেখুন ভিডিও:

[আরও পড়ুন: দশমী থেকে প্রবল দুর্যোগের আশঙ্কা, মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যেতে নিষেধাজ্ঞা]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement