সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: নিজের হাতে দুর্গা গড়ে পুজোর আয়োজন করেন চিকিৎসক। যে দুহাতে স্টেথোস্কোপ দিয়ে রুগ্ন নবজাতকের স্বাস্থ্যপরীক্ষা করেন, সেই হাতেই মায়ের মূর্তি গড়ছেন পুরুলিয়ার দেবেন মাহাতো গভর্নমেন্ট মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের মেডিক্যাল অফিসার অনুপম ধর। রঙ-তুলি নিয়ে মায়ের চক্ষুদান করেন। সেই ২০১৬ সাল থেকে নিজের পারিবারিক পুজোয় মায়ের মূর্তি গড়ে আসছেন তিনি। মায়ের শাড়ি, গয়নাগাটি সবই তিনি নিজের হাতে কেনেন। প্রয়োজনে কুমোরটুলিতেও যেতে হয়।
দেবেন মাহাতো গভর্নমেন্ট মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের সিক নিউবর্ন ইউনিটে কর্মরত তিনি। স্ত্রীরোগ নিয়ে লেখাপড়া শুরুর মুখে। ২০১৭ থেকে এই হাসপাতালে কর্মরত। এই হাসপাতালেই তাঁর প্রথম পোস্টিং। চিকিৎসকের মত বড় দায়িত্ব পালন করার মাঝেই যখন ছুটিতে বাড়ি যান তখন প্রতিমা গড়ার কাজে নিজেকে সঁপে দেন। তাছাড়া যে সময় পাওয়া ভীষণ মুশকিল। উত্তর চব্বিশ পরগনার বারাসাতের নবপল্লির বাসিন্দা এই চিকিৎসক প্রতিমা তৈরির কাজ শুরু করেন সেই রথযাত্রা থেকে। ফলে মহালয়ার আগেই সাত ফুটের প্রতিমা গড়ার কাজ প্রায় শেষ করে ফেলেছেন। বেনারসী শাড়িতে মৃন্ময়ী থেকে চিন্ময়ীর রূপ দিয়েছেন। শুধু ফিনিশিং টাচটুকুই বাকি। চিকিৎসকের কথায়, “আমি কিন্তু শিল্পী নই। ভালোবেসে প্রতিমা তৈরি করে পুজোর বন্দোবস্ত করি। মাটি দিয়ে কীভাবে মূর্তি গড়া হয় সেই কাজ এখনও আমি শিখছি।”
দেখুন ভিডিও:
চিকিৎসকের এই শেখার কাজ শুরু হয়েছিল সেই ছেলেবেলাতেই। স্কুল থেকে ফেরার পথে প্রতিমা গড়ার কাজ দেখতেন মেডিক্যাল অফিসার। তখন থেকেই কাদা-মাটি নিয়ে নাড়াচাড়া। এভাবে ধীরে ধীরে নানা দেবদেবীর মূর্তির মুখ ফুটিয়ে তুলতে শুরু করেন। সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময় বাড়ির কালীপ্রতিমা গড়েন। তখন থেকে সেই কালীপ্রতিমাতে তাঁর বাড়ির পুজো হয়ে আসছে।
চিনের সাউদার্ন মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সময় জুন মাসে বাড়ি আসতেন। সেই সময় তিনি কালীমূর্তি গড়ে দিতেন। তাতেই পুজো হত। তাদের এই পারিবারিক দুর্গাপুজো এবার কত বছরে পড়ল, ঠিক কবে শুরু হয়েছিল তার সঠিক তথ্য নেই। প্রথমে মূর্তি গড়েই পুজো হত। কিন্তু তারপর প্রায় ৫০ বছরের বেশি সময় ঘটে পুজো হওয়ার পর ২০১৬ সালে এই চিকিৎসকের গড়া মূর্তি দিয়েই পুজো হয়ে আসছে। ২০১৮ সালে চিকিৎসকের বাবার মৃত্যুর পরের বছর ২০১৯ ছাড়া ২০১৬ থেকে তিনি টানা বাড়ির দুর্গা গড়ছেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.