অর্ণব দাস, বারাসত: বছরের অন্যান্য সময় কেউ বিড়ি বাঁধেন, কেউ সেলাইয়ের কাজ করেন, কেউ বা পাট ছাড়ানোর কাজ করেন। কিন্তু এই কাজের মধ্যেও তাঁদের মন পড়ে থাকে উমার আগমনে ঢাকের বোল তোলার জন্য। কারণ, এই সময়ে মোটা উপার্জন হয়। কিন্তু এবছর আর জি কর কাণ্ডের জেরে উৎসবে ভাটা পড়েছে। একের পর এক অনুষ্ঠান বাতিল হচ্ছে তাঁদের। তাই তরুণী চিকিৎসকের ন্যায়বিচার চাওয়ার পাশাপাশি উৎসবে ফেরার আহ্বান জানাচ্ছেন অশোকনগর কয়াডাঙার মহিলা ঢাকিরা। এঁদের সংখ্যা কমবেশি ৭০জন। এছাড়াও পুজোর মরশুমে অন্যান্য সাজের কাজে যুক্ত থাকেন আরও ২০-২৫জন মহিলা। সবমিলিয়ে মহিলাদের সংখ্যা প্রায় ১০০জন।
প্রতি বছর কলকাতা-সহ উত্তরবঙ্গ, রাজ্যের একাধিক জেলা ছাড়িয়ে দিল্লি, গুরগাঁও, মুম্বাইয়ের মতো ভিনরাজেও তাঁদের অনুষ্ঠানের বুকিং থাকে। কিন্তু এবছর দুর্গোৎসবের আগে আগস্ট মাসে ৯ তারিখ কলকাতার বুকে ঘটে গিয়েছে নারকীয় ঘটনা। আর জি করে কর্মরত অবস্থায় ধর্ষণের পর খুন করা হয়েছে তরুণী চিকিৎসককে। তাঁর বিচারের দাবিতে ‘রাত দখল’ করেছেন মেয়েরা। কর্মবিরতি করে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন জুনিয়র ডাক্তাররা। প্রায় প্রতিদিনই পথে নেমে প্রতিবাদ করছেন আমজনতা। রাজ্য ছাড়িয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এমনকি বিদেশেও আছড়ে পড়েছে প্রতিবাদের ঢেউ।
এমন আবহে অনেকেরই উৎসবে ফেরার মন নেই। পুজোয় সরকারি অনুদানও ফিরিয়েছে অনেক ক্লাব। ফলে ভাটা পড়েছে বাঙালির সেরা উৎসবে। এই উৎসবের উপরই আবার অনেকের অর্থনীতি নির্ভরশীল। অশোকনগর কল্যানগড় পুরসভার ৩নম্বর ওয়ার্ডের কয়াডাঙা নাট্যপাড়ার মহিলা ঢাকিরাও তাদের মধ্যে অন্যতম। কিন্তু অন্যান্য বারের তুলনায় এবার তাঁদের হাতে কাজ একেবারেই নগন্য। এ বিষয়ে মহিলা ঢাকিদের প্রশিক্ষক তথা সংগঠক সজল নন্দী বলেন, ”১৪-১৫টি অনুষ্ঠান বাতিল হওয়ায় মহিলা ঢাকিদের করুণ অবস্থা। আমরা চাই, আর জি কর কাণ্ডের ন্যায়বিচার হোক, পাশাপাশি মানুষ উৎসবে (Durga Puja 2024) ফিরুক। আন্দোলনরত চিকিৎসকরাও কাজে ফিরুক। তাহলে রোগীও বাঁচবে, এই মহিলা ঢাকিরাও কিছু উপার্জন করতে পারবে।”
মহিলা ঢাকি গীতা গোলদারের বক্তব্য, ”এমনি সময়ে বিড়ি বাঁধি। মনসা পুজোর সময় থেকে আমাদের কাজ শুরু হয়। কিন্তু হাতে কাজ নেই, বিশ্বকর্মা পুজোতেও কাজ পাইনি। মহিলা হিসাবে তরুণী চিকিৎসক খুন ও ধর্ষণে জড়িতদের শাস্তির দাবি করব। পাশাপাশি উৎসবে ফেরারও আহ্বান করব। নাহলে আমাদের পেট চলবে না।” আরেক মহিলা ঢাকি করুণা পালের কথায়, ”বাড়িতে ছেলে আছে। পরিবার আমার উপার্জনের উপর নির্ভরশীল। এমনি সময়ে সেলাইয়ের কাজ করি। কিন্তু দুর্গাপুজোয় ঢাক বাজানোর কাজই আমাদের মূল ভরসা। তাই ন্যায়বিচার চাওয়ার পাশাপাশি সকলকে উৎসবে ফেরার আহ্বান করব।” হেমা বৈদ্য, মিনা কমিরাজরা সকলেই একবাক্যে বলছেন, বিচার চান। সঙ্গে তাঁদেরও কাজের সংস্থান হোক, তাও চান। ঢাকির কাজে যে উপার্জনটা একটু বেশি। সারাবছরের কষ্টের ভার লাঘব হয়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.