Advertisement
Advertisement
Gramer Durga Puja

স্বপ্নের দেবী আদিবাসী দুর্গা! মূর্তিপূজার নিষেধাজ্ঞা উড়িয়ে উমাবরণ হেমব্রম পরিবারে

স্বপ্নে আদিবাসী ঘরে এসেছিলেন দুর্গা, তাই সমাজের হুমকি উপেক্ষা করে ২১ বছর ধরে হিড়বাঁধের পরিবারে দুর্গাপুজো হয়।

Gramer Durga Puja: Tribal family celebrates Durga Puja avoiding all social barriers of the society
Published by: Sucheta Sengupta
  • Posted:October 8, 2024 5:10 pm
  • Updated:October 8, 2024 5:50 pm  

দেবব্রত দাস, হিড়বাঁধ: মূর্তি পুজো যেখানে নিষিদ্ধ, সেই আদিবাসী বাড়িতেই দেবী দুর্গার পুজো! স্বপ্নের দেবী বেড়া ডিঙিয়েছেন সামাজিক বিধিনিষেধের। আদিবাসী বাড়িতেই চলছে দেবীর অকাল বোধন। শুধু এ বছর নয়। ২১ বছর আগে থেকেই দুর্গাপুজো করে আসছেন বাঁকুড়ার হিড়বাঁধ ব্লকের দোমোহনি গ্রামের প্রয়াত সুবল হেমব্রমের পরিবার। এবার সেই পুজো ২২ বছরে পা দিল। আদিবাসী অধ্যুষিত হিড়বাঁধ ব্লকের দোমোহনি গ্রাম। ৩০টি পরিবারের বসবাস। গ্রামের প্রয়াত সুবল হেমব্রমের বাড়িতে দুর্গা প্রতিমার পুজো(Gramer Durga Puja) হচ্ছে। অনেকের বাড়িতেই এই প্রতিমা পুজো হয়। যা বেশ বিস্ময়কর!

আদিবাসী সম্প্রদায়ভুক্ত গৌরচন্দ্র হেমব্রমের পরিবারে এই দুর্গাপুজোর প্রচলনের ইতিহাসটা একটু অন্যরকম। এদিন দোমোহনি গ্রামের শেষপ্রান্তে টিনের ছাউনি দেওয়া গৌরচন্দ্র হেমব্রমের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল দেবীমূর্তি আয়োজনের প্রস্তুতি। বাড়ির উঠোনে বাঁশ কাঠের অস্থায়ী কাঠামো। তার উপরে সাদা ত্রিপলের আচ্ছাদন। সেখানেই দেবীর পুজোর আয়োজন চলছে। কেন এই পুজোর আয়োজন? প্রয়াত সুবলবাবুর মেজ ছেলে পেশায় শিক্ষক গৌরচন্দ্র হেমব্রম বলেন, “অনেকদিন আগে স্বপ্নে দেবীমূর্তির দর্শন পেয়েছিলেন বাবা ও আমাদের গুরুমা সরস্বতী হাঁসদা। বাড়ির লোকজনের সঙ্গে আলোচনা করে দেবীর মূর্তি পুজো করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন আমার বাবা ও গুরুমা।” তিনি জানান, তবে সেই সময়ে এই পুজো করার সিদ্ধান্ত এত সহজে মেনে নিতে চাননি মূর্তি পুজোর বিরোধী আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষজন। গ্রামের কিছু মানুষ প্রথম বছরেই বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু তাঁদের সেই বাধাকে উড়িয়ে দিয়ে নিজেদের সিদ্ধান্তে অটল থেকে মূর্তি পুজো চালু করেছিলেন প্রয়াত সুবলবাবু।

Advertisement

তাঁর তিন ছেলে। বড় ছেলে সহদেব হেমব্রম আধা সামরিক বাহিনীর প্রাক্তন জওয়ান। মেজ ছেলে গৌরচন্দ্র হেমব্রম পেশায় হাইস্কুলের শিক্ষক। ছোট ছেলে রবিলোচন বাড়িতে চাষবাসের কাজ করেন। সুবলবাবুর স্ত্রী আহ্লাদীদেবী বললেন, “আমরা স্বপ্নাদেশ পেয়ে যে এই পুজোর আয়োজন করছি, তা সকলকে জানিয়েছিলাম। তা সত্ত্বেও কিছু লোক আমাদের এই পুজোর বিরোধিতা করে বন্ধ করার হুমকিও দিয়েছিল। কিন্তু এটা যে অন্যায় নয়, তা জানিয়ে আমরা পুজো করছি।”

কেমন হয় এই আদিবাসী বাড়ির পুজো? এক কাঠামোয় সিংহ, অসুর-সহ দেবী দুর্গা। অন্য পাটায় কার্তিক, গণেশ, লক্ষী, সরস্বতী। দেবী মূর্তি গড়েন আদিবাসী সম্প্রদায়ের এক শিল্পী। সম্পূর্ণ সাঁওতালি রীতিনীতি মেনেই পুজোর আনুষঙ্গিক কাজ হয়। নিয়ম মেনে সপ্তমীর সকালে গ্রামের এক পুকুর থেকে নবপত্রিকা সহযোগে ঘট আনা হয়। দেবী নিরামিষভোজী। অষ্টমীতে সন্ধিপুজো হলেও কোনও বলি হয় না। তবে এই পুজোর পুরোহিত কোনও ব্রাহ্মণ নন। সুবলবাবুর শ্যালকের স্ত্রী সরস্বতী হাঁসদা মন্ত্র পড়ে দেবীর পুজো করেন। আদিবাসীদের সমস্ত দেবদেবীর পুজোর পরে এই প্রতিমা মূর্তির পুজো করা হয়। দেবী মূর্তির সামনে অষ্টমীর বিকেল থেকে দশমী পর্যন্ত ভুয়াং, করম, দাঁশায় সহ নাচ-গানের আসর বসে।

একাদশীর সন্ধ্যায় গ্রামেরই পুকুরে প্রতিমা নিরঞ্জন করা হয়। এই পুজোর পুরোহিত সরস্বতী হাঁসদা বলেন, “স্বপ্নে দেবী দর্শন আমিও পেয়েছিলাম। সুবলবাবুও পেয়েছিলেন। তার পরেই এই প্রতিমা মূর্তির পুজো শুরু করা হয়েছিল। মন্ত্রপাঠ থেকে পুজো সবই আমি করি।” ব্যতিক্রমী আদিবাসী বাড়ির এই পুজো। আদিবাসী বাড়ির এই পুজোয় তেমন জৌলুস নেই। তবে দোমোহনির হেমব্রম বাড়ির পুজো বঙ্গে ব্যতিক্রম বইকি। দেবী দুর্গা সামাজিক বিধিনিষেধের বেড়া ডিঙিয়ে প্রকৃত অর্থেই সর্বজনীন হয়ে উঠেছে।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement