Advertisement
Advertisement
Bonedi Barir Durga Puja 2024

অষ্টমীতে তিনবার বন্দুক দাগা হয় এখনও, রীতিতে ভরপুর ডোমকলের সান্যাল বাড়ির পুজো

১৫৭ বছরের পুরনো পারিবারিক পুজোয় নিয়মের অনেক পরিবর্তন হয়েছে। অষ্টমীর দিন বলির সময় নিজেদের লাইসেন্সধারী বন্দুক থেকে তিনবার বন্দুক দাগার নিয়মের বদল হয়নি সান্যালবাড়ির দুর্গাপুজোয়।

Bonedi Barir Durga Puja 2024: Tradition maintained in Sanyal family's puja at Domkal
Published by: Sucheta Sengupta
  • Posted:September 23, 2024 4:55 pm
  • Updated:September 23, 2024 5:28 pm  

অতুলচন্দ্র নাগ, ডোমকল: পুজো তো নয়, যেন আত্মীয়দের মিলনক্ষেত্র। আর সেই টানেই প্রতি বছর দুর্গাপুজোর অপেক্ষায় থাকেন ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে কর্মসূত্রে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ডোমকলের ভাতশালার সান্যালবাড়ির আত্মীয় পরিজনেরা। প্রায় ১৫৭ বছরের পুরনো দুর্গাপুজো তাঁদের। যার পরতে পরতে ইতিহাস, নিয়মানুবর্তিতা পালনের নিদর্শন, রীতির ঘনঘটা। তবে তাতে একেবারেই যে কিছু পরিবর্তন হয়নি, তাও নয়। মূর্তি তৈরি থেকে বলি – বদলেছে অনেক কিছুই। তবু যা আছে, সেটা হল খাঁটি ইতিহাস আর ঐতিহ্য।

ডোমকলের এই সান্যাল পরিবারের সদস্য বারাসত নিবাসী মাধব কুমার সান্যাল। তিনি জানাচ্ছেন, “তখন আমরা কলকাতায় থাকতাম। কলকাতার আধুনিক প্রতিমা দেখতে দেখতে নাগের বাজারের বাসিন্দা প্রয়াত চিকিৎসক বাড়ির সেজো ছেলে সাধন কুমার সান্যালের মনে হয়েছিল, আমাদের বাড়ির পুজোতেও একটু পরিবর্তন হওয়া দরকার। তা সে ত্রিশ-পঁয়ত্রিশ বছর আগের ঘটনা। তখন বাবার সঙ্গে আলোচনা করে কুমারটুলি থেকে শিল্পী রাখাল পালকে নিয়ে গিয়ে বাড়িতেই মন্দিরে প্রতিমা তৈরীর কাজ শুরু হয়।” সেই যে নতুন ট্র্যাডিশান শুরু হল, এখনও তা বজায় আছে। তবে এখন রাখাল পাল নয়, কুমারটুলিরই অজয় কর্মকার তৈরি করেন ওই পুজোর প্রতিমা।

Advertisement

১৫৭ বছরের পুরনো পারিবারিক পুজোয় (Bonedi Barir Durga Puja 2024) নিয়মের অনেক পরিবর্তন হয়েছে। অষ্টমীর দিন বলির সময় নিজেদের লাইসেন্সধারী বন্দুক থেকে তিনবার বন্দুক দাগার নিয়মের বদল হয়নি সান্যালবাড়ির দুর্গাপুজোয়। ১৫৭ বছর আগে ব্রিটিশ ভারতে এই পুজোর সূচনা হয়েছিল নদিয়ার শিকারপুরে। মায়ের পুজোয় ছাগ বলি দেওয়ার প্রথা চালু ছিল। পুজোর শুরুও হয়েছিল প্রজাদের কল্যাণ ও স্বদেশিদের সংঘবদ্ধ হওয়ার শপথ নেওয়ার জন্য। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে শিকারপুরের পাততাড়ি গুটিয়ে জমিদার বাড়ি উঠে আসে ডোমকলের ভাতশালায়। তুলে নিয়ে আসা হয় মায়ের পুজোর কাঠামো। আর ভাতশালার বাড়ির পুজোর শুরু থেকেই অষ্টমীতে ছাগ বলির রীতি তুলে দেওয়া হয়। পরিবর্তে দেওয়া হয় কুমড়ো বলি। কিন্তু একই রয়ে গিয়েছে বন্দুক দাগার নিয়মটা। সান্যাল বাড়ির বর্ষীয়ান সদস্য কলকাতা হাই কোর্টের অ্যাডভোকেট মাধবকুমার সান্যাল জানান, “আমাদের পারিবারিক পুজোর পরতে পরতে নিয়ম নিষ্ঠার রীতি রয়েছে। যা পালনের মধ্য দিয়ে পুজো সম্পন্ন হয়। সান্যাল বাড়ির দুর্গাপুজো শুধু পুজো নয়, এই বাড়ির পুজো মানে ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রান্তে কর্মসূত্রে ছিটিয়ে থাকা আত্মীয় বন্ধু ও স্বজনদের একত্রিত হওয়া।”

সান্যাল বাড়ির পুজোর শুরু থেকে বংশের কারও চণ্ডীপাঠ করা নিয়ম। একসময় নিয়মিতভাবে চণ্ডীপাঠ করতেন জমিদার সুধীরকুমার সান্যাল। তাঁর আগে পড়তেন অন্য কেউ। সময়ের পরিবর্তনে পরবর্তিত হয়ে বর্তমানে চণ্ডীপাঠ করেন মণীন্দ্রকুমার সান্যালের মেয়ে কলকাতা নিবাসী শিক্ষিকা বন্দনা সান্যাল ঠাকুর। আর তাই প্রতি বছর বাবার বাড়ির পুজোয় চণ্ডীপাঠের টানে তিনিও মা দুর্গার মতো ছেলেমেয়েদের নিয়ে ভাতশালার বাড়িতে আসেন। পুজোর কটা দিন বাবার বাড়িতে কাটিয়ে বিসর্জনের পর তিনিও বাড়ি ফিরে যান।

জানা গিয়েছে, এখন সান্যাল বাড়িতে নতুন প্রজন্মের অনেক সদস্য হয়েছেন। তাছাড়া বাড়িতে নাচগানের সংস্কৃতির চর্চাও আছে। তাই পুজোর কটা দিন সন্ধ্যাবেলায় বাড়ির সদস্যদের নিয়ে সেখানে ঘরোয়া সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও হয়ে থাকে। এবারেও সান্যাল বাড়ির নতুন প্রজন্মের সদস্যরা হইচই করবেন। তবে এবার সান্যাল বাড়ির অষ্টমীর সন্ধ্যায় মণ্ডপ চত্বরে নতুন অনুষ্ঠান যোগ হচ্ছে নদিয়ার বগুলা থেকে আসা পুতুল নাচ।

পুজোর সূচনা পর্বে মুসলিমরাও ওই পুজোয় সহযোগিতা করেছেন বলে জানান বাড়ির ছোট ছেলে মানিক সান্যাল। তখন পুজো প্রাঙ্গনে যাত্রাপালা অনুষ্ঠিত হতো। হতো নরনারায়ণ ভোজ। এখন জমিদারি নেই। নেই প্রজারাও। তার পরেও নিয়ম রক্ষায় এখনও অষ্টমীর দিন নরনারায়ণ ভোজ হয়। যার টানে এখনও প্রচুর মানুষ সমবেত হন ওই পুজো প্রাঙ্গনে।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement