সুরজিৎ দেব, ডায়মন্ড হারবার: মাত্র দুই ইঞ্চিরও কম উচ্চতার দেবী দুর্গা! তৈরি করতে খরচ পড়েছে মাত্র ৫০ টাকা। অবাক হচ্ছেন? কিন্তু এটাই খাঁটি সত্যি। পেন্সিলের সিসে অবয়ব পেয়েছেন দশভুজা। দেবীর পুত্র-কন্যারাও রূপ পেয়েছে পেন্সিলের সিস দিয়ে। গঙ্গাসাগরের বছর পঞ্চাশের শিল্পী দেবতোষ দাসের নিপুণ হাতের ছোঁয়ায় রূপ পেয়েছে এক অপরূপ শিল্পকর্ম। এবার গঙ্গাসাগরের শ্রীধাম সর্বজনীন দুর্গোৎসব সমিতির পুজোয়(Durga Puja 2024) দর্শনার্থীদের বিশেষ আকর্ষণ এমনই এক অসাধারণ দুর্গাপ্রতিমা।
শিল্পী হিসেবে গঙ্গাসাগর এলাকায় যথেষ্ট পরিচিতি রয়েছে দেবতোষের। মূলত: বালি দিয়ে সমুদ্রসৈকতে মূর্তি গড়েন দেবতোষ। কিন্তু সমুদ্রের ঢেউয়ে মুহূর্তেই বিলীন হয়ে যায় তাঁর সেই শিল্পকর্ম। তখন থেকেই ভাবনা নতুন কিছু শিল্প গড়ার যা থেকে যাবে অনন্তকাল। সেই ভাবনা থেকেই শিল্পী সৃষ্টি করেছেন একের পর এক অপরূপ সব শিল্পকর্ম। যা থেকে যাবে দিনের পর দিন দর্শকের চোখের সামনেই।
দেবতোষের নতুন শিল্পসৃষ্টি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র এক দুর্গাপ্রতিমা। উচ্চতায় মাত্র ২ ইঞ্চি কি তার থেকেও কম। কাঠপেন্সিলের সিস দিয়ে তৈরি করেছেন অসাধারণ এক দুর্গামূর্তি। শুধু দুর্গামূর্তিই নয়, লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক, গণেশ সকল দেব-দেবীর মূর্তিই দেবতোষের হাতের ছোঁয়ায় যে কোনও মাটির প্রতিমা শিল্পীকে যেন হার মানায়। অসাধারণ সেই শিল্পকর্ম আতসকাচে ফেলে দর্শনার্থীদের জন্য এবার পুজোয় দর্শনের ব্যবস্থা করেছে গঙ্গাসাগরের শ্রীধাম সার্বজনীন। ওই পুজো কমিটির ৪৮ তম বর্ষে এবারের বিশেষ আকর্ষণ ২৫ টি দুর্গামূর্তির সঙ্গে দেবতোষের পেন্সিলের সিসে তৈরি দুই ইঞ্চির কম দৈর্ঘ্যের দেবী উমা ও তাঁর গোটা পরিবার।
শিল্পী জানান, দুর্গা প্রতিমাটি তৈরি করতে তাঁর সময় লেগেছে গোটা তিনটে দিন। বাকি দেবদেবীর মূর্তি সম্পূর্ণ করতে লাগবে আরও কয়েকটা দিন। এই মূর্তি বানাতে তাঁর খরচ হয়েছে মাত্র ৫০ টাকা। দুটি এইচবি, একটি সিক্স বি ও একটি টেন বি – মোট চারটি লেড পেন্সিলের সিস দিয়ে প্রতিমা বানানোর কাজ করছেন তিনি। শিল্পী বলেন, প্রায়ই নতুন নতুন জিনিস এমনকি ফেলে দেওয়া সামগ্রী দিয়ে সৃষ্টি করেন নতুন নতুন শিল্পকাজ। এটা তাঁর পেশা নয়, বরং নেশা। তাঁর সৃষ্ট শিল্প দর্শন করে দর্শনার্থীরা আনন্দিত হলে শিল্পীমনে বয়ে যায় এক অদ্ভুত শিহরণ। আরও যেন নতুন নতুন ভাবনায় শিল্পসৃষ্টিতে নেশা চেপে যায় তাঁর।
এর আগে দেবতোষ বানিয়েছিলেন মাত্র একটি চালের উপর দুর্গাপ্রতিমা। তৈরি করেছিলেন এক লিটার, দু-লিটার, ৫ লিটার এবং কুড়ি লিটার প্লাস্টিক জলের বোতল দিয়ে ১০ ফুটের দুর্গামূর্তি। নারকেল ছোবড়া আর নারকেল দিয়ে দুর্গামূর্তি, কাঠের ভুসি দিয়ে বৃক্ষ আকৃতির দুর্গাপ্রতিমাও শিল্পীর অসাধারণ সব শিল্পকর্ম।মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২০১৯ সালে গঙ্গাসাগরে এসে দেবতোষের কাজ দেখে খুশি হয়ে শিল্পীকে শাল পরিয়ে ও কিছু আর্থিক সহায়তা দিয়ে সংবর্ধনা জানান। দারিদ্র্যের সঙ্গে সংগ্রাম করে চলেছেন শিল্পী। তাঁর আবেদন, শিল্পীভাতা হিসেবে যদি কিছু পাওয়া যায় তাহলে অনটন কিছুটা হলেও হয়তো মিটবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.