ছবি: অমিতলাল সিং দেও।
সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: রক্ত যেন না ঝরে। বলিদানের তরোয়ালের ‘উগ্রতা’ কমাতে পুজো আয়োজকরা আসেন থানায়। আর সেই তরোয়ালকে থানার অঙ্গনেই গামছা দিয়ে মুড়ে শান্তির বার্তা দেন ওসি। খাঁকি উর্দি বা কেমোফ্লেজ পোশাকে নয়। একেবারে সাদা ধবধবে ধুতি- গেঞ্জি ও লাল গামছা জড়িয়ে উপোস থেকে বলিদানের ওই তরোয়ালকে গামছা দিয়ে ঢেকে দেন। মহাঅষ্টমীতে সন্ধিপুজো শেষে ৮৮ বছর ধরে এই রীতি চলে আসছে পুরুলিয়ার (Purulia) বান্দোয়ান পুরাতন সর্বজনীন দুর্গাপুজো মণ্ডপে।
ধর্মীয় ভাবাবেগকে কোনওরকম আঘাত না দিয়ে সেই প্রথার মধ্য দিয়েই পুজোর মধ্যে থানার ওসির এমন শান্তির বার্তা রাজ্যে নজির। বান্দোয়ানের পুরাতন সর্বজনীন দুর্গাপুজো (Durga Puja 2023) কমিটির সদস্য অমিতকুমার আগরওয়াল বলেন, “আমাদের পুজোয় কোনওদিন প্রাণী হত্যা ছিল না। একেবারে প্রথম থেকে চালকুমড়ো ও ইক্ষু(আখ) বলি হয়ে থাকে। যে তরোয়াল দিয়ে ওই বলি দেওয়া হয় সেই তরোয়াল আমরা প্রশাসনের কাছে অর্থাৎ বান্দোয়ান থানায় নিয়ে আসি। ওই থানার ওসি সেই তরোয়ালকে লাল গামছা দিয়ে মুড়ে ‘উগ্রতা’ কমিয়ে দেন। এর মধ্য দিয়ে তিনি শান্তির বার্তা দেন।”
এই পুজো কমিটি ভেঙে ২০১১ সাল থেকে নব দুর্গা বান্দোয়ান সার্বজনীন কমিটি নামে ব্লক সদরে আরেকটি পুজো হচ্ছে। ওই কমিটিও একইভাবে তাদের বলিদানের তরোয়াল থানায় ওসির হাতে তুলে দেন। ওই তরোয়ালেরও একইভাবে গামছা মোড়া হয়। বান্দোয়ান নব দুর্গার সার্বজনীন পুজো কমিটির সদস্য সঞ্জয় হালদার বলেন, “১৩ বছর ধরে আমাদের পুজো কমিটিতেও এই রেওয়াজ চলছে । বলি দেওয়া তরোয়ালকে থানায় নিয়ে এসে তাকে শান্ত করা হয়। উগ্রতা কমানো হয়। আর এই কাজের মধ্যে দিয়েই শান্তির বার্তা ছড়িয়ে পড়ে।”
বান্দোয়ানের এই দুই দুর্গাপুজোয় কীভাবে স্বয়ং ওসি শামিল হন তা দেখতেও ভিড় জমে যায়। একদা মাওবাদী উপদ্রুত এই এলাকায় ওসি কোন ক্যামোফ্লেজ পোশাক গায়ে দেন না। এই সময় থাকে না তাঁর খাকি উর্দি। ধুতি-গেঞ্জি, গামছায় তাঁর যেন অন্য রূপ!
বছর-বছর ধরে সন্ধি পুজো শেষে জঙ্গলমহল বান্দোয়ানের ওসিকে এভাবেই দেখে আসছেন এলাকার মানুষজন। বর্তমানে বান্দোয়ান থানার ওসি শ্রীকান্ত মুলা এ বিষয়ে কোনও কথা বলতে না চাইলেও থানার তরফে জানানো হয়েছে, দুই দুর্গাপুজোর এটাই রীতি। পদাধিকার বলে এর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছেন ওসি। তবে সর্বোপরি শান্তির বার্তা দিতেই এইভাবে নিজেকে তুলে ধরেন থানার অফিসার ইনচার্জ। পুজো কমিটির সদস্য, পুরোহিত, ঢাকি-সহ এলাকার মানুষজন শোভাযাত্রায় শামিল হয়ে তরোয়াল নিয়ে বান্দোয়ান থানায় আসেন। এই সময় থানার দরজাও সম্পূর্ণভাবে খোলা রাখা হয়। কোনওরকম জবাবদিহি করতে হয় না সেন্ট্রির কাছেও।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.