সুরজিৎ দেব, ডায়মন্ড হারবার: সৃষ্টিতেই আনন্দ সায়নিকের। সুন্দরবন আদর্শ বিদ্যামন্দির উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র ১৩ বছরের সায়নিক হালদার।। পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকেই খুব ছোট থেকে ছবি আঁকা, কাগজের পুতুল তৈরির মতো হাতের কাজের নেশা ওর। যখন চতুর্থ শ্রেণির পড়ত তখনই সে কাগজের দুর্গা প্রতিমা বানিয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল বাড়ির সকলের। প্রতিবেশীরাও তার শিল্পকাজে এতটাই খুশি হয়েছিলেন যে সেই দুর্গার পুজো করার পরামর্শ দেন বড়রা। পাড়ার কয়েকজন খুদে বন্ধুকে নিয়ে সেই শুরু উমা আরাধনা। পুজোয় ছেলেমেয়েদের সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন তাদের বাবা-মা, আত্মীয় স্বজনেরাও। সায়নিকের বানানো কাগজের দুর্গাপুজো হয় তিনবছর।
শিল্পসৃষ্টির নেশা তখন পেয়ে বসেছে সায়নিককে। স্কুলে যাতায়াতের পথে একজন মৃৎশিল্পীকে প্রতিবছরই মাটির ঠাকুর তৈরি করতে দেখে ওরও নেশা চাপল মাটির ঠাকুর বানানোর। স্কুলে যেতে বাড়ি থেকে আগেভাগেই বেরিয়ে পড়ত সে। উদ্দেশ্য কীভাবে ঠাকুর তৈরি করেন ওই মৃৎশিল্পী তা মন দিয়ে লক্ষ্য করা। যেখানে দেবীমূর্তি তৈরি হয় সেখানে গিয়ে কাঠামো ও খড় বাঁধা, মাটি মাখানো, খড়ের গায়ে সেই মাটির প্রলেপ লাগানো, সবকিছুই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আশ্চর্য হয়ে দেখত ছোট্ট সায়নিক। কখনও বন্ধুরাও জুটে যেত তার সঙ্গে। মৃন্ময়ী মূর্তিকে চিন্ময়ী করে তোলার যাবতীয় কৌশল দিনের পর দিন লক্ষ্য করে দারুণভাবে রপ্ত করে ফেলেছিল সে।
ইচ্ছে হল তার আর কাগজের ঠাকুর নয়, এবার মাটির দুর্গামূর্তি তৈরি করে বন্ধুদের নিয়ে পুজো করবে। বন্ধুদের সেকথা জানিয়েও দিল। উৎসাহিত হল কচিকাঁচার দল। কিন্তু খরচের কথা ভেবে মনটা খারাপ হয়ে গেল তাদের সকলেরই। সবচেয়ে বেশি কষ্ট হল সায়নিকের। বাবা কলকাতায় সামান্য কাজ করেন। বলবে না, বলবে না করেও দুর্গামূর্তি তৈরি করে পুজোর কথা একদিন বাবাকে বলেই ফেলল সে। ছেলের শিল্পকর্মকে এতদিন উৎসাহই দিয়ে এসেছেন বাবা। কিন্তু খরচের কথা চিন্তা করে একটু পিছিয়েই এসেছিলেন তিনি। শেষপর্যন্ত বছরকয়েক আগে বাবার ইচ্ছেতেই মাটির ঠাকুর গড়ার কাজ শুরু করে দিল খুদে শিল্পী। তার হাতে গড়া মাটির প্রতিমাই চারবছর ধরে পুজো হয়ে আসছে। এবার মাটির বড় প্রতিমা তৈরি করেছে সায়নিক। ওর বন্ধুরা সাহায্য করছে ওকে। সবাই মিলে সেই প্রতিমার পুজো হবে এবার।
এগিয়ে এসেছেন পাড়ার দাদা, কাকু-জেঠুরাও। ওদের পুজো এবার আর চার দেওয়ালের ঘেরাটোপে নয়, কাকদ্বীপ রেল স্টেশনের কাছে গণেশপুরে ওদের পুজো হচ্ছে এবার সর্বজনীন। প্রতিমা তৈরীর শেষমুহূর্তের কাজ চলছে পুরোদমেই। মহালয়ার দিনই হয়েছে দেবীর চক্ষুদান। রংয়ের শেষ পোঁচ পড়ছে মূর্তিতে। সকলেই ওরা এবার উত্তেজনায় ফুটছে টগবগ করে। কত মানুষ দেখতে আসবেন ওদের পুজো! কোথায় ক’টা আলো লাগানো হবে, ভিড় সামলাবে কারা এসব নিয়েই এখন চলছে ওদের জল্পনা। কচিকাঁচাদের সঙ্গে এসব নিয়ে মেতে রয়েছেন পাড়ার বড়রাও।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.