শংকরকুমার রায়, রায়গঞ্জ: কালীপুজোর আগে আবার মর্ত্যে দেবীবোধন। হেমন্তের মাঝামাঝি শনিবার ‘রাখাল’ রূপে দেবী উমার (Durga Puja) আরাধনায় মাতল উত্তর দিনাজপুরের করণদিঘির বারডাঙ্গাবাসী। দুর্গাপুজো এখানে একদিনই। শনিবার দুপুরে দেবীকে উৎসর্গ করে পশুবলির সাক্ষী থাকল কয়েক হাজার ভক্ত। বারডাঙার ময়দানের প্রাচীন ঠাকুরদালানে দেবীর পুজো ঘিরে রকমারি সামগ্রী সম্ভারের বর্ণময় মেলায় সমস্ত বয়সিদের ভিড়ে সরগরম চত্বর। তবে মেলা শেষে মঙ্গলবার সূর্যোদয়ের আগেই দেবীর বিসর্জন হয়। আর দেবীর বিদায়ের পরই শুরু হয় দীপাবলির প্রস্তুতি।
উত্তর দিনাজপুরের দোমহনা পঞ্চায়েত এলাকা দিয়ে বয়ে চলেছে সুধানী নদী। নদীর পাড়ে বারডাঙার ময়দানে দেবীর পুজো ঘিরে অন্তহীন আনন্দে শামিল হয় বাসিন্দারা। ইংরেজ শাসনের আগে থেকেই এই এলাকায় ‘অকাল’ বোধন হয়। দশমীর ১৪ দিন পর রাখালরা আয়োজন করেন এই পুজোর। আসলে এই অজগাঁয়ে কোনওদিনই দুর্গাপুজো হত না। বিশ্বের সকলে যখন প্রাণের শারদোৎসবে উচ্ছ্বাসে মেতে উঠত, তখন আঁধারে ডুবে থাকত অভাবী এই জনপদের মানুষ। সেইসময় গ্রামবাসীরা রোজগারের জন্য ব্যস্ত থাকতেন। তাই নিজের গ্রামে পুজোর আয়োজনের ইচ্ছে থাকলেও তা সম্ভব হত না। কারণ দুর্গাপুজোর মিলত না ছুটি।
লক্ষ্মীপুজোর পর ছুটিতে নিজেদের ভিটেয় পরিবারের কাছে ফিরতেন জনমজুররা। তার পর দেবীর আরাধনার আয়োজন করতেন তাঁরা। পুজো কমিটির সম্পাদক জয়ন্ত সিংহ বলেন, “কত বছর আগে পুজো শুরু হয়, তা বলা সম্ভব নয়। তবে ঠাকুরদাদার কাছে শুনেছি, ইংরেজ আমলের আগেও এখানে রাখাল দেবীর পুজো হত। দুর্গাপুজোর দশমীর দুই সপ্তাহ পর।” স্থানীয় বধূদের বিশ্বাস, সবার সব ইচ্ছেপূরণ করেন জাগ্রত দেবী দুর্গা। তাই পুজোর পর পশুবলি উৎসর্গ করা হয়। গ্রামের অকাল দুর্গাপুজোর রীতি রেওয়াজ আজও একচুল পালটে যায়নি।
স্থানীয় বাসিন্দা বাসুদেব সরকার জানান, পুজো ঘিরে মণ্ডপ প্রাঙ্গনে চারদিন ধরে মেলা চলে। হাজার হাজার ভক্তদের ভিড় জমে। দুর্গাপুজো কমিটির সম্পাদক জয়ন্ত সিংহ বলেন, “আসলে শরৎকালে আর দশটা বাঙালি পরিবারে যেভাবে দেবীবরণ করা হয়, সেইসব আমাদের পুজোতেও রয়েছে। তবে অর্থের অভাবে একদিনই পুজো করতে হয়।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.