অর্ণব দাস, বারাসত: পেশায় চিকিৎসক। দিনভর ছুরি, কাঁচি, অসুস্থ, রোগজর্জর শরীর নিয়ে কারবার। ধুকপুক করতে থাকা দেহে প্রাণশক্তি ফিরিয়ে আনার ক্ষমতা রয়েছে তাঁর। হাসপাতালের বেডে যাঁর হাতের ছোঁয়ায় দিনের আলো দেখছে অসংখ্য শিশু, সেই তাঁর হাতেই আবার প্রাণ পাচ্ছে মৃন্ময়ী মাতৃমূর্তি। চিকিৎসকের ব্যস্ত শিডিউলের মধ্যেও নিজে আস্ত দুর্গাপ্রতিমা-সহ লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক, গণেশ বানিয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন বারাসতের নবপল্লি ভদ্রবাড়ির বাসিন্দা অনুপম ধর।
পুজোর আর মাত্র ক’দিন বাকি। এখন তাই নাওয়া খাওয়ার সময় নেই পুরুলিয়ার দেবেন মাহাতো মেডিক্যাল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের এসএনসিইউ বিভাগে কর্মরত অনুপমের। ক্ষিপ্র হাতে প্রতিমার গায়ে রংয়ের পোঁচ দিতে ব্যস্ত তিনি। চিকিৎসক অনুপমের এমন প্রতিভা দেখে মুগ্ধ এলাকাবাসী। তাঁর হাতে গড়া প্রতিমারই পুজো হবে এবার ধরবাড়িতে।
অনুপমদের বংশে দুর্গাপুজোর ইতিহাস অবশ্য শতাধিক বছরের পুরনো। বাংলাদেশের চট্টগ্রামে তাঁদের পূর্বপুরুষদের হাত ধরে এই পুজো শুরু। পরে অনুপমবাবুর পরিবার বারাসত চলে এলে সেখানে শুরু হয় পুজো। প্রথমদিকে প্রতিমাকেই পুজো করা হত। পরবর্তীকালে পারিবারিক কিছু অসুবিধার কারণে ঘটেই পুজো হত। তা চলে প্রায় ৪০-৫০ বছর। এদিকে, ছোটবেলা থেকেই মাটি নিয়ে খেলতেই বেশি পছন্দ করতেন অনুপমবাবু। মাটি দিয়ে অনায়াসে বিভিন্ন জিনিসও তিনি তৈরি করে ফেলতেন। স্কুল ছুটির পর বাড়ি ফেরার পথে কোথাও মাটির প্রতিমা তৈরি হতে দেখলে সেখানেই দাঁড়িয়ে পড়তেন তিনি। দেখে দেখেই শিখতেন মাটির কাজ।
এরপর ক্লাস সেভেনে পড়ার সময় বাড়ির পুজোর জন্য দু’ফুটের মা কালীর প্রতিমা তৈরি করে ফেলেন তিনি। তারপর থেকে বাড়ির যে কোনও পুজোর ছোট প্রতিমা তৈরির দায়িত্ব পড়ে অনুপমের হাতে। মাটির কাজের পাশাপাশি জোরকদমে ডাক্তারি পড়াও চালিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। ডাক্তারি পাস করে ২০১৬ সালে নয়াদিল্লির ইএসআই হাসপাতালে চিকিৎসক হিসাবে কেরিয়ার শুরু করেন। সেই বছরই ঠিক করেন, বাড়িতে ঘটের পরিবর্তে পুনরায় দুর্গাপ্রতিমার পুজো শুরু হবে এবং সেই প্রতিমা গড়বেন তিনি নিজেই। সেই থেকেই ডাক্তারবাবুর হাতে গড়া প্রতিমাতেই বাড়ির দুর্গাপুজো হয়ে চলেছে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি।
এনিয়ে সপ্তম বর্ষে পা দিল অনুপমের তৈরি প্রতিমার পুজো। চিকিৎসার শত ব্যস্ততার মাঝেও অনুপমবাবু সময় বের করে প্রতিমা তৈরির কাজ করছেন। তাঁর কথায়, “ছোট থেকেই মাটির কাজ করতে আমার খুব ভাল লাগত। এখন সেটা শখে পরিণত হয়েছে। সাত বছর ধরে বাড়ির দুর্গা প্রতিমা গড়ে চলেছি। তার আগে তৈরি করেছি বাড়ির কালীপ্রতিমা।” শখে বানানো প্রতিমা এখন অভ্যাস, দায়িত্ব। পুজো এলেই তাই প্রতিবার চিকিৎসকের বাড়তি দায়িত্বের পাশাপাশি মৃন্ময়ী মায়ের মূর্তি গড়তেও তাঁকে সব কাজ ফেলে ছুটে আসতে হয় বারাসতে। কারণ, তাঁর তৈরি প্রতিমা ছাড়া যে বাড়ির পুজোই হবে না!
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.