Advertisement
Advertisement
Durga Puja 2021

জলদস্যুর হাত থেকে বাঁচিয়েছিলেন দেবী, বিশ্বাসে ভর করেই দুর্গাপুজো বাঁকুড়ার জমিদার বাড়িতে

৩৫০ বছর আগে প্রাণে বেঁচে ফিরে নিজস্ব সম্পত্তি দেবোত্তর বলে উৎসর্গ করেছিলেন জমিদার।

Durga Puja 2021: This family of Bankura worships goddess Durga as the savior from bandits | Sangbad Pratidin
Published by: Sucheta Sengupta
  • Posted:September 24, 2021 5:02 pm
  • Updated:September 24, 2021 5:09 pm  

টিটুন মল্লিক, বাঁকুড়া: বিষ্ণুপুর (Bishnupur) মানেই মল্লরাজের ঐতিহ্য। সেই রাজাও নেই, রাজপাটও লাটে উঠেছে। কিন্তু সেই আমলের ছোঁয়া এখনও মুছে যায়নি বিষ্ণুপুরের বুক থেকে। তাই তো সাড়ে তিনশো বছর পেরিয়েও বিষ্ণুপুর মহকুমার হদল, নারায়ণপুর গ্রামজুড়ে গড়ে ওঠা জমিদার বাড়িতে পুজোর আয়োজন সেই আগেকার মতোই। মণ্ডল জমিদার বাড়ির বিপুল ঐশ্বর্য আজ না থাক, নিয়মনিষ্ঠা আর রীতিনীতিতে এখনও যেন সেই আমলের স্পর্শ। পাত্রসায়ের এলাকায় তাই এই জমিদার বাড়ির পুজো এখনও সমান জনপ্রিয়।

Advertisement

এই পুজোর ইতিহাসও কিন্তু বেশ আকর্ষণীয়। জানা যায়, ৩৫০ বছর আগে তৎকালীন বর্ধমানের (Burdwan) নীলপুর গ্রাম থেকে ভাগ্যের সন্ধানে বেরিয়েছিলেন মুচিরাম ঘোষ। তখন তিনি খুবই সাধারণ এক ব্যক্তি। বাঁকুড়ার রামপুর গ্রামে এসে বিখ্যাত গণিতজ্ঞ শুভঙ্করের বন্ধুত্ব হয় তাঁর। বিখ্যাত গণিতজ্ঞ হওয়ায় বিষ্ণুপুর মল্ল রাজাদের দরবারে শুভঙ্করের আলাদা খাতির ছিল। তাতেই ভাগ্য খুলে যায় মুচিরামের। গণিতজ্ঞ শুভঙ্করের সূত্রে মল্ল রাজাদের কাছ থেকে নির্দিষ্ট বার্ষিক খাজনার বিনিময়ে দামোদরের উপনদী বোদাইয়ের কাছে উর্বর বিশাল এলাকার জমিদারি সত্ত্ব লাভ করেন মুচিরাম ঘোষ। বেশ কয়েকটি তালুক নিয়ে বিশাল জমিদারি গড়ে ওঠে। তাঁকে মল্ল রাজারা ‘মণ্ডল’ উপাধি দেয়। জমিদারি পতনের সঙ্গে সঙ্গেই হদল ও নারায়ণপুর গ্রামের মাঝে গড়ে ওঠা বিশাল জমিদার বাড়ির মন্দিরে শুরু হয় দুর্গাপূজা (Durga Puja)।

[আরও পড়ুন: Durga Puja 2021: বরাত নেই প্রতিমার, বাবার কারখানা শূন্য রেখে দুর্গা গড়তে ভিনরাজ্যে মৃৎশিল্পীর মেয়ে]

পরবর্তীকালে এই উর্বর এলাকায় ব্রিটিশরা নীল চাষ শুরু করেন। তার জেরে ব্রিটিশ শক্তির সঙ্গেও বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে ওঠে এই মণ্ডল জমিদারদের। আরও পরে ব্রিটিশদের কাছ থেকে ওই এলাকার মোট সাতটি নীলকুঠি ইজারা নিয়ে নেয় মণ্ডলরা। কথিত আছে, সেই সময় বোদাই নদীতে নীল বোঝাই করা বজরা ভাসিয়ে দূরদূরান্তে রপ্তানি করত মণ্ডলরা। নীল বিক্রি করে প্রচুর ধনসম্পদ নিয়ে বজরায় করে গ্রামে ফেরার সময় ঘটে বিপত্তি। কোনও এক জায়গায় জলদস্যুর কবলে পড়েছিলেন মণ্ডল বাড়ির কোনও এক পূর্বপুরুষ। জলদস্যুদের হাত থেকে বেঁচে ফিরলে বজরায় থাকা যাবতীয় সম্পত্তি দুর্গার নামে দেবোত্তর করে দেওয়ার মানত করেন তিনি।

পরে জলদস্যুর হাত থেকে উদ্ধার হয়ে নিরাপদে ফিরে এলে ওই বজরায় থাকা সমস্ত ধনসম্পত্তি দিয়ে বিশাল দুর্গা দালান, রাসমঞ্চ মন্দির, রথ মন্দির, নাট মন্দির, নহবত খানা তৈরি করেন মণ্ডল। বংশ পরম্পরায় পুজো চালিয়ে যাওয়ার জন্য বহু জমি ও পুকুর কিনে সেগুলি দুর্গার নামে দেবোত্তর করে দেন। একদিকে নীলকুঠির বিপুল আয়, অন্যদিকে বিশাল জমিদারিতে ফুলেফেঁপে ওঠে কোষাগার। তার প্রভাব পড়ে দুর্গাপূজাতেও। সেই সময় পুজোতে সাতদিন ধরে নহবত খানায় বসত নহবত।

[আরও পড়ুন Durga Puja 2021: কার্তিক-গণেশ ছাড়াই মর্ত্যে আসেন মা, কালনা চট্টোপাধ্যায় বাড়ির পুজোয় বাজে না ঢাকও]

দুর্গামন্দির-সহ সমস্ত মন্দির সাজানো হতো বেলজিয়াম গ্লাস এর বিশাল বিশাল ঝাড়বাতিতে। পুজোর সময় বসত পুতুল নাচের আসর, হত যাত্রাপালা। দুর্গাপূজার প্রতিটি নির্ঘণ্ট ঘোষিত হত তোপ ধ্বনির দ্বারা। দূরদূরান্তের মানুষও প্রজারা হাজির হতেন জমিদার বাড়িতে। আজ আর সে নীলকুঠি ও নেই, নেই জমিদারও। কিন্তু আজও পুরানো আচার ও রীতি মেনে পূজা চালিয়ে যাচ্ছেন মণ্ডল পরিবারের সদস্যরা।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement