ধীমান রায়, কাটোয়া: প্রবল বৃষ্টি আর বাঁধভাঙা জলে প্লাবিত মঙ্গলকোটের সতীপীঠ কোগ্রাম। চারিদিকে ছড়িয়ে ধ্বংসলীলার ছবি। এর মাঝেই নিত্যপুজো চলছে দেবী মঙ্গলচণ্ডীর। কুগ্রামের সতীপীঠে শারদোৎসবের চারদিনও পূজিতা হবেন তিনিই। দেবী দুর্গার কোনও প্রতিমা আসে না এই গ্রামে। পূজিতা হন দেবী মঙ্গলচণ্ডীই।
“বাড়ি আমার ভাঙন ধরা অজয়নদের বাঁকে। জল যেখানে সোহাগ ভরে স্থলকে ঘিরে রাখে।” পল্লিকবি কুমুদরঞ্জন মল্লিক তার জন্মভূমি কোগ্রামের বর্ণনা এভাবেই কবিতার ছন্দে রেখে গিয়েছেন। পূর্ব বর্ধমান জেলার মঙ্গলকোটে এই কোগ্রাম। অজয়নদ ও কুনুর নদীর সঙ্গমস্থলে অবস্থিত এই গ্রাম সতীর ৫১ পীঠের অন্যতম। পুরাণে উল্লেখিত ‘উজানী’ আজকের কোগ্রাম। কথিত আছে, এখানেই পতিত হয়েছিল সতীর বাম কনুই। শারদোৎসবের চারদিন মঙ্গলচণ্ডীর পুজো ঘিরে আপামর গ্রামবাসী মেতে থাকেন।
কিন্তু গত তিনদিনে অজয়নদের জলোচ্ছ্বাসে কার্যত তছনছ পুরো গ্রাম। ধ্বংসলীলার চিহ্ন কোগ্রাম জুড়ে। যদিও অক্ষতই রয়েছে মঙ্গলচণ্ডীর মন্দির। প্রথা মেনে এবছরেও পুজো হবে সেখানে। কিন্তু পুজো ঘিরে জাঁকজমক সম্ভব নয়। তাই মনমরা গ্রামবাসীরা। কোগ্রামবাসীর দৈনন্দিন জীবনের ছন্দ যদিও এক ঝটকায় উলটেপালটে দিয়েছে অজয়নদের জলচ্ছ্বাস। দেখা যায়, জল নেমে গেলেও পুরো গ্রামজুড়ে পলি ও কাদামাটির পুরু স্তর। ঘরবাড়ি ভেঙেছে বেশকিছু। তাই পুজো নিয়ে আলাদা উন্মাদনা এবছর তেমন কিছু নেই।
অজয়নদের গায়েই মঙ্গলচণ্ডীর মন্দির। মন্দিরের সেবাইত পরিবারের সদস্যা সবিতা রায় বলেন, “যখন রাতের দিকে অজয়ে প্রচণ্ড জলচ্ছ্বাস, তখন প্রানপনে মাকে ডাকছি। আমাদের বসতবাটি জলের তলায়। মন্দিরে জল ঢুকেছে। গ্রামের অনেক ঘরবাড়ি ভেঙেছে। দেবীমন্দির লাগোয়া কিছু গাছপালা নষ্ট হয়েছে। কিন্তু মন্দিরের গায়ে আঁচ লাগেনি। বন্যায় গ্রামে কোনও হতাহত হয়নি। সবই দেবীর মাহাত্ম্য।” সেবাইত কাঞ্চন মুখোপাধ্যায়, সোমনাথ রায়রা বলেন, “প্রথা মেনেই এবছরেও চারদিন পুজো হবে। তার প্রস্তুতি চলছে। পুজোতে বাইরের পর্যটকদের অনেকেই আসতেন। কিন্তু এবছর গ্রামের রাস্তাঘাট ভেঙে গিয়েছে। তাই লোকজনের সমাগম তেমন হয়ত হবে না।”
দেখুন ভিডিও:
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.