ছবি: অমিতলাল সিং দেও
সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: একপক্ষ কাল বা চারদিন নয়। দেবী দুর্গা এখানে পূজা পান মাত্র একদিনই। শুধু মহানবমীর দিন এখানে দশভুজার আরাধনা হয়ে থাকে। তবে মাটির তৈরি প্রতিমায় নয়। পাথরে নির্মিত ভেঙে যাওয়া দুর্গামূর্তিতেই পুজো হয়ে আসছে বছরের পর বছর ধরে। পুরুলিয়ার কেশরগড়ে পঞ্চকোট রাজবাড়ির মন্দিরের দুর্গাপুজো (Durga Puja) তাই সবদিক থেকেই ব্যতিক্রমী, তা বলা যেতেই পারে।
কথিত আছে, পুরুলিয়ার (Purulia) পঞ্চকোট সাম্রাজ্যের রাজা ভরতশেখর সিং দেও এই পুজো চালু করেছিলেন। কিন্তু এখন দেবী আরাধনার দায়িত্বে গ্রামের মানুষজনের। তাঁরাই উদ্যোগী হয়ে অর্থ সংগ্রহ করে এই পুজো চালিয়ে যাচ্ছেন। কারণ, এই পুজোর জন্য রাজা ভরতশেখর সিং দেও কাউকে কোনও জমি দান করে যাননি। অথচ পাশেই কৃষ্ণ মন্দিরের যাবতীয় কাজকর্ম চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য জমি দান করে গিয়েছিলেন তিনি। তাই গ্রামের মানুষজনই ঐতিহ্য মেনে এই পুজো করে আসছেন। এই দেবী মন্দিরই আসলে কেশরগড় রাজবাড়ির অংশ।
ইতিহাস বলছে, ১৭৯৩ থেকে ১৮৩২ পর্যন্ত পঞ্চকোট সাম্রাজ্যের রাজধানী ছিল এই কেশরগড়ই। সেই সময়ই রাজা ভরতশেখর সিং দেও এই দুর্গাপূজার আরাধনা শুরু করেন। তার ৩৮ বছর রাজত্বকালে মহাধুমধামের সঙ্গে মায়ের আরাধনা হত। মহানবমীতে হত মোষ বলি। কিন্তু এখন আর মোষ বলি হয় না। গ্রামবাসীদের সম্মিলিত এই পুজোতে নবমীতে হয়ে থাকে পাঁঠা বলি। প্রায় ২১২ বছরের এই দুর্গাপুজোয় ঢল নামে সাধারণ মানুষজনের। বর্তমানে এই পুজো যাঁদের তত্ত্বাবধানে চলেছে, সেই নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, অতুল সেন বলেন, “এই পুজো আসলে পঞ্চকোট রাজপরিবারের। সেই সময়ই ওই সাম্রাজ্যের রাজা এই পুজোর সূচনা করেছিলেন বলে কথিত আছে। এখন আমরা এই পুজো চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।”
ভাঙাচোরা এই দেবী মন্দির সংস্কার করেছেন গ্রামের মানুষজনই। মন্দির ঘিরে থাকা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আলাদাভাবে চোখ টানে। মন্দিরের উত্তর-পূর্বে রয়েছে পাতলই নদী, দক্ষিণে কংসাবতী, পশ্চিমে রাকাব জঙ্গল। এখানে পা রাখলেই যেন গা ছমছম করে ওঠে। কিন্তু মাত্র একদিনের পুজোতেই শুধু কেশরগড় নয়, লাগোয়া একাধিক গ্রাম থেকে মানুষজন এখানে পা রাখেন। নবমীতে এখানে খিচুড়ি ভোগ বিতরণ করা হয়। এই মন্দিরের পাশেই একটি জলাশয় আছে। যা রানিবাঁধ নামে পরিচিত। ওই জলাশয় থেকে জল নিয়েই মায়ের পুজো হয়ে থাকে।
বর্তমান পুরোহিত শান্তনু চক্রবর্তী বলেন, “একদিনের পুজো। কিন্তু সমস্ত নিয়ম, আচার, ঐতিহ্য মেনে এই পুজো হয়ে আসছে।” এখানকার মানুষজনের বিশ্বাস, এই গ্রামে যে দুটি দুর্গাপুজো হয় সেই মাতৃ প্রতিমাগুলি বিসর্জনের দিন এখানে এনে ওই পাথরের মূর্তির মুখোমুখি না করলে অকল্যাণ হয়। বছর পাঁচ-ছয় আগে গ্রামের একটি প্রতিমাকে বিসর্জনের আগে এই পাথরের মূর্তির মুখোমুখি বসানো হয়নি। তারপর ওই মন্দিরের চালা আগুনে পুড়ে নষ্ট হয়ে যায়। তারপর থেকে ফি বছর বিসর্জনের আগে গ্রামের দুটি মাতৃপ্রতিমা এই পাথরের মূর্তির সামনে আনা হয়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.