Advertisement
Advertisement
Durga Puja 2021

Durga Puja 2021: দশভুজার আটটি হাতই ছোট, বসিরহাটের বসুবাড়ির ‘কলারছড়া’ পূজার ইতিহাস জানেন?

পায়রার উপদ্রবে কোপ পড়ে দেবী দুর্গার হতে, রোমাঞ্চকর কাহিনী সুপ্রাচীন এই পুজোর।

Durga Puja 2021: Know interesting facts of Puja of Basu Bari's puja at Basirhat
Published by: Sucheta Sengupta
  • Posted:September 29, 2021 9:18 pm
  • Updated:October 2, 2021 2:43 pm  

গোবিন্দ রায়, বসিরহাট: করোনাতঙ্ক (Coronavirus) কাটিয়ে আগের থেকে অনেকটাই স্বাভাবিক হয়েছে পরিস্থিতি। একেবারেই অকালবোধনের দোড়গোড়ায় দাঁড়িয়ে উদ্যোক্তারা। আর মাত্র কয়েকটা দিন তার পর বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজোয় (Durga Puja 2021) মাতবে গোটা বাংলা। আধুনিক পুজোগুলির পাশাপাশি, প্রাচীন পুজোগুলিতেও সমানতালে চলছে মণ্ডপসজ্জা অর্থাৎ ঠাকুর দালান মেরামতি, রং ইত্যাদি ও প্রতিমা তৈরির ধুম। ব্যতিক্রম নয় কলকাতার পাশ্ববর্তী জেলা উত্তর ২৪ পরগনার প্রাচীন পুজোগুলোও। তার মধ্যে প্রাচীনত্বে অন্যতম বসিরহাটের দণ্ডিরহাটের বসুবাড়ির, ‘কলার ছড়া’ দুর্গাপূজা। অনেকেই বসু বাড়ির এই পুজোকে ‘ডাক্তার বাড়ির পুজো’ হিসেবে জানেন। কারণ, বাংলার নামী ডাক্তার জগবন্ধু বসু ছিলেন এই বাড়ির সন্তান।

বসু পরিবারের পাশাপশি, প্রাচীন এই পুজোর ইতিহাস, নামকরণ ও বেশ কিছু প্রাচীন প্রথা আজও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বহন করে আসছে উত্তর ২৪ পরগনার (North 24 Parganas) বসিরহাটের মানুষ। আজও দেবীর আরাধনার দিন অর্থাৎ মহালয়ার দিন থেকে বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বসু বাড়ির সদস্যরা হাজির হন নিজেদের বাড়িতে। ইতিহাস বলছে, এই পুজো শুরু ১৪৬০ থেকে ১৪৭০ খ্রীস্টাব্দের মধ্যে। যশোরের রাজা প্রতাপাদিত্যের দ্বিতীয় স্ত্রীর বাবা ঈশ্বরীগুপ্ত বসু এই পুজো শুরু করেন। সেখান থেকেই চলে আসছে এই পুজো।

Advertisement

[আরও পড়ুন: Durga Puja 2021: ধর্মের ঊর্ধ্বে মানবতা, মুর্শিদাবাদের সান্যাল বাড়ির দুর্গাপুজোয় অংশ নেন মুসলমানেরাও]

পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, তৎকালীন বাংলাদেশের মাহিনগর থেকে বর্তমান বসিরহাটের (Basirhat) দন্ডিরহাটে স্থায়ী ঠিকানা হয় বসুদের। সেখানেই জমিদারি শুরু হয়। পুনরায় প্রথা মেনে পুনরায় পুজো শুরু করেন বসুরা। তবে প্রথমে থেকেই এই পুজোর নাম “কলার ছড়া দুর্গাপূজা” ছিল না। এই নামটির পেছনে রয়েছে এক কথকতা। জানা যায়, ১৭৯৩ সালে প্রতিমা তৈরির সময় মহামায়ার পেছনের ৮টি হাত বারবার ভেঙে যেতে থাকে। প্রতিমা তৈরির সময়ে পায়রা গিয়ে হাতগুলির উপর বসার ফলে সেগুলি ভেঙে যাচ্ছিল। কিন্তু পায়রা কোন ভাবেই আটকানো যাচ্ছিল না। বহু চেষ্টার করেও প্রতিমার হাত ভাঙ্গা কিছুতেই আটকানো যায়নি। শেষ মুহূর্তে সেগুলি মেরামতি করে তবেই পুজো করতে হয়েছে। ১৭৯৩ থেকে ১৭৯৭ পর্যন্ত এই পাঁচ বছর এই ঘটনা ঘটতে থাকে।

শোনা যায়, ১৭৯৭ সালের পর তৎকালীন বসু পরিবারের প্রধান গোপাললাল বসু স্বপ্নাদেশ পান প্রতিমার ১০টি হাতের মধ্যে পেছনের ৮টি হাত ছোট করে দিতে। সেই মতো সামনের দুটি হাত প্রমাণ মাপের হলেও পিছনের ৮টি হাত ছোট করে দেওয়া হয়। তবে এও প্রচলিত রয়েছে, ডাঃ জগবন্ধু বসুর বাবা রাধামাধব বসু ছিলেন ঢাকার নবাবের বাংলাদেশের দেওয়ান। অধুনা মাহিনগর বসু পরিবারের খ্যাতি রাধামাধবের আমল থেকেই। ডাঃ জগবন্ধু বসুর মা বিন্দুবাসিনী দেবীর স্বপ্নাদেশে প্রতিমার আটটি হাত বাকি হাতের তুলনায় ছোট হয়ে যায়। প্রতিমার হাত ভাঙাও বন্ধ হয়ে যায়। সেই থেকে চিরাচরিত প্রতিমা নির্মানের বৈশিষ্ট্য আজও চলে আসছে। হাত ছোট হয়ে যাওয়ার ফলে প্রতিমাকে দেখলে ওই ছোট হাতগুলিকে অনেকটা কলার ছড়ার মত দেখায়। তাই তখন থেকেই বসু বাটির পুজোর প্রতিমার নাম হয়ে যায় ‘কলারছড়া দুর্গাপূজা’।

[আরও পড়ুন: Durga Puja 2021: দুর্গার সঙ্গে পূজিতা হন গঙ্গা, জানুন মুর্শিদাবাদের ঐতিহ্যবাহী ‘বাইশ পুতুলের পুজো’র ইতিহাস] 

জমিদার বাড়িতে ভুরিভোজের আয়োজন ছিল, পুজোকে কেন্দ্র করে কালীপুজো পর্যন্ত বিরাট মেলা বসত। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আর যাত্রাপালা হল। জমিদার বাবুরা নিজেরা যাত্রাপালায় অংশগ্রহণ করতেন। মহালয়ার আগে আজও নিয়ম করে বাগবাজার মায়ের ঘাট থেকে গঙ্গাজল আনা হয়। আগে গঙ্গাজল আসত নৌকায় এখন আসে গাড়িতে। প্রতিপদের দিন ঘট বসানো হয়। বনেদী বাড়ীর এই পুজো কেন অন্যদের থেকে আলাদা? জগবন্ধু বসুর পরিবারের এই পুজোর ইতিহাস অন্য আর পাঁচটা পরিবারের থেকে আলাদাই বটে। গল্পের ছলে সেই অতীতের ইতিহাস জানা গিয়েছে বসু পরিবারের বর্তমান প্রজন্ম-এর সদস্য ও গ্রামবাসীদের কাছ থেকে। 

[আরও পড়ুন: Durga Puja 2021: জৌলুসহীন জমিদারবাড়ি, উত্তর দিনাজপুরের বাহিন বাড়ির পুজো এখন বারোয়ারি]

বসুবাড়ির পুজোয় হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের অংশগ্রহণের ব্যতিক্রমী নজিরও দীর্ঘদিনের। আজও বিসর্জনের দিন বসুবাড়ির দুর্গাদালান থেকে প্রতিমা বার করে নিয়ে যাওয়া হয় কয়েকশো মিটার দূরে মোকসেদ মোল্লার পরিবারের উঠোনে। সেখানে স্থানীয় মোল্লাপাড়ায় রীতিনীতি মেনে হয় সিঁদুর খেলা! এরপর ওই মুসলিম পরিবারের এক সদস্য করাত দিয়ে প্রতিমার কাঠামো কেটে দেওয়ার পরে ১২ জন বেয়ারার কাঁধে চাপিয়ে বিসর্জনের জন্য ইছামতীর ঘাটে নিয়ে যাওয়া হয় দুর্গাকে। সেখানেই ভাসান।

২০২৪ এর পূজা সংক্রান্ত সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের দেবীপক্ষ -এর পাতায়।

চোখ রাখুন
Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement