ছবি : মোহন সাহা
অভিষেক চৌধুরী, কালনা: বোধন হলেও, হয় না বিসর্জন। রীতিনীতি ও নিয়মকানুন মেনে পুজোর (Durga Puja 2021) ক’টা দিন ধুমধামের সঙ্গে পুজো হলেও এই দেবীর বিসর্জন হয় না। শুধু তাই নয়, দেবীর সঙ্গে লক্ষ্মী, সরস্বতী থাকলেও নেই গণেশ ও কার্তিক। পুজোর সময় বাজানো হয় না ঢাকও। প্রতিমার কাঠামো থেকে পুজোর নিয়মকানুনে এমনই সব বিশেষত্ব রয়েছে কালনার পাথুরিয়ামহলের চট্টোপাধ্যায় পরিবারের দেবী জয়দুর্গার। বংশপরম্পরায় চলে আসা এমনই এক পুজোয় প্রতি বছরই নামে ভক্তের ঢল।
কালনা শহরের পাথুরিয়ামহলের দেবী জয়দুর্গার পুজো ৪০০ বছরের পুরনো। সেইসময় কালনা শহরের ভাগীরথী নদীর তীরে বালির বাজারে বণিক চট্টোপাধ্যায়ের পরিবারের রমরমা ছিল। পরে ক্ষতির পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় ব্যবসার ঝাঁপ বন্ধ করে দেন তাঁরা। এরপর তাঁরা কালনা থেকে কলকাতার আড়িয়াদহে চলে যায়। সেইসময় পুরোহিত রামধন মুখোপাধ্যায়ের হাতে দেবী জয়দুর্গার নিত্যসেবার ভার তুলে দেন। তারপর থেকে নয় প্রজন্ম ধরে এভাবেই দেবীর আরাধনা হয়ে আসছে বলে জানান পুজোর দায়িত্বে থাকা অমিত মুখোপাধ্যায়। তিনি জানান, পুজোর ষষ্ঠীর দিন দেবী জয়দুর্গার বোধন হলেও দশমীর দিন বিসর্জন হয় না। বরং দশমীর দিন বিসর্জনের পরিবর্তে দেবীর নিত্যপুজো শুরু হয়। নিয়ম নিষ্ঠা সহকারে যা সারাবছর ধরেই চলে।
পাথুরিয়ামহলের একচালার এই প্রতিমা দেখতে অনেকটা পাথরের মতো হলেও তা তৈরি করা হয়েছে মাটি দিয়ে। কোনও কারণে প্রতিমা ক্ষতিগ্রস্ত হলে বা ভেঙে গেলে নবকলেবর করা হয়। ১২ বছর অন্তর দেবীর অঙ্গরাগ হয়। পুজোর চারদিনে একসময় ছাগ বলিদান এবং সন্ধিক্ষণে মৎস্য ভোগ হত। কিন্তু পরিবারের সদস্যদের আপত্তিতে তা বন্ধ হয়ে যায় ৭০ বছর আগে। তবে বর্তমানে কলা, শসা ও চালকুমড়ো বলি দেওয়া হয়। নিবেদন করা হয় নিরামিষ ভোগ। অষ্টমীর দিন কুমারী পুজোও হয় বেশ ধুমধামের সঙ্গে।
অমিত মুখোপাধ্যায় জানান, দশমীর দিন এখানে দেবীর বিসর্জন হয় না। বিসর্জন হয় সুসজ্জিত কলাবউয়ের। এই পুজোয় ঢাকও বাজানো হয় না। ঢাক বাজালে পরিবারের ক্ষতি হতে পারে এমনই এক সংস্কারের জন্য পুজোর চারদিন ও নিত্যসেবার সময় কাঁসর, ঘণ্টা ও শাঁখ বাজানো হয়। ৫২ বছর আগে মায়ের এই প্রাচীন মন্দির সংস্কার করা হয়ে্ছিল। সেইসময় কালনার স্থানীয় বেশ কিছু ব্যবসায়ী যথেষ্ট সহযোগিতাও করেন। অমিতবাবু জানান, “আমার ভাই সুমিত মুখোপাধ্যায়ও এই পুজোর দায়িত্বে রয়েছেন।” জয়দুর্গা বাড়ি হিসাবে পরিচিত কালনার মুখোপাধ্যায় পরিবারের এই পুজোয় পরিবারের সকল সদস্য ও আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে এলাকাবাসীরাও অংশগ্রহণ করে ও খুবই আনন্দ করে বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দা সুনীলকুমার চৌধুরী।
দেখুন ভিডিও:
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.