বিপ্লবচন্দ্র দত্ত, কৃষ্ণনগর: অতিমারীর আতঙ্ক এখনও পুরোপুরি কাটেনি। কিন্তু তাতে কী? সময় বলছে, মর্ত্যে দেবী দুর্গার (Durga Puja) আবির্ভাবের আর মাস তিনেক বাকি। প্রস্তুতি তুঙ্গে নদিয়ার (Nadia) শান্তিপুরের সাহাপাড়া স্ট্রিটের বাসিন্দা শুভজিৎ দে’র বাড়িতে। শুভজিতের তৈরি দুর্গাপ্রতিমা এবার যে সাত সমুদ্দুর তেরো নদী পেরিয়ে কানাডায় পাড়ি দেবে। তারই প্রস্তুতিতে দিনরাত এক করে কাজ করে চলেছেন তন্তুবায় পরিবারের সন্তান শুভজিৎ।
বংশের কারও সঙ্গে মূর্তি তৈরির কোনও যোগ নেই। কুম্ভকার পরিবারের সন্তান না হলেও ছোটবেলা থেকে শুভজিতের প্রতিভা গোপন থাকেনি। কখনও আটা মাখা, কখনও কাদা দিয়ে বিভিন্ন ধরনের মূর্তি তৈরি করতেন তিনি। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কাজের দক্ষতাও বাড়ে। ক্রমে সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের তৈরি মূর্তির ছবি পোস্ট করতে শুরু করেন শুভজিৎ। সেখান থেকেই শুভজিতের যোগাযোগ হয় কানাডার এক প্রবাসী বাঙালি ভদ্রলোকের সঙ্গে। তিনি শুভজিৎকে সুন্দর একটি দুর্গামূর্তি তৈরি করার বরাত দেন। সেইমতো প্রায় একমাস সময়ের মধ্যে তৈরি হয় ফাইবারের ইপোক্সি কম্পাউন্ডের দুর্গামূর্তি। দু’ফুট লম্বা ও দু’ফুট চওড়া ওই মূর্তি বাক্সবন্দি হয়ে আপাতত কানাডায় (Canada) রওনা হওয়ার অপেক্ষায়।
প্রথমবার নিজের সৃষ্টি বিদেশে পাড়ি দিচ্ছে। তা নিয়ে যারপরনাই উত্তেজিত অভাবী তাঁতি পরিবারের সন্তান শুভজিৎ। তিনি বলেন, “কাঠের বাক্সবন্দি করে মাটির মূর্তি পাঠানোর চেষ্টা করা হলেও তা ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই ফাইবারের ইপোক্সি কম্পাউন্ডারে মূর্তি তৈরি করা হয়েছে। মূর্তি তৈরি করতে এক মাসের মতো সময় লেগেছে।”
পেশায় তন্তুজীবী হলেও শুভজিতের বাবা নবকুমার দে একজন স্বর্ণকার। তাঁর ছোট একটি সোনার দোকান রয়েছে। ছেলের সাফল্যে গর্বিত বাবা বলেন, “তাঁত বুনেই ছেলে, মেয়ে, স্ত্রীকে নিয়ে সংসার চালাই। কোনওরকমে চলে যায়। ছেলের প্রতিভা বিকাশের সুযোগ করে দিতে পারিনি। তবে নিজের সন্তান বলে নয়, ওর শিল্পকর্ম আগামীতে দেশের বাইরে সমাদৃত হবে, এই বিশ্বাস আমার ছিল। তাই খুবই ভাল লাগছে।” মা ছন্দা দে’র কথায়, “পড়াশোনার ফাঁকে ফুরসত পেলেই আমার ময়দা মাখা অথবা কাদামাটি নিয়ে শুভ ছোটখাটো মূর্তি বানাত। তবে ওর বাবাকে কোনওদিন বলতে সাহস পাইনি, ছেলেকে এই ধরনের কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভরতি করানোর জন্য। তা সত্ত্বেও ওর শিল্পকর্ম বিদেশে পাড়ি দিচ্ছে, এটা সত্যিই গর্বের বিষয়।” স্বামীর সাফল্যে গর্বিত শুভজিতের স্ত্রী মমতা দে জানান, “দেড় বছর আমাদের বিয়ে হয়েছে। ওর কাজের প্রতি আগ্রহের কারণেই এ বাড়িতে আসার সুযোগ হয়েছে। যথাসাধ্য চেষ্টা করি, ওর পাশে থেকে সহযোগিতা করার।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.