Advertisement
Advertisement
হাতি মৃত্যু

হাতির মৃত্যুর নেপথ্যে বিদ্যুৎ দপ্তর! গাফিলতির অভিযোগে সরব গ্রামবাসীরা

বনদপ্তর ও বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার মধ্যে শুরু চাপানউতোর৷

Duel between electric and forest department over jumbo death
Published by: Sucheta Sengupta
  • Posted:July 10, 2019 5:50 pm
  • Updated:July 10, 2019 5:50 pm  

সুনীপা চক্রবর্তী, ঝাড়গ্রাম: বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ঝাড়গ্রামের কাঁকো বনাঞ্চলে তিন পূর্ণবয়স্ক হাতির মৃত্যুর ঘটনা ঘিরে দ্বন্দ্বে জড়াল বিদ্যুৎ দপ্তর ও বনদপ্তর৷ অভিযোগের আঙুল উঠেছে বিদ্যুৎ বন্টন সংস্থার বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার রাতে হাইটেনশন লাইনের ঝুলে থাকা তারের ছোঁয়ায় মৃত্যু হয়েছে তি পূর্ণবয়স্ক হাতির৷ এই ঘটনার পর গ্রামবাসীদের অভিযোগ, প্রায় ছ’মাস ধরে গ্রামের জমির উপরেই ঝুলে রয়েছে বিদ্যুতের হাইটেনশন তার৷ বারবার বিদ্যুৎ বন্টন সংস্থার অফিসে এনিয়ে অভিযোগ করেও কোন ফল পাওয়া যায়নি৷

[ আরও পড়ুন: নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে তিস্তায় তলিয়ে গেল পর্যটকদের গাড়ি, নিখোঁজ ৩]

মঙ্গলবার রাতে ঝাড়গ্রামের বিনপুর থানার সাতবাঁকি গ্রামে হাতি তাড়ানো অভিযানের সময় হাইটেনশন তারের ছোবলে তিন দাঁতালের এই মৃত্যুর ঘটনা মেনে নিতে পারছেন না গ্রামবাসীরা। দলমার দাঁতালরা জঙ্গল থেকে লোকালয়ে ঢুকে ক্ষয়ক্ষতি করলেও স্থানীয় বাসিন্দারা হাতিকে গণেশের প্রতিভূ বলে মনে করনে। তাই এদিন হাতির মৃত্যুর পর স্থানীয় গ্রামবাসীরা শোক পালন করেছেন। নীরবতা পালন করে মৃত হাতিগুলির শরীরে মালা দিয়ে পুজো করেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

Advertisement

বনদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার লালগড় থেকে প্রায় পঁচিশটি দলমা হাতির একটি পাল কংসাবতী নদী পেরিয়ে বিনপুরের কুশবনি জঙ্গল হয়ে মালাবতীর জঙ্গলের ভিতরের রাস্তা দিয়ে ঝাড়খণ্ডের দিকে তাড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল৷ কিন্তু গন্তব্যে পৌঁছানোর আগেই বিনপুরের কুশবনি জঙ্গল পেরিয়ে সাতবাঁকি গ্রামে চাষের জমির উপর ঝুলন্ত বিদ্যুতের তারে একটি পুরুষ এবং দুটি স্ত্রী হাতি বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের বক্তব্য, পুরুষ দাঁতালটি ওই তারের নিচ দিয়ে পার হওয়ার সময় শুঁড় বা শরীরের অংশ তারে লাগে। দাঁতালটি বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হলে, তাকে বাঁচাতে বাকি দুটি স্ত্রী হাতি চেষ্টা করলে তারাও বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যায়। অন্যদিকে, বনদপ্তর মনে করছে, একসঙ্গে পার হওয়ার সময়েই তিনটি হাতি বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়েছে বলেও প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে।

ele-death-n

বুধবার ভোর থেকেই হাতির মৃত্যুর ঘটনার খবর গ্রামে গ্রামে ছড়িয়ে পড়ে। সাতবাঁকির আশপাশের গ্রাম গড়াশুনি, বড়াল, মোহনপুর, কাঁকো, মালাবতী, জিনাগুড়ি, ভাড়ারু, পলাশবনি গ্রামের হাজারো বাসিন্দা এদিন হাতির মৃত্যুতে সাতবাঁকি গ্রামে রীতিমতো শোক পালন করেন। তাঁরা বিদ্যুৎ বন্টন সংস্থার বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফেটে পড়েন। এদিন সাতবাঁকি গ্রামের বাসিন্দা শম্ভু মাহাতোর জমির উপরই হাতিগুলি মৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। শম্ভু বাবুর কথায়, ‘গত ছ’মাস ধরে জমির উপর বিদ্যুতের তার ঝুলছে। ভয়ে এবার জমিতে চাষ তো দূরের কথা, লাঙলও করতে পারিনি। বিদ্যুৎ দপ্তরকে বারবার বলেও কাজ হয়নি।’ কাঁকো গ্রামপঞ্চায়েত সদস্য রবীন্দ্রনাথ হাঁসদা বলেন, ‘গ্রামবাসীদের পক্ষ থেকে বিদ্যুৎ দপ্তরকে বারবার বলা হয়েছিল যাতে হাইটেনশন তারটি উঁচু করে দেওয়া হয়।’ বিভিন্ন সময়ে এই বৈদ্যুতিক তারের ছোঁয়ায় মৃত্যুর ঘটনায় অভিযোগের আঙুল বারবারই উঠেছে বিদ্যুৎ বন্টন সংস্থার বিরুদ্ধে। এদিন দুপুর পর্যন্ত বনদপ্তরের চেষ্টায় হাতিগুলির নিথর দেহ ক্রেনের সাহয্যে তুলে ঝাড়গ্রামে বাদরভোলা বিট অফিসে নিয়ে আসা হয়। সেখানেই দাহ হবে বলে বনদপ্তর সূত্রে খবর।

[ আরও পড়ুন: গ্রামে রমরমিয়ে চলছে বেআইনি মদের দোকান, প্রতিবাদে পথ অবরোধ স্থানীয়দের]

এনিয়ে ঝাড়গ্রামের ডিএফও বাসবরাজ হলেইচ্ছি বলছেন, ‘ বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে হাতিগুলির মৃত্যু হয়েছে। তারটি অনেকদিন ধরে ঝুলছে বলে গ্রামবাসীদের অভিযোগ। আমরা এই বিষয়টি নিয়ে বিদুৎ বন্টন সংস্থার সঙ্গে কথা বলব।’ ঝাড়গ্রামের বিদ্যুৎ বন্টন সংস্থার ডিভিশন্যাল ম্যানেজার উজ্জ্বল রায় আশ্বাস দিয়েছেন, ‘ আমরা জায়গাটি দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব। প্রয়োজনে তারটিকে উঁচু করে দেওয়া হবে।’ তবে দু’পক্ষের এই টানাপোড়েনে মাঝখান থেকে আরও কত হাতি যে মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়তে পারে, সেই আশঙ্কা থাকছেই৷

ছবি:প্র তিম মৈত্র৷

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement