সৌরভ মাজি, বর্ধমান: দীর্ঘদিন ধরে সরবরাহ নেই পেসমেকারের। ফলে গত প্রায় দেড় মাস ধরে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সুপার স্পেশ্যালিটি উইং অনাময় হাসপাতালে হৃদযন্ত্রের অস্ত্রোপচার আটকে রয়েছে। যদিও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের আশা, সামনের সপ্তাহের মধ্যে রাজ্য থেকে পেসমেকার মিলে যাবে। সমস্যাও কেটে যাবে।
সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে পরিষেবা মেলে। হৃদযন্ত্রে পেসমেকার বসানোও এখানে বিনামূল্যেই হয়ে থাকে। ফলে রোগীর চাপ খুব বেড়ে গিয়েছে। সারা বছর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের যা বাজেট থাকে তা কয়েকমাসের মধ্যেই শেষ হয়ে যায়। তাই বাড়তি পেসমেকারের জোগান দিতে রাজ্যের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হয়। অনেক সময়ই বন্ধ রাখতে হয় পেসমেকার বসানো। গত প্রায় দেড়মাস ধরে পেসমেকারের সরবরাহ নেই। সেই কারণে অনেক রোগীর হৃদযন্ত্রে পেসমেকার বসানো যাচ্ছে না। দিনের পর দিন রোগী ভরতি রয়েছে হাসপাতালে। কবে অস্ত্রোপচার হবে তা স্পষ্টভাবে তাঁদের জানাতে পারছে না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ডেপুটি সুপার তথা অনাময় হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক অমিতাভ সাহা জানান, স্বাস্থ্য দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। দ্রুত পেসমেকার পাওয়ার চেষ্টা চলছে। তাঁর আশা, সামনের সপ্তাহের মধ্যেই সরবরাহ স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
বিনামূল্যে এই পরিষেবা চালুর পর এক ধাক্কায় রোগী এবং অস্ত্রোপচারের সংখ্যা বেড়ে গিয়েছে। পেসমেকার বসানোর ক্ষেত্রে SSKM-এর মতোই রোগীর চাপ থাকছে অনাময় হাসপাতালে। এখন প্রতি বছর গড়ে ৫০০ রোগীর পেসমেকার বসানো হয়। হাসপাতালের তরফে এই খাতে বাজেট ধরা হয়ে থাকে প্রায় ৬ কোটি টাকা। কিন্তু রোগীর চাপ বাড়ায় কয়েকমাসের মধ্যেই তা ফুরিয়ে যায়। তখন অন্য খাত থেকে বা প্রকল্পের টাকা, এমনকী রোগী কল্যাণ সমিতির টাকা ব্যবহার করতে হয়। সেই কারণে আর্থিক বছরের শেষের দিকে পেসমেকার সরবরাহে ঘাটতি থেকে যাচ্ছে।
বর্তমানে হাসপাতালে বেশ কয়েকজন রোগী ভরতি রয়েছেন, যাঁদের অনেক আগেই পেসমেকার বসানোর কথা ছিল। কিন্তু সরবরাহ না থাকায় কেউ দেড় মাস, কেউ ২৭ দিন, কেউ ১৫ দিনের বেশি অপেক্ষা করছেন। কবে পেসমেকার মিলবে তারপর তা বসানো হবে। ততদিনে রোগীর অবস্থা আরও সংকটজনক হয়ে উঠছে সেটাই স্বাভাবিক। বাঁকুড়ার গোপাল ধীবর, মুর্শিদাবাদের জিয়াগঞ্জের শেখ মেখলা চার সপ্তাহের বেশি সময় ধরে ভরতি রয়েছেন। পেসমেকার না মেলায় অস্ত্রোপচার হয়নি তাঁদের। বর্ধমানের শক্তিগড়ের শেখ হাসমত আলি ভরতি রয়েছেন বেশ কিছুদিন ধরে। সরবরাহ না থাকায় তাঁরও পেসমেকার বসানো যায়নি। ওই রোগীর স্ত্রী আজমিরা বিবি জানান, বাইরে থেকে পেসমেকার কিনে দেওয়ার ক্ষমতা নেই। তাই সরকারি হাসপাতালের ভরসায় রয়েছেন। কিন্তু সরবরাহ না থাকায় পেসমেকার বসানো যাচ্ছে না। তার ফলে শরীরে কোনও ক্ষতি হবে না, এই চিন্তাই রাতের ঘুম কেড়েছে ওই মহিলার।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.