মণিরুল ইসলাম, উলুবেড়িয়া: অচৈতন্য অশীতিপর বৃদ্ধ, সঙ্গে জ্বর। এদিকে গায়ে জ্বর় জানার পরেই রোগীকে ভরতি নিল না উলুবেড়িয়ার তিন নার্সিংহোম। পরে অন্য এক নার্সিংহোম ভরতি হন তিনি। সেখানে চিকিৎসকরা পরীক্ষা করে জানান বৃদ্ধের দু’বার স্ট্রোক হয়েছে। ফলে অচৈতন্য হয়ে রয়েছেন। আর জ্বরটাও রয়েছে। তবে সেটা ভয়ের কিছু নয়। বৃদ্ধের পরিবারের সদস্যদের বক্তব্য, বাবার গায়ে জ্বর রয়েছে বলে করোনা আক্রান্ত সন্দেহে তিনটি বেসরকারি হাসপাতাল ভরতি নেয়নি। শেষমেশ চিকিৎসকের আশ্বাসবাণী পেয়ে হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন বৃদ্ধের পরিবারের লোকজন।
বাগনানের চাকুর গ্রামের বছর পঁচাশির সত্যচরণ হাজরা শুক্রবার রাত এগারোটা নাগাদ অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরিবারের লোকেরা স্থানীয় চিকিৎসক ডেকে বৃদ্ধের চিকিৎসা করান। কিন্তু সেই গ্রামীণ চিকিৎসক জানিয়ে দেন দ্রুত তাঁকে কোনও হাসপাতালের নিয়ে যেতে। সেই মতো শনিবার সকালে বৃদ্ধকে পরিবারের লোকেরা উলুবেড়িয়ায় নিয়ে যান নার্সিংহোমে ভরতি করার জন্য। কিন্তু সেখানে গিয়ে এক অনভিপ্রেত অভিজ্ঞতার শিকার হন বৃদ্ধের পরিবারের সদস্যদের। সত্যচরণবাবুর ছেলে দিলীপ হাজরা বলেন, “সাড়ে নটা নাগাদ আমরা বাবাকে নিয়ে উলুবেড়িয়ার এক নার্সিংহোমে নিয়ে যাই। সমস্ত নিয়ম মেনে বাবাকে জরুরি বিভাগে নিয়ে যাই। এরপরই চিকিৎসক বুঝতে পারেন বাবার গায়ে জ্বর রয়েছে। পত্রপাঠ আমার বাবাকে নার্সিংহোম থেকে প্রায় বের করে দেওয়া হয়। ভরতি নিতে অস্বীকার করা হয়। এমনকি বলে দেওয়া হয় জ্বরের রোগীকে ভরতি নেওয়া যাবে না।
এরপর দিলীপবাবুরা বাবাকে নিয়ে যান উলুবেড়িয়ার অন্যতম এক নামী বেসরকারি হাসপাতালে। সেখানেও একই কথা বলা হয়। তারাও স্পষ্ট জানিয়ে দেয় কোনভাবেই জ্বরের রোগীকে হাসপাতালে ভরতি করা যাবে না। তিনি বলেন, “ওই নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ তো বাবাকে নিয়ে ভিতরেও ঢুকতে দেয়নি।” ক্রমশ চিন্তা বাড়তে থাকে বৃদ্ধের পরিজনদের। এরপর তৃতীয় নার্সিংহোমে যান তাঁরা। কিন্তু সেখানেও একই অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয় বৃদ্ধের ছেলেকে। কর্তব্যরত চিকিৎসক জ্বরের কথা শুনে সামান্য পরীক্ষা নিরীক্ষা করেই জানিয়ে দেন এই বেসরকারি হাসপাতালে তাঁকে ভরতি নেওয়া কার্যত অসম্ভব।
এরপর বৃদ্ধের ছেলের এক বন্ধু অন্য এক নার্সিংহোমে গিয়ে কথা বলেন। সেখানে তাঁরা সব শুনে বৃদ্ধকে হাসপাতালের ইমারজেন্সিত আনতে বলেন। কর্তব্যরত চিকিৎসক বৃদ্ধের পরীক্ষা করে জানান তাঁর সামান্য সময়ের ব্যাবধানে দু’বার স্ট্রোক হয়েছে। জ্বর নিয়ে ভয় পাওয়ার কারণ নেই বলেও আশ্বাস দেন। দিলীপবাবু বলেন, “মনে হয় নার্সিংহোমগুলি জ্বর দেখেই করোনা সন্দেহে বাবাকে ভরতি নিতে অস্বীকার করে হাসপাতালগুলি। কিন্তু আমরা জানতাম এমন কোনো ব্যাপার নেই। কারণ, বাবা বা আমরা কেউই বিদেশে যায়নি। এমনকি সম্প্রতি অন্য রাজ্যে বা বেশি লোকের সঙ্গেও মেলামেশাও করিনি।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.