স্টাফ রিপোর্টার: উৎসবের মরশুমে পুরুলিয়া শহরের জনবহুল রাস্তায় ‘মদ্যপ’ পুলিশের ‘কীর্তি’ ভাইরাল হয়ে গেল৷ সেই ‘কীর্তি’র স্থির চিত্র থেকে ভিডিও ফুটেজ ছড়িয়ে পড়েছে বিভিন্ন সোশ্যাল সাইটে। পুরুলিয়া সদর থানার অধীনে কর্মরত অ্যাসিস্ট্যান্ট সাব ইন্সপেক্টর বা এএসআই কল্যাণ মিশ্রের অসংলগ্ন আচরণের ছবি এখন ঘুরছে মোবাইলে-মোবাইলে৷
শুক্রবার ধনতেরাসের রাতে শহর পুরুলিয়ার সাহেব বাঁধ রোডে (পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক মোড়ের কাছে) ওই পুলিশকর্মী খাকি উর্দি গায়ে মদ খেয়ে যেভাবে রাস্তায় গড়াগড়ি খেলেন, তা নজিরবিহীন৷ গোটা ঘটনায় মুখ পুড়ল পুরুলিয়া সদর থানার৷ শুধু তাই নয়, রাস্তার মধ্যে এএসআই পদমর্যাদার এক পুলিশকর্মীর এমন আচরণ দেখে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠলেন শহরের মানুষজন৷ ঠাট্টা-মশকরা, গালিগালাজ থেকে বিক্ষোভেও ফেটে পড়লেন শহরের জনতা৷ ঘটনার খবর পেয়ে প্রথমে পুরুলিয়া সদর থানার দু-তিনজন পুলিশকর্মী তাঁকে বাইকে চাপিয়ে নিয়ে যেতে চাইলেও বিক্ষোভের জেরে নিয়ে যেতে পারেননি৷ পরে পুরুলিয়া সদর থানা থেকে একটি জিপ এলে সেই গাড়িতে এই পুলিশকর্মীকে নিয়ে যাওয়া হয়৷
তার আগে পুলিশের এমন আচরণ দেখে শহরের বিক্ষুব্ধ মানুষজন এই এএসআইকে লাথি মারতে উদ্যত হয়৷ পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার রূপেশ কুমার বলেন, “ওই পুলিশকর্মীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷” বর্তমানে এই পুলিশকর্মী বেলগুমা পুলিশ লাইনে কর্মরত৷ গত শুক্রবার তিনি পুরুলিয়া সদর থানার অধীনে ডিউটি করছিলেন৷ তাঁর ডিউটি ছিল শহরের বি বি দাস রোডের একটি কালী মন্দিরে৷
তবে পুরুলিয়া সদর থানার পুলিশকর্মীদের এমন আচরণ নতুন নয়৷ অতীতে শহর পুরুলিয়ার পোস্ট অফিস মোড়ে দুই পুলিশকর্মী বাগ্বিতণ্ডায় ও হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েছিলেন৷ একজন তো সেলুনে দাড়ি কাটতে এসে ঘুমিয়েই পড়েছিলেন৷ একাধিকবার পুরুলিয়া সদর থানার পুলিশের এমন আচরণ দেখেছেন শহরের মানুষজন৷ কিন্তু শুক্রবার রাতে ঘটনা যেন সবকিছুকে ছাপিয়ে গেল৷
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এই পুলিশ কর্মী শুক্রবার বিকেলে কর্মরত অবস্থায় ঘটনাস্থলের পাশেই একটি পানশালায় প্রচুর মদ খান৷ তার পর এই পানশালা থেকে বেরিয়ে উল্টোদিকে রাস্তায় পড়ে যান৷ খাকি উর্দি গায়ে পুলিশের এমন অবস্থা দেখে তাজ্জব বনে যান পথচলতি মানুষজন৷ কেউ কেউ তাঁকে ধরে ওঠানোর চেষ্টা করলে তিনি আবার মাটিতে পড়ে যান৷ এভাবে মদ খেয়ে পুলিশ কর্মীর এমন গড়াগড়ি দেখে ভিড় জমতে শুরু করে৷ উৎসবের মরশুমে সেই ভিড় কার্যত যানজটের রূপ নেয়৷ কিন্তু সেই সময় পুরুলিয়া সদর থানার একজনও পুলিশকর্মী বা সিভিক ভলান্টিয়ারকে দেখা যায়নি৷
উৎসাহী জনতার কেউ কেউ পুরুলিয়া সদর থানায় ফোন করলে তাঁকে নিয়ে যেতে বাইকে করে দু-তিনজন পুলিশকর্মী আসেন৷ কিন্তু তাঁরা তুমুল বিক্ষোভের মুখে পড়েন৷ কারণ, সম্প্রতি পুরুলিয়া সদর থানার পুলিশ ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’ প্রকল্পকে সফল করতে অত্যন্ত কড়া হওয়ায় শহরের বাসিন্দাদের সেই ক্ষোভ আছড়ে পড়ে এই ঘটনায়৷ সব মিলিয়ে তুমুল বিক্ষোভে এই পুলিশকর্মীরা বিপাকে পড়ে পিছু হঠেন৷ পরে সদর থানার একটি জিপ তাঁকে নিয়ে যাওয়ার সময়ও বিক্ষুব্ধ জনতা পুলিশের বিরুদ্ধে নানা কটূক্তি করে৷ এই বেসামাল পুলিশকর্মীকে স্থানীয়রা টোটোতে তুলতে গেলেও তিনি রাস্তায় পড়ে যান৷ এই সব মুহূর্ত প্রত্যক্ষদর্শীদের মোবাইলের ক্যামেরায় বন্দি হতে থাকে৷
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, আনাড়ার বাসিন্দা এই পুলিশকর্মী কনস্টেবল থেকে প্রোমোশনে এএসআই হন৷ কিন্তু ২০০৬ সালে তাঁর আচরণে তাঁকে সাসপেন্ড হতে হয়৷ ব়্যাঙ্ক কমে কনস্টেবল হন৷ পরে তিনি উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হয়ে এএসআই-এর পদ পেলেও বিতর্ক তাঁর পিছু ছাড়েনি৷
তবে শুক্রবার রাতে তাঁর ‘কীর্তি’ যেন সবকিছুকে টেক্কা দিল৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.