টিটুন মল্লিক, বাঁকুড়া: অনাবৃষ্টিতে বাঁকুড়ার বিস্তীর্ণ এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আমন ধানের ফলন। দিন সাতেকের মধ্যে সেচ ক্যানেলের মাধ্যমে জল না পেলে ধান নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই কৃষকদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে। নিম্মচাপের বৃষ্টির দিকে চেয়ে থেকেও হতাশ হয়েছেন তাঁরা। প্রশাসনের দাবি, জেলায় চাষের জমিগুলিতে জল পৌঁছে দিতে মরিয়া চেষ্টা চালানো হচ্ছে। তবে অনাবৃষ্টির জেরে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা দিশেহারা। জেলার বেশিরভাগ কৃষক বলছেন, ‘নিম্নচাপের বৃষ্টির অপেক্ষায় ছিলাম। বৃষ্টি হলে কিছুটা সমস্যা মিটত।’ মঙ্গলবার থেকে হালকা-মাঝারি বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছিল আবহাওয়া দপ্তর। কিন্তু তেমন বৃষ্টি হয়নি। জলাভাবে ধান পাকার মুখে নষ্ট হওয়ার মুখে। জলের অভাবে যদি ধান নষ্ট হয়ে যায় তাহলে বৃহত্তর আন্দোলনে নামার হুমকি দিয়েছেন চাষীরা। এদিকে কৃষিদপ্তর বলছে, এবিষয়ে যা বলার সেচদপ্তরের কর্তারাই বলবেন।
[গাড়ি চেকিংয়ের সময় দুর্ঘটনা, আহতকে রাস্তায় ফেলে পালাল পুলিশ]
উল্লেখ্য, গত শনিবার দিনভর জেলা উপকৃষি অধিকর্তার নেতৃত্বে একটি কৃষি বিশেষজ্ঞের দল খাতড়া মহকুমার ইন্দপুর, হীরবাঁধ, রায়পুর আর সিমলাপাল ব্লকের ক্ষতিগ্রস্ত জমিগুলির পরিদর্শন করেন। জেলা কৃষি উপ অধিকর্তা সুশান্ত মহাপাত্র জানিয়েছেন, বাঁকুড়া সদর মহকুমার ছাতনা, বাঁকুড়া-২, গঙ্গাজলঘাটি এবং বিষ্ণুপুর মহকুমার সোনামুখী আর বিষ্ণুপুর ব্লকের ক্ষতিগ্রস্ত জমিগুলিরও পরিদর্শন করবেন তাঁরা। তারপর ক্ষতির একটি রিপোর্ট তৈরি করে রাজ্যে পাঠাবেন বলে জানিয়েছেন তাঁরা। জেলা কৃষিদপ্তর সূত্রে খবর, দীর্ঘদিন বৃষ্টি নেই। বৃষ্টি না হওয়ায় সেচ খালেও জল নেই। পর্যাপ্ত জল না থাকায় জেলায় তিন লক্ষ ৮০ হাজার হেক্টর জমিতে চাষের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হলেও চাষ হয়েছে মাত্র তিন লক্ষ ৫০ হাজার হেক্টর জমিতে। চলতি বছর এই মরশুমে ৩০ হাজার হেক্টর জমিতে ধান রোপন করতেই পারেননি কৃষকরা। তারা আরও জানাচ্ছেন চলতি মরশুমে ৫০০ থেকে ৫৫০ মিলিমিটার বৃষ্টি কম হয়েছে। যদিও একদিনে ২৭৬ মিলিমিটার জল হয়েছিল। কিন্ত সেই জল চাষের কাজে কোনওভাবেই কাজে লাগাতে পারেননি কৃষকরা।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা বলছেন বহু কষ্টে সাবমার্সিবেলের মাধ্যমে জল তুলে কিছু জমিতে ধান রোপন করা গেলেও জলের অভাবে মাটিতে ফাটল দেখা দিয়েছে। এর ফলে বাঁকুড়া সদর মহকুমার ছাতনা আর শালতোড়া ব্লকে একই কারণে বহু জমিতে রোপন করা সম্ভব হয়নি। বহু জমিতে চাষ দিয়েও ফেলে রাখতে হয়েছে। স্থানীয় কৃষক শঙ্কর মিশ্র জানিয়েছেন, এলাকায় বিঘার পর বিঘা জমিতে ধান নষ্টের মুখে। এহেন পরিস্থিতিতে প্রবল দুশ্চিন্তায় রয়েছেন কৃষকরা। কৃষিপ্রধান এই এলাকায় চাষবাসই আয়ের মূল উৎস। অন্য দিকে বেশ কিছু জমিতে ধান পাকতে শুরু করেছে। এই সময় জল না থাকায় আশঙ্কায় দিন গুনছেন চাষীরা। তাঁদের কথায়, দ্রুত জলের ব্যবস্থা না হলে ক্ষেত থেকে ধান গোলায় তোলা সম্ভব হবে না। জলের অভাবে জমির ফসল আগেই নষ্ট হয়ে গিয়েছে বলে জানিয়েছেন বাঁকুড়া সদর মহকুমার শালতোড়া, গঙ্গাজলঘাঁটি-সহ বিস্তীর্ণ এলাকার কৃষকরা। চলতি মরশুমে বাঁকুড়ার মতো শুষ্ক জেলায় মূলত লাল স্বর্ণ ধানের চাষ হয়। কিন্তু চলতি বছর এই ধানের জন্য প্রয়োজনীয় জলও পাওয়া যায়নি। এখন জেলার বেশিরভাগ জমির ফুটিফাটা দশা।
[ফের বাড়ল রান্নার গ্যাসের দাম, মাথায় হাত মধ্যবিত্তের]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.