দিব্যেন্দু মজুমদার, হুগলি: পরম ভরসা করে ছেলেকে শ্রীরামপুর থেকে পুলকারে তুলে দিতেন চুঁচুড়ার স্কুলে পৌঁছনোর জন্য। কিন্তু না রইল তাঁর সেই ভরসা, না রইল ছেলে। পোলবায় পুলকার দুর্ঘটনায় জখম হয়ে আটদিন ধরে হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে হেরে গেল ছোট্ট ঋষভ। ঋষভ সিং। ছেলের নিথর দেহের সামনে ভেঙে পড়ে বাবার প্রার্থনা, দ্বিতীয় ঋষভ যেন না হয়। সন্তান হারানোর শোক সামলেও পুলকার সম্পর্কে অভিভাবকদের সাবধান করে দিলেন বাবা সন্তোষ সিং।
এক গাড়িতে ছোট স্কুল পড়ুয়াদের তুলে, মাঝপথে গাড়ি বদলে তবে স্কুলে পৌঁছে দেওয়া। নিত্যদিন শ্রীরামপুর থেকে এভাবেই চুঁচুড়ার স্কুলে পৌঁছে যেত ঋষভ, দিব্যাংশুরা। কিন্তু মাঝপথে এই গাড়ি বদলের জেরেই ঘটে গেল ভয়ংকর দুর্ঘটনা। যার জেরে সন্তানকে হারিয়ে ফেললেন শ্রীরামপুরের কাউন্সিলর সন্তোষ সিং। দীর্ঘ আটদিন ধরে যমে-মানুষে টানাটানির পর ছোট্ট ছেলের নিষ্প্রাণ দেহটার কাছে একজন সাধারণ বাবার মতোই বিহ্বল হয়ে গেলেন তিনি।
ওই অবস্থাতেই অবশ্য কোনওক্রমে বললেন যে পুলকার চালক এবং পরিবহণ দপ্তরের কাছে আরও সাবধানতা আশা করেন তিনি। তবে অভিভাবকদেরও অনেক সচেতন হতে হবে। কারণ, সবসময় নজরদারি প্রশাসনের পক্ষে সম্ভব নয়। আর পুলকার চালকদের উদ্দেশে বললেন, ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের স্কুলে আনানেওয়া করার সময়ে আরও যত্নশীল হওয়া দরকার। নিজের সন্তানকে হারিয়েছেন, কিন্তু সন্তানসম অন্যদের ক্ষেত্রে যাতে এমন মর্মান্তিক পরিণতির পুনরবাবৃত্তি না ঘটে, ছেলের ফুলে ঢাকা অবয়বের সামনে দাঁড়িয়ে সেই প্রার্থনাই করলেন তিনি। সন্তানহারা বাবাকে সান্ত্বনা দিতে শ্রীরামপুরের বেনিয়াপাড়ার বাড়িতে গিয়েছিলেন মন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়।
এদিকে, ঋষভের মৃত্যুতে সোমবার জেলাজুড়ে পুলকার পরিষেবা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে সংগঠনের তরফে। ১৪ ফেব্রুয়ারি দুর্ঘটনার দিন জখম পুলকার চালক পবিত্র দাস এখনও কল্যাণী জেএনএম হাসপাতালে ভরতি। তাঁকে জেরা করার পরিকল্পনা থাকলেও আপাতত তা করতে পারছেন না তদন্তকারীরা। কারণ, পবিত্রর শারীরিক অবস্থা জেরার পক্ষে অনুকূল নয় বলে হাসপাতাল সূত্রে খবর। তবে পুলিশ সূত্রে খবর, চালক পবিত্র দাসের বিরুদ্ধে অনিচ্ছাকৃত খুনের আরও কড়া ধারায় মামলা রুজু করার পথে হাঁটছে পুলিশ। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে তাঁর শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত রিপোর্ট চেয়ে পাঠানো হয়েছে তদন্তকারীদের তরফে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.