জ্যোতি চক্রবর্তী, বনগাঁ: ভোট আসে ভোট যায় প্রতিশ্রুতির বন্যা বয়! প্রতিশ্রুতি চাই না সংস্কার চাই এই স্লোগান দিয়ে ব্যানার ও পোস্টার হাতে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখালেন গোপালনগর থানার পার্বতী খালের দুপারে থাকা মানুষরা। তাঁদের বক্তব্য, ভোট এলেই প্রতিশ্রুতি দেন সব রাজনৈতিক দলের নেতারা। কিন্তু, ভোট চলে গেলে ফিরেও তাকান না। এবার সেই প্রতিশ্রুতির বিরোধিতা করেই পার্বতী খালের সংস্কারের দাবিতে ব্যানার ও পোস্টার হাতে গোপালনগর নহাটা সড়কে মিছিল করে এসে খালপাড়ে বিক্ষোভ দেখান পার্বতী খালের দুপারের শতাধিক পুরুষ-মহিলারা৷ সামনেই লোকসভা ভোট, তাই প্রতিশ্রুতি নয় এবার কাজ চাই এই স্লোগান দিতে থাকেন তাঁরা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, লোকসভার ভোটের দিন ঘোষণা হতেই বছর বছর প্রতিশ্রুতি দিয়ে সংস্কার না হওয়ায় অভিযোগে আন্দোলন শুরু করেছে পার্বতি খাল বাঁচাও কমিটির সদস্যরা। পার্বতী খালকে অনেকে নদীও বলে। একসময়ে এই খালকে যোগাযোগের মাধ্যম বানিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য চলত বনগাঁ ও নদিয়ার বিভিন্ন বাজারে। প্রায় ২২ কিলোমিটার দীর্ঘ এই খালের এক প্রান্ত যমুনা নদীর সঙ্গে ও অন্য প্রান্ত নদিয়ার চূর্ণী নদী সঙ্গে মিশেছে।শান্তিনগর, রাগমারা, লক্ষ্মীপুর, রাজার মাঠ ও নহাটা-সহ বিভিন্ন গ্রামের মানুষ অনেকদিন থেকেই এই খালের উপর নির্ভরশীল৷ মাছ ধরে বহু মৎস্যজীবী তাঁদের জীবিকা নির্বাহ করতেন। পাশাপাশি খালের জলে চলত চাষের কাজ।
[আরও পড়ুন- ক্ষমতায় ফিরলে বাংলায় নাগরিকপঞ্জি, আলিপুরদুয়ারের সভায় ঘোষণা অমিতের ]
কিন্তু, দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না হওয়ায় বর্তমানে বৃষ্টি হলেই খালের দুই পাড়ের গ্রাম জলমগ্ন হয়ে পড়ে। এক মৎস্যজীবীর কথায়, কাজ হারিয়ে অন্য পেশায় চলে যেতে বাধ্য হয়েছি। বর্তমানে সংস্কারের অভাবে অনেক জায়গায় ছোট নালার আকৃতি ধারণ করেছে খালটি। ময়লা, জঞ্জাল ও কচুরিপানায় অবরুদ্ধ থাকে সারা বছর। পার্বতী খাল বাঁচাও কমিটির সদস্যদের অভিযোগ, নহাটা বাজার এলাকার অনেক ব্যবসাদার তাঁদের দোকানের বর্জ্য পদার্থ ওই খালে ফেলে অনেক অংশ ভরাট করে জবরদখল করেছে। এর ফলে দূষণ ছড়াচ্ছে সমগ্র এলাকায়। অতীতে দুপারের বহু মানুষই মশাবাহিত জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে। বাজারের পচা ময়লা জল জমার কারণে গ্রামের মানুষের মধ্যে ডেঙ্গু আতঙ্ক রয়েছে। নিকাশির একমাত্র মাধ্যম এই খাল অবরুদ্ধ হয়ে বছর বছর বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
[আরও পড়ুন-অ্যাপের মাধ্যমে জঙ্গি নিয়োগ, জইশের নয়া ছকের পর্দাফাঁস ]
নহাটা এলাকার অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক বিব্রত সিংহ জানান, অনেক ব্যক্তিই পার্বতী খালের জায়গা দখল করে রেখেছে। ফলে খালটি বর্ষায় জলমগ্ন হয়। বহুদিন ধরেই সব দলের নেতারা সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়ে চলেছেন। কিন্তু, কোনও সংস্কার হয়নি। পার্বতী খাল আগের জায়গায় ফিরলে কর্মসংস্থান বাড়বে বলেও জানান আর এক শিক্ষক। পার্বতী খাল বাঁচাও কমিটির আহ্বায়ক প্রদীপ সরকার জানান, ১৯৮৫ সালে একবার সংস্কার হতে দেখেছিলেন তাঁরা। তারপর অনেক সরকার বদল হয়েছে। সবার কাছেই খাল সংস্কার করার দাবি জানানো হয়েছিল।কিন্তু, প্রতিবার ভোটের আগে প্রতিশ্রুতি দিয়ে গেলেও ভোট মিটলে আর দেখা মেলে না কারওর। তাই তারা এই প্রতিশ্রুতির বিরোধিতা করতে বাধ্য হয়ে রাস্তায় নেমেছেন৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.