বিক্রম রায়, কোচবিহার: এঁদো গোলি থেকে তুলে এনে নিজের সন্তান স্নেহে রাজনীতির আঙিনা চিনিয়েছেন তিনিই৷ নিজে দাঁড়িয়ে থেকে ভোটে জিতিয়েছেন নিজের ‘সন্তান’কে৷ কিন্তু, ক্ষমতার অলিন্দে পৌঁছতেই বেড়েছে দূরত্ব৷ নিজের সন্তান স্নেহে ‘লালনপালন’ করা ‘ভাইপো’ আজ বদলে গিয়েছে৷ ঠান্ডা হয়েছে সম্পর্ক৷ ফলে ‘ভাইপো’র উপর ক্ষুব্ধ হয়ে ‘কাকা’ ডাকেই আপত্তি তুললেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ৷
রবিবার ছুটির দিনে সাংবাদিক বৈঠক করে হাতজোড় করে রবীন্দ্রনাথ ঘোষ নাম না করে বলেন, ‘‘আমাকে যেন কেউ কাকা বলে আর না ডাকে৷ নাম ধরে ডাকুক৷ জ্যাঠা, মামা, ভাই, পিসা বলে ডাকুক৷ তাতেও আমার কোনও আপত্তি নেই৷ কিন্তু, হাতজোড় করে বলছি, আমাকে কেউ কাকা বলে ডাকবেন না৷’’ কিন্তু, কেন হঠাৎ কেন ‘কাকা’ ডাকে আপত্তি জানালেন রবীন্দ্রনাথ বাবু? কৌশলী উত্তরে মন্ত্রী বলেন, ‘‘কে আমাকে কাকা বলে ডাকে, তা তাঁরা ভালই জানেন৷ ফলে, আমার অনুরোধ, তাঁরা ভবিষ্যতে যেন আর কাকা বলে না ডেকে৷ এটাই আমরা আর্জি৷’’
[পুজোয় হাসবে ওরাও, হাতখরচ বাঁচিয়ে পথশিশুদের জামা দিলেন তমলুকের যুবকরা]
নাম না করে এদিন ঠিক কাকে বার্তা দিতে চাইলেন রবীন্দ্রনাথ ঘোষ? কোচবিহারের রাজনীতিতে এই নিয়ে শুরু হয়েছে জোরজল্পনা৷ স্থানীয় রাজনৈতিক মহল মনে করছেন, এর পিছনে রয়েছে মন্ত্রীর একরাশ ‘অভিমান’৷ পর্যবেক্ষক মহলের একাংশ মনে করছেন, মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষের হাত ধরে রাজনীতির ময়দানে পা রাখেন পার্থপ্রতিম রায়৷ সেকথা নিজেও জানিয়েছেন কোচবিহারের সাংসদ৷ দলের কর্মী-সমর্থকরাও সেকথা জানানে৷ নিজের রাজনৈতিক ‘গুরু’ হিসাবে কোচবিহারের তৃণমূল সাংসদ পার্থপ্রতিম রায়, রবীন্দ্রনাথবাবুকে ‘কাকা’ বলে ডাকতেও শুনেছেন কর্মীরা৷ অভিযোগ, লোকসভা ও সদ্যসমাপ্ত পঞ্চায়েত নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দু’জনের সম্পর্কে জটিলতা বাড়তে থাকে৷ দিনহাটায় তৃণমূলের গোষ্ঠীসংঘর্ষ থেকে শুরু করে পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রার্থী বাছাই নিয়ে মন্ত্রী ও সাংসদের মধ্যে বিরোধ চরমে ওঠে৷ অভিযোগ, সাংসদের বউদিকে হারিয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে মন্ত্রীর অনুগামীদের বিরুদ্ধে৷
[ইসলামপুর কাণ্ডে আটক বিতর্কিত উর্দু শিক্ষক, জেরা পুলিশের]
মন্ত্রী ও সাংসদ গোষ্ঠীর মধ্যে দ্বন্দ্বকে কেন্দ্র করে চূড়ান্ত ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন মন্ত্রী৷ এছাড়াও, রাজনীতির ময়দানে তুলে আনা জেলা সভানেত্রী শুচিস্মিতা দেববর্মন গোষ্ঠীর সঙ্গে মন্ত্রী গোষ্ঠীর বিবাদকে কেন্দ্র করেও বেশ কিছুদিন ধরেই ক্ষুব্ধ ছিলেন রবীন্দ্রনাথবাবু৷ কর্মী-সমর্থকরা জানান, শুচিস্মিতাদেবীও রবীন্দ্রনাথবাবুকে ‘কাকা’ বলে ডাকতেন৷ দলীয় কর্মী মহলের একাংশের ধারণা, রাজনীতিতে সদ্য আত্মপ্রকাশ হওয়া পার্থপ্রতিম রায় ও শুচিস্মিতা দেববর্মনের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথবাবুর সম্পর্ক অবনতি হওয়ায় কারণেই এদিন নিজের ‘অভিমান’ ব্যক্ত করেন৷ তবে, মন্ত্রীর ‘অভিমান’ প্রসঙ্গে বিতর্কের ঝাঁজ আরও বাড়িয়েছেন সাংসদ পার্থপ্রতিম রায় নিজেই৷ এদিন সংবাদমাধ্যমে পার্থবাবু বলেন, ‘‘বাবা, বাবাই হন৷ আর কাকা, কাকাই৷’’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.