ছবি: প্রতীকী।
অরিজিৎ গুপ্ত, হাওড়া: ধারালো অস্ত্র দিয়ে মুন্ডু কেটে রেলকর্মীকে নৃশংসভাবে খুনের ঘটনার এবার পুনর্নির্মাণ করল পুলিশ। সোমবার দুপুরে হাওড়ার ১১৭ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে খেজুরতলায় একটি গ্যারাজে ধৃত দুই যুবক গুড্ডু রাও শেখর ও শেখ আফরোজ ওরফে মিঠুনকে নিয়ে যায় তারা। সেখানেই ধৃত দুই যুবক দেখায় কীভাবে তারা রেলকর্মী সুরজ সাউ (৪২)-কে খুন করেছে।
পুলিশ জানায়, খেজুরতলার মোড়ে বাস রাখা ও সারানোর গ্যারাজটি মিঠুনেরই। পুলিশ যখন ধৃতদের নিয়ে ঘটনার পুনর্নির্মাণে যায় তখনই ওই গ্যারাজের ভিতর থেকে পাওয়া যায় বাসের সিট কাটার ধারালো রক্তমাখা অস্ত্রটি। একই সঙ্গে পাওয়া যায় মৃতকে যে ভারী লোহার রড দিয়ে আঘাত করা হয়েছে সেটিও। পুলিশের সঙ্গে যাওয়া ফরেন্সিক দলের আধিকারিকরা অস্ত্র দু’টি উদ্ধার করেন।
কীভাবে রেলকর্মীকে খুন করে দেহ লোপাট করে ধৃত অভিযুক্ত দুই যুবক? ধৃতরা পুলিশকে জানায়, অষ্টমীর রাতে রেলকর্মী সুরজকে ওই গ্যারাজে ফোনে ডেকে পাঠায় শেখর ও মিঠুন। সুরজ জগাছার সুন্দরপাড়ার বাড়ি থেকে নিজের বাইকে চেপে ওই গ্যারাজে যায়। গ্যারাজের ভিতরে টিনের চালের তৈরি একটি ঘরে বসে তিন জন মাংস, ভাত ও মদ খায়। ঘরের ভিতরেই মাংস, ভাত রান্না করা হয়। মদ্যপ অবস্থাতেই সুরজের সঙ্গে শেখর ও মিঠুনের বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক, বাসের টাকাপয়সা লেনদেনের মতো ইস্যু নিয়ে বচসাও হয়। তার পর সুরজ অতিরিক্ত মদ্যপান করায় ঘুমিয়ে পড়ে। ঘুমন্ত অবস্থাতেই শেখর ও মিঠুন প্রথমে সুরজকে ওই গ্যারাজে রাখা লোহার রডের মতো ভারী বস্তু দিয়ে মাথায় আঘাত করে। তার পর মৃত্যু নিশ্চিত করতে গ্যারাজে থাকা বাসের সিট কাটার ধারালো অস্ত্র দিয়ে সুরজের মাথা দেহ থেকে আলাদা করে দেয় তারা।
তারপর দেহ লোপাট করার পরিকল্পনা করে দু’জন। প্রথমে সুরজের দেহটি একটি বস্তার মধ্যে ভরে সুরজেরই বাইকে চেপে শেখর ও মিঠুন খেজুরতলা থেকে ডোমজুড়ের পীরডাঙায় ১৬ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে গিয়ে ফেলে। তার পর সুরজের মুন্ডুটি একটি বস্তা ও প্যাকেটে বন্দি করে সেটিও জাতীয় সড়ক ধরে নিবড়ায় একটি ঝোপে নিয়ে গিয়ে ফেলে শেখর ও মিঠুন। মুন্ডুটি নিয়ে যাওয়ার সময় শেখর সুরজের বাইক ও মিঠুন তার নিজের বাইক নিয়ে যায়। দু’জনে দু’টি পৃথক বাইকে যায়। বস্তাবন্দি মুন্ডুটি তখন ছিল শেখরের কাছে। এই পুরো ঘটনাই এদিন পুলিশের সামনে পুনর্নির্মাণ করে দেখায় শেখর ও মিঠুন। কিন্তু ভারী লোহার রড দিয়ে আঘাত কিংবা ধারালো অস্ত্র দিয়ে মুন্ডুচ্ছেদ ঠিক কে করেছে তা এদিন পুলিশের কাছে স্পষ্ট হয়নি। আরও জিজ্ঞাসাবাদে তা স্পষ্ট হবে বলে জানান পুলিশ কর্তারা। এই খুনের ঘটনার সঙ্গে আরও কয়েকজন যুক্ত থাকতে পারে বলে তদন্তে অনুমান পুলিশের। তারা কারা তারও খোঁজ করছেন তদন্তকারীরা।
রেলকর্মী খুনের ঘটনায় তার স্ত্রী রাজেশ্বরী সাউ -সহ শেখর ও মিঠুনকে শনিবারই গ্রেপ্তার করেছিল জগাছা থানা। এর পর রবিবার ধৃতদের হাওড়া আদালতে তোলা হলে তাদের ১২ দিনের পুলিশ হেফাজত হয়েছে। সেইমতো সোমবার সকাল থেকেই জগাছা থানায় হাওড়া সিটি পুলিশের পদস্থ কর্তারা ধৃতদের ঘণ্টার পর ঘন্টা জিজ্ঞাসাবাদ চালিয়ে ঘটনার পুনর্নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন। এর পরই থানা থেকে বেরিয়ে সাতটি গাড়ির কনভয় করে অভিযুক্ত দুই যুবককে ঘটনাস্থলে নিয়ে যায় পুলিশ।
প্রসঙ্গত, দশমীর রাতে সুরজ সাউয়ের বস্তাবন্দি দেহটি উদ্ধার হয়েছিল। তার পরই ঘটনার তদন্তে নামে জগাছা ও ডোমজুড় থানার পুলিশ। এর পর এই খুনের ঘটনার একে একে রহস্য উদঘাটিত হতে থাকে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.