সুনীপা চক্রবর্তী, ঝাড়গ্রাম: তপশিলি জাতি ভুক্ত ডোম সমাজের শিক্ষিত বেকারদের চাকরি, শিল্পীভাতা-সহ একাধিক দাবিতে এবার রাজ্যের ১৯ জেলায় জেলা শাসকদের দপ্তরে অনশনে বসার সিদ্ধান্ত নিল ভারতীয় ডোম সমাজ বিকাশ পরিষদ। এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে রবিবারের অধিবেশনে। বাঁকুড়া জেলায় ভারতীয় ডোম সমাজ বিকাশ পরিষদের রাজ্য অধিবেশনে ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়া,বাঁকুড়া,পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর সহ ১৯ টি জেলার ডোম সমাজের নেতৃত্ব-সহ কবি,লেখক, শিক্ষক,চিকিৎসক, বুদ্ধিজীবিরা উপস্থিত ছিলেন।
সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ডোম সমাজের এক লক্ষ শিল্পী আজও কোন ভাতা পায় না। এক লক্ষের কাছাকাছি শিক্ষিত বেকার যুবক, যুবতীরা চাকরি পাননি,সমাজের বেশিরভাগ মানুষ ভূমিহীন, কর্মহীন। এই সমস্যা সমাধানে প্রশাসনের কাছে বারংবার দরবার করেও কোন ফল পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ। এবার রাজ্য সম্মেলন থেকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, দাবি আদয়ে ১৯ টি জেলায় জেলাশাসকের দপ্তরের সামনে তারা অনশনে বসবেন। এই বিষয়ে ভারতীয় ডোম সমাজ বিকাশ পরিষদের ঝাড়গ্রাম জেলা সভাপতি ভোলানাথ কালিন্দী বলেন, “আমরা এই দাবিগুলি নিয়ে বারংবার প্রশাসনের কাছে আবেদন করে গিয়েছি। আমাদের এই সমাজের মানুষগুলি গৃহহীন, কর্মহীন। শিক্ষিতদের চাকরি নেই। শিল্পীভাতা নেই। আমরা চাই ডোম উন্নয়ন পরিষদ গড়ে আমাদের এই বিষয়গুলির প্রতি নজর দেওয়া হোক। রাজ্য অধিবেশন থেকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ হয়েছে যে আমরা দাবি আদায়ে জেলাশাসকের দপ্তরের সামনে অনশনে বসব।”
উল্লেখ্য, ঝাড়গ্রাম জেলার বিভিন্ন ব্লকে ডোম সমাজের প্রায় ত্রিশ থেকে পঁয়ত্রিশ হাজার মানুষের বসবাস। সারা পশ্চিমবঙ্গে এই সংখ্যাটা প্রায় আট লক্ষ বলে ডোম সংগঠনের দাবি। এদের মধ্যে দেড়লক্ষ বাদক শিল্পী রয়েছেন। কিন্তু অভিযোগ, শিল্পীভাতা পান সেখানে হয়তো কুড়ি হাজার মানুষ। বাকি তথা অধিকাংশ বাদক শিল্পী ভাতা পান না। ডোম সমাজের মানুষেরা ঢাক,ঢোল, সানাই বাজিয়ে থাকেন। পুজার সময় তাঁদেরই ডাক পড়ে মণ্ডপে। কিন্তু বর্তমানে ব্যন্ড পার্টির দাপটে সেই পেশাও মার খাচ্ছে। অন্যদিকে বাঁশ,বেত থেকে ঝুড়ি-সহ বিভিন্ন ঘরোয়া সামগ্রী তৈরি করে তা বাজারজাত করেও তাঁদের সংসার চলে। বিশেষ করে বাড়ির মহিলার এই পেশায় যুক্ত রয়েছেন। কিন্তু এখানেও বাদ সেধেছে প্ল্যাস্টিকের দাপট। সস্তায় বাজারে প্ল্যাস্টিকের সামগ্রী দেদার বিক্রি হচ্ছে। সেই জায়গা বাঁশের সামগ্রীর চাহিদা কমেছে। সবমিলিয়ে ডোম সমাজের মানুষ জন এক চরম আর্থিক অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.