সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: চার দেওয়ালের এনক্লোজার ভুলে সবুজ জঙ্গলে বন্দিদশা কেটেছিল ওদের। স্বাধীনতার আনন্দে ছুটে চলে গিয়েছিল জঙ্গলে। কিন্তু এই জঙ্গলেই যে বিপদ অপেক্ষা করেছিল তা জানত না ওই নিরীহ বন্যপ্রাণীগুলি। পুরুলিয়ার সুরুলিয়া মিনি চিড়িয়াখানা থেকে গত রবিবার বান্দোয়ানের যুমনা বনাঞ্চলের কুইলাপাল বিটের নতুনডি জঙ্গলে ছাড়ার ২৪ ঘন্টার মধ্যেই সারমেয়-র হামলায় ত্রস্ত হয়ে যায় তিরিশটি চিতল হরিণের স্বাভাবিক জীবন। সারমেয়র কামড়ে একের পর এক ওই চিতল হরিণের শরীর ফালাফালা হতে থাকে। তবে বনদপ্তর আহত পশুদের চিকিৎসারও ব্যবস্থা করে। কিন্তু এই জঙ্গলে থাকা সারমেয়র দলের হামলা কিভাবেই বা ঠেকাবে? বুধবার সাত ঘন্টার মধ্যে সারমেয়র কামড়ে মৃত্যু হল তিনটি পূর্ণবয়স্ক চিতল হরিণের।
[ হাতির দাঁতের মূর্তি পাচারকারী বাবা-মেয়ের মূল এজেন্ট ধৃত]
গত এক বছর ধরে পুরুলিয়ার সুরুলিয়া মিনি চিড়িয়াখানা থেকে চিতল হরিণদের জঙ্গলে ছাড়ার প্রক্রিয়া চলছে। গত রবিবার ওই চিড়িয়াখানার ৩০টি হরিণকে ছাড়া হয় নতুনডির জঙ্গলে। কিন্তু জঙ্গলে কুকুরের কামড়ে প্রাণ গেল নিরীহ প্রাণীগুলির। কিন্তু জঙ্গল যে কুকুরের উপদ্রবের কথা কেন উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ জানাননি বনকর্মীরা? প্রশ্ন তুলেছেন স্বয়ং প্রধান মুখ্য বনপাল (বন্যপ্রাণ) তথা রাজ্যের চিফ ওয়াইল্ড লাইফ ওয়ার্ডেন রবিকান্ত সিনহাই। তাঁর কথায়, “হরিণ ছাড়ার জন্য এক বছর আগে থেকে আমাদের কাজ চলছে। কিন্তু কোনও রিপোর্টেই উল্লেখ ছিল না ওই এলাকায় সারমেয় রয়েছে। এটা তো স্থানীয় বন আধিকারিকদেরকেই দেখতে হবে।” তবে চিড়িয়াখানা থেকে যমুনা বনা়ঞ্চলে হরিণ ছাড়ার বিষয়টি এই চিফ ওয়াইল্ড লাইফ ওয়ার্ডেনর আদেশনামাতেই হয়েছে বলে জানান রাজ্যের চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের সদস্য সচিব বিনোদকুমার যাদব। তাঁর কথায়, “চিড়িয়াখানা থেকে হরিণ ছাড়ার বিষয়টি চিফ ওয়াইল্ড লাইফ ওয়ার্ডেনের আদেশনামাতেই হয়েছে। ফলে এই বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারব না।” রাজ্যের বনমন্ত্রী বিনয়কৃষ্ণ বর্মন বলেন, বিষয়টির খোঁজ নিচ্ছি। কংসাবতী দক্ষিণ বনবিভাগের ডিএফও অসিতাভ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “সারমেয় থাকলে আমরা কি করতে পারি? এত বড় জঙ্গলে সারময়কে কিভাবে আটকানো যায়? তবুও আমরা দেখছি।”
গত সোমবার সকালে ওই নতুনডির জঙ্গলের এক জলাশয়ের পাশে কুকুরের কামড়ে জখম চিতল হরিণকে দেখতে পান স্থানীয় বাসিন্দারা। কিছুক্ষণ পর্যবেক্ষণে রেখে জখম হরিণটিকে ফের জঙ্গলে ছেড়ে দেন বনকর্মীরা। মঙ্গলবার রাতে কুকুরের আক্রমণে গুরুতর জখম হয় আরও একটি চিতল হরিণ। বুধবার সকালেও আরও একটি হরিণের প্রাণ গিয়েছে কুকুরের আক্রমণে। এর পাঁচ ঘন্টার মধ্যেই দুপুরে নতুনডি জঙ্গলে আর একটি চিতল হরিণকে মৃত অবস্থায় দেখেন স্থানীয়দের।
ছবি: অমিত সিং দেও
[ বসন্তে ফের বৃষ্টির ভ্রুকুটি দক্ষিণবঙ্গে, দ্বার রুদ্ধ কালবৈশাখীর]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.