অর্ণব দাস, বারাকপুর: ছোটবেলা থেকে বাবা-মায়ের পরশ সেভাবে পাননি। কাকার বাড়িতে থেকে বড় হওয়া। মেধার জোরে ডাক্তারি পড়ার সুযোগ এবং পাশ করে ইন্টার্নশিপে যোগদান। এভাবেই কেরিয়ার এগোচ্ছিল। কিন্তু আচমকাই তাতে ছেদ। মাত্র ২৩ বছরেই জীবনদীপ নিভে গেল আর জি কর মেডিক্যাল কলেজের (RG Kar Medical College) ইন্টার্ন শুভজ্যোতি দাসের। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে শুভজ্যোতির পেটে ওষুধের অতিরিক্ত ডোজ (Overdose) পাওয়া গিয়েছে। দানা বেঁধেছে রহস্য। তবে কি অতিরিক্ত ওষুধ সেবন করে আত্মহত্যার পথই বেছে নিল নিমতার দাসবাড়ির ছেলেটা? পরিবারের সকলের মনে এখন এই প্রশ্ন। পড়াশোনায় ডুবে থাকা চুপচাপ ছেলেটা এভাবে নিজেকে নিয়ে যাচ্ছিল একেবারে খাদের কিনারায়, কেউ তো টেরই পাননি। আর তাই এই মৃত্যু (Death) তাঁদের কাছে অস্বাভাবিক, মেনে নিতে পারছেন না কেউ।
নিমতার (Nimta)দক্ষিণ গোলবাগানের বাসিন্দা ছিলেন শুভজ্যোতি দাস। আর এই বাড়ি থেকেই আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের জুনিয়র চিকিৎসকের দেহ উদ্ধার হয়েছে বৃহস্পতিবার। পরিবার সূত্রে খবর, মঙ্গলবার শেষবারের মতো ছেলেকে দেখেছিলেন পরিবারের সদস্যরা। বুধবার সারাদিন আর তাঁর কোনও খোঁজ ছিল না। নিজের ঘরে পড়াশোনাতেই ডুবে রয়েছে বলে ভেবেছিলেন বাড়ির সকলে। কিন্তু বৃহস্পতিবার সকালে শুভজ্যোতির ঘরে ঢুকে সেই ভুল ভাঙল তাঁদের। দেখেন, শুভজ্যোতি অচৈতন্য অবস্থায় বিছানার উপর পড়ে রয়েছেন। তড়িঘড়ি তাঁকে আর জি কর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে সিসিইউতে (CCU) স্থানান্তরিত করা হয়। বৃহস্পতিবার গভীর রাতেই প্রাণ হারান বছর তেইশের শুভজ্যোতি।
পরিবারের দাবি, মেধাবী ছাত্র শুভ্রজ্যোতি ডাক্তারিতে পড়ার সময় থেকেই স্নায়ুরোগে ভুগছিলেন। করোনার পর থেকে তা বাড়তে থাকে এবং ধীরে ধীরে মানসিক অবসাদ গ্রাস করে তাঁকে। কাকার বাড়িতে ছোট থেকে থাকলেও পরেরদিকে বাড়ির কারও সঙ্গে সেভাবে কথা বলতেন না। নিজের পড়াশোনা নিয়েই ব্যস্ত থাকতেন। সে কারণে কেউ তাঁকেও বিরক্ত করতেন না। পরিবারের সূত্রে দাবি, অবসাদ (Depression) কাটানোর উপায় ও ডাক্তারি ক্ষেত্রে কীভাবে সাফল্য পাওয়া যায়, তা নিয়ে ইন্টারনেটে খোঁজ করছিলেন শুভজ্যোতি। বেশ কয়েকবার পরিবারের লোক শুভ্রজ্যোতির মোবাইল ঘেঁটে এমনই তথ্য পেয়েছে। আসলে মেধাবী হওয়া সত্ত্বেও এমবিবিএস পরীক্ষায় একাধিক বিষয়ে উত্তীর্ণ হতে পারেননি। সেই কারণেই সম্ভবত তাঁর এই অন্বেষণ।
বুধবার সারাদিন শুভজ্যোতির কোনও খোঁজ না মেলায় বৃহস্পতিবার সকালবেলা বাড়ির লোকজন তাঁর ঘরে ঢোকার চেষ্টা করেন। প্রথমে না পারলেও পরে প্রচেষ্টায় তারা ঘরে প্রবেশ করেন এবং শুভজ্যোতিকে অচৈতন্য অবস্থায় উদ্ধার করে আর জি কর হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরিবারের শোকের ছায়া। এই মৃত্যু মানতেই পারছেন না কেউ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.