রাজ কুমার, আলিপুরদুয়ার: ফের চাঁদা নিয়ে জুলুমের অভিযোগ উঠল রাজ্যে। তাও আবার চিকিৎসকদের উপর চাপ দেওয়ার অভিযোগ। দাবিমতো চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় আলিপুরদুয়ারে হাসপাতালের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের টানা তিনঘন্টা হাসপাতালের ভেতরেই আটকে রাখা হল। আলিপুরদুয়ার ১ নম্বর ব্লকের পশ্চিম শালবাড়ি এলাকায় সরকারি আয়ুষ হাসপাতালে এই ঘটনার খবর পেয়ে অবশ্য পুলিশ গিয়ে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের উদ্ধার করে। কিন্তু ঘটনার জেরে তীব্র আতঙ্কে চিকিৎসকরা, পুলিশও নজরদারি বাড়িয়েছে।
ঘটনার সূত্রপাত শনিবার। দুপুর দু’টো থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত হাসপাতালের ভেতরেই আটকে ছিলেন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। এতে তীব্র ক্ষোভ জানিয়েছেন আলিপুরদুয়ারের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক পূরণ শর্মা। তিনি বলেন, “হাসপাতালের সুপার আমাকে পুলিশকে জানাতে বলেছেন। আমি আলিপুরদুয়ার থানার আইসি ও ডিএসপি হেড কোয়ার্টারকে এই ঘটনা জানিয়েছি। তাঁরা গিয়ে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের উদ্ধার করেছে বলে শুনেছি। আমি বিষয়টি পুলিশ সুপারের নজরে আনব।”
এলাকাবাসীকে চিকিৎসা পরিষেবা দিতে গিয়ে চাঁদার জন্য এভাবে হেনস্তা হতে হবে, কেউ ভাবতেই পারেননি। এটা কোনওভাবেই মানা যায় না। তাঁদের কাছে ২০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করা হয়েছিল। আয়ুষ হাসপাতালের মতো হাসপাতালে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের কালীপুজোর জন্য ২০ হাজার টাকা চাঁদা দেওয়া কোনওভাবেই সম্ভব নয়।” এদিকে, হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, আয়ুষ হাসপাতালে হোমিওপ্যাথি বিভাগে চিকিৎসক-সহ মোট সাতজন রয়েছেন। এছাড়া আয়ুর্বেদিক বিভাগে চিকিৎসক-সহ মোট তিনজন কর্মরত। হাসপাতালের পাশেই কালীপুজো করে ২ নং কালী পুজো কমিটি। এটি একটি গ্রামীণ কালী পুজো। হাসপাতালের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা পরিকল্পনা করেছিলেন, সকলে মিলে একসঙ্গে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ চাঁদা দেবেন।
কিন্তু কালী পুজো কমিটির পক্ষ থেকে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের আলাদা আলাদাভাবে চাদার রসিদ ধরিয়ে দেওয়া হয়। সর্বমোট চাঁদার পরিমাণ যাতে বড় অংকের হয়, সেই কারণে নানাভাবে চাপ দেওয়া হচ্ছিল বলেও অভিযোগ রয়েছে। হাসপাতালের চিকিৎসক ওস্বাস্থ্যকর্মীরা এই বিপুল পরিমাণ চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে শনিবার চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের হাসপাতাল থেকে বাইরে বের হতে দেওয়াহবে না বলে হুমকি দেওয়া হয়।
রীতিমতো হাসপাতালের বাইরে কালীপুজো কমিটির সদস্যরা পাহারা দিতে শুরু করে। আর এভাবে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা হাসপাতালের ভেতরেই আটকে ছিলেন। বহির্বিভাগ দুপুর দু’টোর মধ্যে বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা থাকলেও, তা বন্ধ হয়নি। পরে পুলিশ গিয়ে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের উদ্ধার করে নিয়ে আসে।
আলিপুরদুয়ারের পুলিশ সুপার নগেন্দ্রনাথ ত্রিপাঠি বলেন, “আমরা এই ঘটনায় একজনকে গ্রেপ্তার করেছি। চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের উদ্ধার করা হয়েছে। আমরা এই ঘটনায় আরও কেউ দোষী থাকলে তাদেরও গ্রেপ্তার করা হবে।” তবে এখনও পর্যন্ত গ্রেপ্তারির কোনও খবর নেই।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.