নন্দন দত্ত, সিউড়ি: কুড়ি হাজারের মধ্যে একজন। সেই একজনের মধ্যেই অদ্ভুত বৈপরীত্য। অঙ্গপ্রত্যঙ্গের বেশিরভাগটাই সাধারণ মানুষের উলটো দিকে। গলব্লাডার থেকে শুরু করে শিরা-ধমনী, সবই। সেই বিরলতম মানুষটিকে সফল অস্ত্রোপচারের মধ্যে দিয়ে যন্ত্রণা থেকে মুক্ত করলেন রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকরা।
মিজানুর রহমান, বয়স ২৭ বছর। তাঁর শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ স্বাভাবিক মানুষের বিপরীতে। ডান দিকের গলব্লাডার বাঁ দিকে। শিরা-ধমনীর কাজও উলটো গতিতে চলছে। সেই যুবকেরই গলব্লাডার অপারেশন করতে তাই কিছুটা মাথা ঘামাতে হল চিকিৎসকদের। তবে তা সার্থক হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে এমনই এক বিরল শারীরিক গঠনসম্পন্ন মানুষের গলব্লাডার অপারেশন হয়ে গেল রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, শরীরের ভিতরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ উলটো হওয়ায় অস্ত্রপচারে কিছুটা বেগ পেতে হয় তাঁদের। তবে দুই চিকিৎসক এবং নার্সদের ঘণ্টাখানেকের পরিশ্রমে সফল অস্ত্রোপচার করা গিয়েছে বলে দাবি করেন তাঁরা।
বিরল অঙ্গপ্রত্যঙ্গের অধিকারী যুবক মিজানুর রহমান মুরারই থানার সন্তোষপুর গ্রামের বাসিন্দা। পেশায় পাথর ব্যবসায়ী। যুবকের বাবা তোফাজ্জুল হোসেন বলেন, “বছরখানেক আগে থেকে ছেলের পেটে ব্যথা। প্রথমে রামপুরহাট শহরে বেশ কয়েকজন চিকিৎসককে দেখিয়েছিলাম। তাঁরা পেটের ছবি করতে বলেছিলেন। কিন্তু তা না করে আমরা দক্ষিণ ভারতের হাসপাতালে গিয়েছিলাম। সেখানে তাঁরা জানায়, ছেলের পেটে পাথর, অস্ত্রোপচার করতে হবে।”
সেখান থেকে ফিরে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আউটডোরে দেখানো হয় মিজানুরকে। চিকিৎসক সৌরভ মাজি দেখার পর অস্ত্রোপচার করতে রাজি হন। অস্ত্রোপচারের জন্য তিনি একটি মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করেন। কারণ মিজানুরের শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সব উলটোভাবে রয়েছে। চিকিৎসকের আশ্বাসে সম্মতি জানায়। এরপরেই সাফল্য মিলল।” সৌরভবাবু বলেন, “সাধারণভাবে মানুষের শরীরে ডান দিকে গলব্লাডার থাকে। এর হয়েছে বাঁ দিকে। ফলে রোগ ধরতে কিছুটা সময় লেগেছে। তাছাড়া আমরা ডান দিকে গলব্লাডার অস্ত্রোপচার করতে অভ্যস্ত। কিন্তু যেহেতু এটা ছিল বাঁ দিকে। ফলে আমাদের কাছে কিছুটা জটিল হয়ে পড়ে। কিছুটা ঝুঁকিও ছিল।” চিকিৎসকদের দাবি, ২০ হাজার মানুষের মধ্যে এমন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ একজন মানুষের শরীরে দেখা দেখা যায়।
ছবি: সুশান্ত পাল।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.