সৌরভ মাজি, বর্ধমান: ফের জটিল অস্ত্রোপচারে সাফল্য বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকদের। আর তাতেই যেন নতুন জীবন পেলেন বর্ধমানের নেড়োদিঘির যুবক শেখ রফিকুল। গত ১৫ বছর ধরে মূত্রথলির জটিল সমস্যার জেরে প্রস্রাবের সঙ্গে খাবার বেরিয়ে যাওয়ার মতো দুর্বিসহ পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেলেন তিনি।
বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকদের মতে, বড় মাপের কেঁচো রফিকুলের ক্ষুদ্রান্ত্র ও মূত্রথলির মধ্যে ফুটো করে দিয়েছিল। তাঁর প্রস্রাবের সঙ্গে ভাতের টুকরো বেরিয়ে যেত। কখনও আবার অন্যান্য খাবারের টুকরোও বেরত। গত ১৫ বছর ধরেই এমনটা হচ্ছিল। পরিচিতরা তা জানতে পেরে ঠাট্টা-তামাশাও করত। দুর্বিষহ হয়ে উঠছিল জীবন। শেষপর্যন্ত সেই অভিশাপ কাটিয়ে উঠলেন রফিকুল।
মঙ্গলবার বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সার্জিক্যাল বিভাগে অস্ত্রোপচার করে ওই ফুটো মেরামত করা হয়েছে। বিভাগীয় প্রধান শল্যচিকিৎসক নরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের দাবি করেছেন, বিশ্বের মধ্যে এই অস্ত্রোপচার ১২তম। তিনি বলেন, “আমরা ইন্টারনেট, জার্নাল ঘেঁটে যে তথ্য পেয়েছি তাতে জানতে পেরেছি এর আগে বিশ্বে ১১টি এই ধরনের অস্ত্রোপচার হয়েছে।” রফিকুল অস্ত্রোপচারের পর স্থিতিশীল রয়েছেন। দ্রুতই সুস্থ হয়ে উঠবেন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
ওই যুবকের মা নুরজাহান বেগম জানান, খুব ছোট থেকেই তাঁর ছেলে এই সমস্যায় ভুগছেন। মাত্র ৯ বছর বয়সেই তার প্রস্রাবের সঙ্গে খাবারের টুকরো বেরিয়ে আসত মাঝে মাঝে। নুরজাহান জানান, ৯ বছর বয়সে প্রস্রাবের সঙ্গে প্রায় ৬ ইঞ্চি মাপের একটি কেঁচো বেরিয়েছিল। তারপর থেকেই খাবারে টুকরো বেরতে থাকে প্রস্রাবের সঙ্গে। সেই সময় অনেক চিকিৎসা করানো হয়। কিন্তু সুস্থ হয়নি। বছর তেইশের রফিকুল বর্তমানে শক্তিগড় টেক্সটাইলে কাজ করেন। কিছুদিন আগে শল্যচিকিৎসক নরেন্দ্রনাথবাবুকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে যান। সেখানে চিকিৎসক তাঁকে প্রস্রাব করতে বলেন। চিকিৎসকের সামনেই প্রস্রাবের সঙ্গে খাবারের টুকরো বেরিয়ে আসে। নরেন্দ্রবাবুর পরামর্শে রফিকুলকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
গত ১৯ অক্টোবর বর্ধমান মেডিক্যালের সার্জিক্যাল বিভাগে ভরতি করা হয় রফিকুলকে। সিটি ইউরোগ্রাফি করেন চিকিৎসকরা। নরেন্দ্রনাথবাবু জানান, তাতে দেখা গিয়েছে, ক্ষুদ্রান্ত্রের সঙ্গে উপরের অংশ দিয়ে মূত্রথলি পর্যন্ত ফুটো রয়েছে। এটিকে ‘ইউরেট্রো ডিউড্রেনাল ফিসচুলা’ বলে। এর ফলে মূত্রথলি দিয়ে খাবারের অংশ বেরিয়ে যাচ্ছিল।
চিকিৎসকরা অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেনে। আট সদস্যের মেডিক্যাল টিম গড়া হয়। বিভাগীয় প্রধান নরেনবাবু ছাড়াও ছিলেন চিকিৎসক মধুসূদন চট্টোপাধ্যায় ও জ্যোতির্ময় ভট্টাচার্য। এছাড়া অ্যানাস্থেসিস্ট-সহ অন্যান্য চিকিৎসক ও নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীরা ছিলেন। এদিন অস্ত্রোপচার করা হয়। রফিকুলের মামা নাজিমউদ্দিন মল্লিক জানান, দীর্ঘদিনের সমস্যা ছিল। চিকিৎসকরা অস্ত্রোপচার করে সুস্থ করছেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.