সৌরভ মাজি, বর্ধমান: ফের বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আক্রান্ত হলেন চিকিৎসক। শনিবার হাসপাতালের রাধারানি ওয়ার্ডে দুই চিকিৎসক আক্রান্ত হন রোগীর পরিবারের লোকজনের হাতে। গত ১০ দিনের মধ্যে তিনবার এই ধরনের ঘটল। যদিও শনিবারের ঘটনাতেও পুলিশ দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছে। রোগীর পরিবারের তিনজনকে আটক করে। পরে অবশ্য একজনকে ছেড়েও দেওয়া হয়।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, মেমারির করন্দা গ্রামের পূজা গোস্বামী এদিন সকালে বাড়িতে বিষ পান করেন৷ তাঁকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়৷ ভর্তি করা হয় রাধারানি ওয়ার্ডে৷ অভিযোগ, চিকিৎসা শুরু কিছু পর থেকেই রোগীর পরিবারের লোকজন পূজাকে সিসিইউতে স্থানান্তর করার দাবি করতে থাকেন। এই নিয়ে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসকদের সঙ্গে বচসা বাধে। তখনই রোগীর পরিবারের লোকজন মিঠুন সরকার ও বিভাউ মনিষ নামে দুই জুনিয়র চিকিৎসককে হেনস্তা করেন। এমনকী মারধর করেন বলেও অভিযোগ। এরপরই হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পে খবর যায়৷ পুলিশ এসে পূজার বাবা গোপাল গোস্বামী, মামা জনার্দন রায় ও পিসতুতো দাদা অমিত চট্টোপাধ্যায়কে আটক করে। যদিও পরে তাঁদের মধ্যে একজনকে ছেড়ে দেওয়া হয় বলে জানা গিয়েছে৷
যদিও রোগীর পরিবারের লোকজনের দাবি, রাধারানি ওয়ার্ডে ভর্তির পর থেকেই ঠিকমতো চিকিৎসা হচ্ছিল না। স্যালাইন বা অন্যান্য পথ্য ঠিকমতো দেওয়া হচ্ছিল না। এই নিয়ে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের জানাতে গেলে তাঁদের এইভাবে আটক করা হয়। রোগীর পরিজনরা বিষয়টি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকেও জানিয়েছেন। রোগীকেও হাসপাতালে থেকে রিলিজ করিয়ে অন্যত্র নিয়ে গিয়েছেন রোগীর পরিবারের লোকজন৷ হাসপাতালের ডেপুটি সুপার অমিতাভ সাহা জানান, রোগীকে ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট (সিসিইউ)-তে স্থানান্তর করার জন্য চাপাচাপি করছিলেন আত্মীয়রা। কিন্তু সিসিইউতে জায়গায় নেই। তাছাড়া চিকিৎসক প্রয়োজন মনে করলেই তবেই স্থানান্তর করার নিয়ম।
ডেপুটি সুপার জানান, এই হাসপাতালে রোগীর চাপ অনেক বেশি। রাধারানি ওয়ার্ডে যা বেড রয়েছে তার তিনগুণ রোগী ভর্তি থাকে সবসময়। পুজা যে ব্লকে ছিলেন সেখানে ৪০টি বেড রয়েছে৷ কিন্তু রোগী ভর্তি ছিলেন ১৩০ জন। আবার সিসিইউতে বেড মাত্র ১২টি। এই অবস্থার মধ্যে উন্নত চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়ার চেষ্টা করেন হাসপাতালের চিকিৎসকরা। কিন্তু রোগীর পরিবারের লোকজন তা না বুঝে চিকিৎসকদের উপর হামলা করেন বলে অভিযোগ। গত সোমবার এই হাসপাতালেই আক্রান্ত হয়েছিলেন কয়েকজন চিকিৎসক। চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ তুলে মারধর করা হয় তাঁদের। তার আগে গত ৬ জুনও একইভাবে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ তুলে হামলা করা হয়েছিল চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের উপর৷
বারবার হাসপাতালের চিকিৎসকরা আক্রান্ত হওয়ায় প্রশ্ন উঠছে বিভিন্ন মহল থেকে। অভিযোগ, গত ৬ জুনের ঘটনায় হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকার এক দোকানদারের মদতে হামলা হয়েছিল। পরের দুটি ঘটনাতেও হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকার লোকজনেরও দিকেই অভিযোগের আঙুল উঠেছে। বাইরে থেকে আসা রোগীর পরিজনদের তারাই উসকানি ও মদত দিয়ে এই কাণ্ড ঘটিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে কড়া অবস্থান নিচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.